ভিন্ন ধর্মে বিবাহিত দস্পতির ছবিকে মিথ্যে করে কপিল মিশ্রর বোন বলা হল
বুম দেখে ছবিটি কর্নাটকের মান্ড্যর এক দম্পতির, কপিল মিশ্রর বোনের নয়—যেমনটা ভাইরাল পোস্টে দাবি করা হয়েছে।
এক সদ্য-বিবাহিত দম্পতির ছবি ইন্টারনেটে এই মিথ্যে দাবি সহ ভাইরাল হয়েছে যে, ছবির কনেটি হলেন ভারতীয় জনতা পার্টির নেতা কপিল মিশ্রর বোন, যিনি একজন মুসলমানকে বিয়ে করেছেন।
বুম কপিল মিশ্রর সঙ্গে যোগাযোগ করলে, উনি ওই ভাইরাল দাবিটি উড়িয়ে দেন। আমরা ছবিটির উৎস সন্ধান করতে গিয়ে দেখি, ২০১৬ সালে, কর্ণাটকের মান্ড্যতে এক হিন্দু মেয়ের সঙ্গে এক মুসলমান পুরুষের বিয়ের সময় ছবিটি তোলা হয়। সেই সময় এই ভিনধর্মে বিবাহের খবর মিডিয়ায় ব্যাপক ভাবে প্রচার করা হয়েছিল।
হিন্দিতে লেখা ক্যাপশনে বলা হয়, "দিল্লি দাঙ্গা যিনি উস্কে দিয়েছিলেন, সেই কপিল মিশ্রর বোন শাহজাদ আলি নামের এক মুসলমানকে বিয়ে করেছেন।"
(হিন্দি ক্যাপশন: दिल्ली दंगे भड़काने वाले कपिल मिश्रा की बहन ने की एक मुसलमान लड़के शहज़ाद अली से शादी)
এই মিথ্যে দাবির লক্ষ্য হলেন ওই বিজেপি নেতা। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ যে, এ বছর ফেব্রুয়ারিতে দিল্লিতে দাঙ্গার পিছনে তাঁর হাত ছিল। সেই হিংসার ঘটনায় ৫৩ জন প্রাণ হারায়।
২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০ তে, দিল্লির মৌজপুর এলাকায় নাগরিকত্ব (সংশোধনী) আইন ২০১৯-এর সমর্থনে উনি একটি পথসভা করেন। সেখানে এক পুলিশ অফিসারের সামনেই তিনি বলেন, তিন দিনের মধ্যে সিএএ বিরোধী বিক্ষোভকারীদের রাস্তা থেকে উৎখাত করতে হবে, নচেৎ "তাঁরা পুলিশের কথাও শুনবেন না।"
পোস্টগুলি দেখা যাবে এখানে ও এখানে। পোস্টগুলি আর্কাইভ করা আছে এখানে ও এখানে।
বাজনা দেওয়া ওই ছবিটি বুমের হেল্পলাইনেও আসে।
তথ্য যাচাই
বুম কপিল মিশ্রর সঙ্গে যোগাযোগ করে। একজন মুসলমানের সঙ্গে তাঁর বোনের বিয়ে হয়েছে, ওই দাবি উনি উড়িয়ে দেন। উনি বুমকে বলেন, "ভাইরাল-হওয়া দাবিটি মিথ্যে এবং কোনও একটি বিয়ের ছবি আমার বোনের বলে চালানো হচ্ছে।"
মিশ্র আরও বলেন, "আমার তিন বোনের মধ্যে দু'জনের বিয়ে হয়ে গেছে। আমার কোনও বোনের সঙ্গে, এমনকি দুঃসম্পর্কের কোনও বোনের সঙ্গেও, কোনও মুসলমানের বিয়ে হয়নি।"
ভাইরাল ছবি
এর পর বুম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে। ফলে, ২০১৬ সালে 'ম্যাঙ্গালোর টুডে'-তে প্রকাশিত ওই একই দস্পতির একটু অন্য অ্যাঙ্গেল থেকে তোলা ছবি সামনে আসে। ওই প্রতিবেদনে একজন হিন্দু মেয়ের সঙ্গে একজন মুসলমান পুরুষের বিয়ের কথাই লেখা হয়।
খবরে প্রকাশ যে, ১২ বছরের সম্পর্কের পর, কর্ণাটকের মান্ড্যর অধিবাসী অশিতা বাবু ও শাকিল আহমেদ ১৭ এপ্রিল ২০১৬'য় বিয়ে করেন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এ প্রকাশিত খবরে বলা হয়, শুরুতে এই বিয়ে সম্পর্কে দুই পরিবারেই দ্বিধা ছিল। কিন্তু ওই দম্পতি নিজেদের সিদ্ধান্তে অটল থাকায় পরিবার দুটি রাজি হয়ে যায়। খবরে আরও বলা হয় বিয়ের আগে অশিতা বাবু ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন ও নিজের নাম শাইস্তা সুলতান রাখেন।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস-এর রিপোর্টে আরও বলা হয়, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের মত হিন্দু সংগঠনগুলির তরফ থেকে ওই বিয়ের তীব্র বিরোধিতা করা হয়। তাঁরা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করেন এই বলে যে, বিয়েটি আসলে 'প্রেমে-জেহাদ'-এরই অংশ।
নীচে ওই বিয়ে সম্পর্কে এনডিটিভির রিপোর্ট।
শেষে পুলিশি সুরক্ষায় ১৭ এপ্রিল ২০১৬' মাইসুরুতে বিয়ের কাজ সম্পন্ন হয়।
এ ব্যাপারে আরও পড়ুন এখানে।
আরও পড়ুন: তেরঙা কেক কাটছে ফেসবুক কর্মী আখিঁ দাস? না, তা ঠিক নয়