ফ্যাক্ট চেক
২০১৭ সালে ফ্রান্সের রাস্তায় নামাজের পুরনো ভিডিও সাম্প্রতিক বলে ভাইরাল
বুম দেখে ভিডিওটি ২০১৭ সালে একটি মসজিদ বন্ধের প্রতিবাদে ফ্রান্সের ক্লিশিতে মুসলমানদের রাস্তায় প্রার্থনা করার দৃশ্য।
তিন বছরের পুরনো একটি ভিডিওতে দেখানো হয় যে, ফ্রান্সের একটি রাস্তায় মুসলমানরা প্রার্থনা করছেন। একটি মসজিদ বন্ধ করে দেওয়ার প্রতিবাদে, তাঁরা রাস্তায় নেমে নামাজ পড়েন। সেই পুরনো ভিডিও এখন নতুন করে শেয়ার করা হচ্ছে। বলা হচ্ছে, ওই সম্প্রদায়ের লোকজন নামাজ পড়ার নাম করে রাস্তা বন্ধ করে রেখেছেন।
বুম দেখে ভিডিওটি ২০১৭ তে প্যারিসের ক্লিশিতে তোলা। সেখানে মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষজন একটি স্থানীয় মসজিদ বন্ধ করে দেওয়ার প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে নামাজ পড়েন।
স্যামুয়েল প্যাটি নামের এক স্কুল শিক্ষকের শিরচ্ছেদ করার ভয়াবহ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে। ক্লাসে বাকস্বাধীনতা সম্পর্কে আলোচনা করার সময় উনি নবী মহম্মদের ওপর একটি ব্যঙ্গচিত্র ছাত্রদের দেখান। সেই জন্য সম্প্রতি তাঁর শিরশ্ছেদ করা হয়। ওই ঘটনার ফলে, ইসলামি উগ্রপন্থার বিরেুদ্ধে প্রতিবাদ করেন বিশ্বের মানুষ।
ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফ্রান্স ও সে দেশের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাকরঁর বিরুদ্ধেও বিক্ষোভ দেখানো হয় একাধিক জায়গায়।
ভাইরাল ভিডিওটিতে এক দল লোককে রাস্তায় নামাজ পড়তে দেখা যাচ্ছে। আর সেই সঙ্গে দেখা যাচ্ছে আটকে থাকা গাড়ির লাইন। ছবিটি বেশ কয়েকটি যাচাই-করা টুইটার হ্যান্ডেল ও ফেসবুক পেজ থেকে মিথ্যে দাবি সমেত শেয়ার হয়েছে।
যাচাই-করা টুইটার হ্যান্ডেল @Ali_Albukhaiti থেকে ছবিটি শেয়ার করা হয়। ওই টুইটার হ্যান্ডেলটির এক মিলিয়ন বা ১০ লক্ষ অনুগামী আছে। শেয়ার-করা ছবিটির আরবিতে লেখা ক্যাপশনে বলা হয়, "যে দেশে ওঁরা মূলত অতিথি, সে দেশেই তাঁরা রাস্তা বন্ধ করে মানুষের চলাফেরায় বাধা সৃষ্টি করছেন ও তাঁদের স্বার্থে আঘাত করছেন। যেখানে ওঁরা প্রার্থনা করছেন, সেটা প্রার্থনা করার জায়গা নয়। এ এক জঘন্য দৃশ্য। তাঁরা মসজিদে, বাড়িতে, উঠোনে বা খোলা জায়গায় প্রার্থনা করতে পারতেন। ইসলাম ও মুসলমানরা এখন সঙ্কটের মধ্যে পড়েছে। মাকরঁই ঠিক। এরদোগান মিথ্যে বলছেন।"
টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
@sameh_asker নামের আরও একটি টুইটার হ্যান্ডেল থেকেও ওই একই ক্লিপ শেয়ার করা হয়। সঙ্গে ক্যাপশনে বলা হয়, "ইয়োরোপে মুসলমানরা রাস্তায় চলার অধিকারকে সম্মান করেন না। তাই (ভগবানের নামে) তাঁরা তাঁদের শক্তি প্রদর্শন করেন। বাকস্বাধীনতা ও আচার অনুষ্ঠান পালন করার স্বাধীনতা রক্ষা করে যে ধর্মনিরপেক্ষ আইন, তারই রক্ষাকবজকে কাজে লাগিয়ে ধর্ম নিয়ে একটা ব্যবসা চলছে। এটা কি তাঁরা সৌদি আরব, মিশর বা ইরানে করতে পারবেন? মুসলমানদের বিরুদ্ধে মাকরঁর উক্তির মানে এটাই।"
টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
আরও একজন টুইটার ব্যবহারকারী ওই ক্লিপটি থেকে নেওয়া একটি স্ক্রিনশট শেয়ার করেছেন। সঙ্গে দেওয়া আরবিতে লেখা ক্যাপশনে বলা হয়েছে, "ব্রাভো! রাস্তায় প্রার্থনা করুন, যান চলাচল ব্যাহত করুন, এবং জনগণের স্বার্থ…খুব শীঘ্রই জাহাজ আর বিমানে বোঝাই করে আপনারা যে দেশ থেকে এসেছেন, সেখানে ফেরত পাঠানর তোড়জোড় শুরু হবে। যাতে আপনারা সুখে থাকতে পারেন, যেখানে ইচ্ছে প্রার্থনা করতে পারেন আর আপনাদের স্বপ্নের শারিয়া প্রয়োগ করতে পারেন।"
টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
বিভিন্ন ফেসবুক প্রোফাইল থেকে ভিডিওটি আলাদা আলাদা দাবি সমেত শেয়ার করা হয়েছে।
একটি ফেসবুক পোস্টে একই ভিডিও রয়েছে। কিন্তু ক্যাপশনে বলা হয়েছে, "ফ্রান্সের কী অবস্থা! ভারতেও খুব শীঘ্রই এমনটা হবে। প্রার্থনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত অ্যাম্বুলেন্সকেও অপেক্ষা করতে হবে। এটাই ধর্মনিরপেক্ষতা।"
ফেসবুক পোস্টটির আর্কাইভ এখানে দেখা যাবে।
আরও পড়ুন: সম্পর্কহীন ছবি ছড়িয়ে দাবি অস্ত্র সহ অসমে ধৃত এক মুসলিম কংগ্রেস নেতা
তথ্য যাচাই
'প্রেয়ারস অন স্ট্রিটস অফ ফ্রান্স' (ফ্রান্সের রাস্তায় প্রার্থনা) – এই কি-ওয়ার্ডগুলি দিয়ে আমরা ইউটিউব-এ সার্চ করি। তার ফলে ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮-য় আপলোড করা একটি ভিডিও আমাদের নজরে আসে। ভাইরাল ভিডিওটিতে যেমন দৃশ্য আছে, সেটিতেও তেমনই দৃশ্য দেখা যায়। সেটির শিরোনামে বলা হয়, 'ফ্রান্সের রাস্তায় ইসলামি প্রার্থনা'।
ভাইরাল ভিডিওটিতে যাদের দেখা যায়, এই ভিডিওটির ৩.১২ সময় চিহ্নে, আমরা সেই একই ব্যক্তিদের দেখতে পাই।
ইউটিউব থেকে পাওয়া ভিডিওটির একটি স্ক্রিনশট নিয়ে আমরা রিভার্স ইমেজ সার্চ করি। তার ফলে, আমরা ভাইরাল ভিডিওটির একটি বড় সংস্করণ দেখতে পাই। ইউটিউব চ্যানেল এলডিসি নিউজ ২৩ মার্চ ২০১৭-য় সেটি আপলোড করে।
ফরাসিতে লেখা ভিডিওটির শিরোনামে বলা হয়, 'প্রশাসন মসজিদ বন্ধ করে দিলে, রাস্তায় প্রার্থনা। ক্লিশি/ফ্রান্স – ২২ মার্চ, ২০১৭।
ভিডিওটি নীচে দেখুন।
ভিডিওটির বিবরণে বলা হয়, "ক্লিশি-লা-গারেন-এ অনেক ধার্মিক মানুষ মেরি-র সামনের রাস্তায় প্রার্থনা করছে। তাঁরা রু দেস্টিয়েন-দ্য ওরভে তে অবস্থিত মসজিদ বন্ধ করে দেওয়ার প্রতিবাদ করছেন। এবং সেটি খোলার দাবি জানাচ্ছেন। নভেম্বর ২০১৬-য় কাউন্সিল অফ স্টেট মসজিদটি তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত অনুমোদন করে। পৌরসভা ও বাড়ির মালিক সেখানে একটি নতুন মিডিয়া লাইব্রেরি তৈরি করতে চায়।"
নভেম্বর ২০১৭ তে, ফ্রান্সের ক্লিশিতে মুসলমান সম্প্রদায়ের এই প্রতিবাদ প্রার্থনা সম্পর্কে বিবিসিও একটি রিপোর্ট [Insert link: https://www.bbc.com/news/world-europe-41950826] প্রকাশ করে। যাঁরা প্রার্থনা করছিলেন, তাঁরা বিবিসি-কে বলেন যে, তাঁদের অন্য কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। কারণ, তাঁরা যে ঘরে প্রার্থনা করতেন মার্চ মাসে সেটি নিয়ে নেওয়া হয়।"
ইউটিউব-এর ভিডিও আর ভাইরাল ভিডিওটি মিলিয়ে দেখলে দেখা যায়, সেগুলির অনেক দৃশ্য হুবহু এক।
Claim : মুসলিমরা ফ্রান্সে রাস্তা আটকে প্রার্থনা করছে
Claimed By : Facebook Posts & Twitter Users
Fact Check : False
Next Story