রাষ্ট্রসংঘ কাশ্মীরকে বিরোধ অমীমাংসিত এলাকার তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে?
রাষ্ট্রসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের ২০১০ সালের এই পদক্ষেপকে সরকারের সাম্প্রতিক কূটনৈতিক সাফল্য বলে ছড়ানো হচ্ছে।
বেশ কয়েকটি সোশাল মিডিয়া পোস্ট এই বলে ভাইরাল হয়েছে যে রাষ্ট্রসংঘ কাশ্মীরকে তাদের অমীমাংসিত বিরোধের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দিয়েছে। দশ বছর আগের সেই সিদ্ধান্তকে সাম্প্রতিক ঘটনা হিসেবে দেখিয়ে বিভ্রান্তিকর দাবি করা হয়েছে এটি নরেন্দ্র মোদী সরকারের কূটনৈতিক সাফল্য। সম্প্রতি নয়, এই পদক্ষেপ নেওয়া হয় ২০১০ সালের নভেম্বর মাসে।
তথ্য যাচাই
বিষয়টা সামনে আসে ২০১০ সালের নভেম্বর মাসে। সে বছর যুক্ত রাজ্যের মার্ক লায়াল গ্রান্ট, রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভায় তাঁর ভাষণে, বিশ্বের অমীমাংসিত বিরোধগুলির তালিকায় জম্মু ও কাশ্মীরের উল্লেখ ছিল না।
২০১০ সালে যুক্ত রাজ্য রাষ্ট্রসংঘের অতি ক্ষমতা সম্পন্ন নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতিত্বের ভার গ্রহণ করে। সাধারণ সভায় দেওয়া ওই ভাষণে, গ্রান্ট তার আগের বছরের বার্ষিক রিপোর্ট পেশ করছিলেন।
১১ নভেম্বর ২০১০-এ, রাষ্ট্রসংঘের বিবৃতিতে গ্রান্টের ভাষণের বিষয়বস্তু তুলে ধরা হয়। বুম সেই বিবৃতির প্রাসঙ্গিক অংশ হুবহু তুলে দিচ্ছে।
"যে সময়কালের রিপোর্ট পেশ করা হয়েছে, সেই সময়ে, পরিষদ যে সব পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করেছিল, সেগুলি অমীমাংসিত থেকে যায়। সেগুলির মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হল মধ্যপ্রাচ্য, সাইপ্রাস ও পশ্চিম সাহারা। নেপাল, গিনি বিসাউ ও অন্যান্য রাষ্ট্রে নতুন পরিস্থিতি তৈরি হয়। তাছাড়া, ডেমক্র্যাটিক রিপাবলিক অফ কঙ্গো সহ কিছু জায়গায় 'বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ' রয়ে গেছে।"
এনডিটিভি, দ্য হিন্দু ও ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস প্রভৃতি সংবাদ মাধ্যমগুলিতে ১৫ নভেম্বর ২০১০ প্রেস ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়ার (পিটিআই) প্রতিবেদন ছাপা হয়। সেটির শিরোনামে বলা হয়, "রাষ্ট্রসংঘের 'বিতর্কিত' অঞ্চলের তালিকা থেকে জম্মু ও কাশ্মীরকে বাদ দেওয়া হল"। ওই তালিকা থেকে জম্মু ও কাশ্মীরকে বাদ দেওয়ায়, পাকিস্তান তার প্রতিবাদ করে।
সেই সময়, রাষ্ট্রসংঘের পাকিস্তানের অস্থায়ী প্রতিনিধি আমজাদ হুসেন সিয়াল বলেন, "জম্মু ও কাশ্মীর দীর্ঘ দিনের অমীমাংসিত বিবাদ হওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে সেটি ওই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। আমাদের মনে হয়, এটি একটি অনিচ্ছাকৃত ভুল। কারণ, নিরাপত্তা পরিষদের অ্যাজেন্ডায় এটি বহু দিনের বিবাদ হিসেবেই চিহ্নিত হয়ে রয়েছে।
গ্রান্টের ভাষণে জম্মু ও কাশ্মীর বাদ পড়াটা ইচ্ছাকৃত বা অনিচ্ছাকৃত, যাই হোক না কেন, ব্যাপারটা সাম্প্রতিক নয়। সেটি ২০১০ সালে ঘটেছিল। বর্তমান সরকারের আমলে নয়।
পাকিস্তান কি আর কোনও দিন কাশ্মীরের বিষয়টি রাষ্ট্রসঙ্ঘে উত্থাপন করতে পারবে?
রাষ্ট্রসংঘের রেকর্ডে দেখা যাচ্ছে যে, পাকিস্তান জম্মু ও কাশ্মীরের বিষয়টা রাষ্ট্রসংঘে বেশ কয়েকবার উত্থাপন করার চেষ্টা করে বিফল হয়। নিরাপত্তা পরিষদের 'ইন্ডিয়া-পাকিস্তান প্রশ্ন' নামের ফাইলটি থেকে জানা যায় যে, জম্মু ও কাশ্মীরের বিষয়টির প্রতি নিরাপত্তা পরিষদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলেও, তা নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। ২০১০-২০১১ সালে এমনটা হয়। আবার ২০১৯-এ তার পুনরাবৃত্তি ঘটে। রিপোর্টে যা আছে তা হল, কাশ্মীর সংক্রান্ত যে সব চিঠি পরিষদ পেয়েছে ও তাদের দেওয়া উত্তরের বিবরণ। নিরাপত্তা পরিষদ ও রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিবের মধ্যে আদান প্রদানের বাইরে যা আছে, তা হল রাষ্ট্রসংঘে পাকিস্তানের প্রতিনিধির লেখা চিঠি।
২০১৯-তে পুলওয়ামার ঘটনা (দেখুন এখানে) ও ৩৭০ ধারা বাতিল হওয়ার পর (দেখুন এখানে), পাকিস্তান রাষ্ট্রসংঘে কাশ্মীর প্রসঙ্গ উত্থাপন করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। ২০২০-তেও পাকিস্তান নিরাপত্তা পরিষদে কাশ্মীর প্রসঙ্গ তোলার চেষ্টা করে।
জম্মু ও কাশ্মীর নিয়ে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিবাদের সূত্রপাত ১৯৪৭ সালে। দুই দেশই ওই অঞ্চলকে নিজের বলে দাবি করে। কিন্তু কেবল আংশিক এলাকার ওপর নিজেদের প্রশাসনিক ব্যবস্থা কায়েম করতে সক্ষম হয়েছে তারা। পাকিস্তান সব সময়েই বিষয়টিকে রাষ্ট্রসংঘ মাধ্যমে মেটানোর চেষ্টা করেছে এবং আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ চেয়েছে। অন্যদিকে, ভারত বলে এসেছে, জম্মু ও কাশ্মীরের বিষয়টি তাদের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার এবং রাষ্ট্রসংঘের হস্তক্ষেপের কোনও প্রয়োজন নেই।