বিজেপি সাংসদ রমেশ বিধুরি কি কৃষকদের সম্পর্কে খারাপ মন্তব্য করেছেন?
বুম ভিডিওটি শোনে। দেখা যায়, কৃষকদের সম্পর্কে সাংসদ কোনও অসংসদীয় ভাষা ব্যবহার করেননি।
আম আদমি পার্টির (Aam Aadmi Party) সোশাল মিডিয়া হ্যান্ডেলগুলি থেকে শেয়ার করা ভিডিও একটি মিথ্যে দাবি সমেত ভাইরাল হয়েছে। বলা হয়েছে যে, দিল্লির সীমান্তে বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন যে সব কৃষক (farmers protest), তাঁদের সম্পর্কে কটু মন্তব্য করেছেন বিজেপি সাংসদ রমেশ বিধুরি।
মঙ্গলবার, আপ-এর সোশাল মিডিয়া অ্যাকাউন্টগুলি থেকে বিধুরির (Ramesh Bidhuri) একটি ভিডিও পোস্ট করে দাবি করা হয় যে, প্রতিবাদী কৃষকদের সম্পর্কে উনি একটি কুৎসিত হিন্দি শব্দ 'ভ**ওয়া' (বেশ্যার দালাল) ব্যবহার করেছেন। আপ আরও দাবি করেছে যে, কৃষকদের সম্পর্কে ওই শব্দ ব্যবহার করার জন্য বিধুরিকে বিজেপি থেকে বিতাড়িত (BJP) করতে হবে।
কিন্তু বুম ভিডিওটি শুনে দেখে যে, বিধুরির ব্যবহার করা শব্দটি হল 'থালোওয়া'। যার অর্থ হল অলস। আপ যে শব্দটি উনি ব্যবহার করেছেন বলে দাবি করেছে, এটি সেটি নয়। যদিও দুটির মধ্যে কিছুটা ধ্বনির মিল আছে।
প্রধানত পঞ্জাব ও হরিয়ানা থেকে আসা কয়েক হাজার কৃষক ২৬ নভেম্বর থেকে দিল্লির সীমান্তে বসে নতুন কৃষি আইনের বিরদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। ওই আন্দোলনের পটভূমিতেই ওই ভিডিওটি শেয়ার করা হচ্ছে।
সপ্তাহের শুরুতে বিজিপি সাংসদ কালকাজিতে যে ভাষণ দিয়ে ছিলেন, ৪৫ সেকেন্ডের ভিডিওটি হল তারই একটা ক্লিপ।
ভাইরাল ক্লিপটির সঙ্গে দেওয়া ক্যাপশনে বলা হয়েছে, "যে কৃষক আমাদের খাদ্য যোগান, তাঁদেরই গালাগালি করছেন বিজেপি এমপি। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?"
(হিন্দিতে লেখা ক্যাপশন: जो किसान हमें भोजन देता है, उसी अन्नदाता को सरेआम गाली दे रहे हैं भाजपा के सांसद। इससे शर्मनाक क्या होगा?)
পোস্টের আর্কাইভ এখানে দেখুন।
একই ভিডিও আম আদমি পার্টির ইনস্টাগ্র্যাম ও টুইটার হ্যান্ডেল থেকেও শেয়ার করা হয়।
সোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারীরা ভিডিওটি চট করে তুলে নিয়ে বিভ্রান্তিকর দাবি সমেত ফেসবুক ও টুইটারে শেয়ার করতে শুরু করেন।
সমাজবাদী পার্টির জাতীয় সম্পাদক ও মুখপাত্র রাজীব রাইও ভিডিওটি শেয়ার করেন। সঙ্গে দেওয়া হিন্দি ক্যাপশনে লেখা হয়, "প্রতিবাদী কৃষকরা বেশ্যার দালাল: বিজেপি। আপনার ভাষা বুঝিয়ে দেয় আপনি ও আপনার নেতারা কি রকম।"
আর্কাইভ দেখুন এখানে।
আরও পড়ুন: Surat Singh Khalsa অনশনের ছবিকে জোড়া হল Farmers Protest-এর সঙ্গে
তথ্য যাচাই
বুম মন দিয়ে ভিডিওটি শোনে। তার ফলে বোঝা যায় যে, বিজেপি সাংসদ বিধুরি যে শব্দটি ব্যবহার করেন সেটি হল, 'খালওয়া' (অলস)। কিন্তু সেটির বদলে কাছকাছি শোনায় এমনই এক গালাগালিকে উদ্ধৃত করা হয়।
৪৫ মিনিটের ওই ক্লিপটিতে বিধুরিকে বলতে শোনা যায়, "কতজন কৃষক আছেন সেখানে? বর্ডারে কতজন বসে আছেন... কোথাও ৫০০। কোথাও ২৫। অন্য কোথাও ১,৫০০...কানাডা আর পাকিস্তান থেকে আসা টাকা কাজে লাগিয়ে তাঁরা ওখানে বসে আছেন। এঁরা আসলে অলস। এই রকম ব্যক্তি সব গ্রামেই থাকেন। তাঁরা এখানে বসে আছেন কারণ, তাঁরা ভাল খাবার পাচ্ছেন। গরম জল পাচ্ছেন। লেপ-কম্বল পাচ্ছেন। এবং তাঁদের মোদীকে সরাতে হবে। ভাই আর বোনেরা, সে জন্যই তাঁরা ওখানে বসে আছেন। আপনারা আমায় এখানে উষ্ণ অভিনন্দন জানিয়েছেন। তাই, আমার ভাষণ শেষ করার আগে, আমি আপনাদের ধন্যবাদ জানাতে চাই।"
(হিন্দি বয়ানi: कितने किसान हैं ? और बॉर्डरों पर बैठें कितने हैं...कहीं पांच सौ, कहीं ढाई सौ, कहीं डेढ़ हज़ार ...तो वो सब के सब कनाडा से आये हुए पैसों को लेकर, पाकिस्तान से आये पैसे को लेकर ...जो, जो, जो ठलवे होतें हैं हर गाँव में पांच, सात, दस, पांच सात..वो ठलवे बैठे हुए हैं कि खाने को फ़ोकट का मिल रहा है, गरम पानी मिल रहा है, गरम रजाई मिल रही है...और मोदी को हटाना है | इसीलिए वो बैठे हैं भाइयों, बहनों..आपलोग यहाँ पर आपलोगो ने स्वागत मेरा किया, आपलोगों ने आभार व्यक्क्त किया ...इसके लिए मैं आपका सबका धन्यवाद कहते हुए अपनी वाणी को विराम दूंगा..आप सबका बहुत बहुत धन्यवाद |)
এরপর বুম আসল ভিডিওটির খোঁজ করে, যেটি থেকে ক্লিপটি নেওয়া হয়। দেখা যায়, সাংসদ ওই ভিডিওটি ২১ ডিসেম্বর, ২০২০তে তাঁর যাচাই করা ফেসবুক পেজে আপলোড করেন।
১৭ মিনিটের ওই ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়, বিধুরি কালকাজি কেন্দ্রে একটি জনসভায় নতুন কৃষি আইনের সুবিধেগুলি সম্পর্কে ভাষণ দিচ্ছিলেন।
আর্কাইভ দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
সাংসদের বক্তৃতার বিতর্কিত অংশটি ১৬.৩৭ সময়চিহ্নে আসে। এই ভিডিওটির আওয়াজ অনেক স্পষ্ট। তাতে, ভাষণের শেষের দিকে, বিদুরিকে 'থালওয়া' ও 'থালওয়ে', এই দু'টি শব্দ ব্যবহার করতে শোনা যাচ্ছে।
আমরা আরও জানতে, রমেশ বিধুরির সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করি। আমাদের কথা হয় ওনার ব্যক্তিগত সহায়ক অনুজ বিধুরির সঙ্গে। ভাইরাল দাবিটি অনুজ বিধুরি উড়িয়ে দেন।
"যে শব্দটিকে আপ 'ভ**ওয়া' বলে দাবি করছে, সেটি আসলে 'খালুয়া'। আমরা গ্রমের মানুষ। আমরা ওই ভাষাতেই কথা বলি। এমপি সাহেব নিজেই একজন কৃষক। অকর্মন্য ব্যক্তিদের গ্রামে 'থালওয়া' বা 'থালি' বলা হয়," বুমকে বলেন অনুজ।
আরও পড়ুন: না, শাহিন বাগের Bilkis Dadi জেলে নেই