না, আমদাবাদ বিমানবন্দরের নাম আদানি এয়ারপোর্ট রাখা হয়নি
বুম নিশ্চিত হতে পেরেছে যে হোর্ডিংয়ের উল্টোদিকে লেখা রয়েছে সর্দার বল্লভভাই পটেল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট।
সোশাল মিডিয়ায় মিথ্যে দাবি করা হয়েছে যে, আমদাবাদের সর্দার বল্লভভাই পটেল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট-এর নাম বদলে আদানি এয়ারপোর্ট করা হয়েছে।
সপ্তাহের শুরুতে, বেশ কয়েকটি কংগ্রেস টুইটার হ্যান্ডেল একটি সাইনবোর্ডের ছবি টুইট করে। সেটিতে বড় করে লেখা আছে 'ওয়েলকাম টু আমদাবাদ'। আর তার অন্য পাশে লেখা 'আদানি এয়ারপোর্টস'। ওই ছবিটি টুইট করে দাবি করা হয় যে, আমদাবাদ বিমানবন্দরের নাম বদলে দেওয়া হয়েছে।
বুম এ ব্যাপারে নিশ্চিত হতে পেরেছে যে, ছবিটিতে সাইনবোর্ডটির একটা দিকই দেখা যাচ্ছে। বিমানবন্দর থেকে বেরনোর সময় ওই দিকটা দেখা যায়। কিন্তু বিমানবন্দরে ঢোকার সময় ওই সাইনবোর্ডের যে দিকটি চোখে পড়ে, তাতে লেখা 'ওয়েলকাম টু সরদার বল্লভভাই ফটেল ইনটারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট। এবং তার সঙ্গে আদানি এয়ারপোর্টস-এর লোগোটিও রয়েছে।
নতুন কৃষি আইনের বিরুদ্ধে দিল্লিতে যে কৃষক আন্দোলন চলছে, তারই পটভূমিতে ছবিটি শেয়ার করা হচ্ছে। প্রতিবাদী কৃষকরা দাবি করছেন যে, নতুন কৃষি আইনগুনি আদানি ও অম্বানী, এই দুই পরিবার ও তাদের কৃষি পণ্য ও বিপনন কম্পানিগুলিকে নানান সুবিধে পাইয়ে দেবে। আর সেই সঙ্গে, কৃষকরা বঞ্চিত হবেন।
১৩ ডিসেম্বর, ২০২০তে, মধ্যপ্রদেশ কংগ্রেস ভাইরাল ছবিটি টুইট করে। সেই সঙ্গে ক্যাপশনে বলা হয়, "আমদাবাদ এয়ারপোর্টের নাম – সর্দার বল্লভভাই পটেল থেকে আদানি এয়ারপোর্ট করা হল...! যত দিন না মোদী সরকার আপনার কিডনি বিক্রি করে দিচ্ছে, তত দিন মুখে মাস্ক পরে থাকুন।"
কংগ্রেস বিধায়ক অমিত চাভদা-ও ভাইরাল ভিডিওটি টুইট করে দাবি করেন যে, ভারতীয় জনতা দলের সরকার সর্দার পটেলের নামটা তুলে দিয়েছে।
টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
আরও পড়ুন: বেঙ্গালুরুর স্টার্ট-আপের ছবি কৃষকদের সুপার মার্কেট বলে ভাইরাল
তথ্য যচাই
বুম দেখে আমদাবাদের বিমান বন্দরের নাম সর্দার বল্লভভাই পটেল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থেকে বদলে আদানি এয়ারপোর্ট করা হয়নি। বিমানবন্দরটি চালায় আদানি গ্রুপ। ৭ নভেম্বর ২০২০ এয়ারপোর্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়া বিমানবন্দরটির পরিচালনার ভার আদানি গ্রুপের হাতে তুলে দেয়। কিন্তু সেটির নাম বদলানো হয়নি, যেমনটি দাবি করা হচ্ছে।
বিমানবন্দরের উন্নতি ঘটানো ও সেগুলির রক্ষণাবেক্ষণের কাজের মধ্যে দিয়ে, অসামরিক বিমান পরিবহন ক্ষেত্রে প্রবেশ করে আদানি গোষ্ঠী। গত বছর, কেন্দ্রীয় সরকার, তিরুবন্তপুরম, আমদাবাদ, জয়পুর, লখনউ, মেঙ্গালুরু ও গুয়াহাটি – দেশের এই ছ'টিবিমানবন্দর পরিচালনা করার জন্য 'প্রাইভেট পাবলিক পার্টনারশিপ'-এর ভিত্তিতে আদানি গোষ্ঠীকে লিজ দেয় ৫০ বছরের জন্য। এই কাজের জন্য একটি আন্তর্জাতিক টেন্ডার ডাকা হয়, এবং তাতে আদানি গোষ্ঠীই সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে উঠে আসে।
বুম এয়ারপোর্টটির কিছু ছবি দেখে। তা থেকে স্পষ্ট হয় যে, 'ওয়েলকাম টু আহমেদাবাদ' ও 'আদানি গ্রুপ' লেখা সাইনবোর্ডটি কেবল বিমানবন্দর থেকে বেরনোর সময়ই দেখা যায়। তার ঠিক উল্টো দিকে যে সাইনবোর্ডটি লাগানো আছে, সেটিতে বিমান বন্দরটির নাম রয়েছে: 'ওয়েলকাম টু সর্দার বল্লভভাই পটেল ইন্টারন্যাশন্যাল এয়ারপোর্ট'। কিন্তু সেই সাইনবোর্ডটি ভাইরাল ছবিতে দেখানো হয়নি।
ওই ছবিগুলি ১৮ ডিসেম্বর ২০২০ তোলা। সেগুলিতে দেখা যাচ্ছে যে, বিমানবন্দরটির নাম বদলানো হয়নি। প্রথম ছবিটিতে লেখা আছে, 'ওয়েলকাম টু আমদাবাদ' ও 'আদানি এয়ারপোর্টস'। ঠিক যেমনটা আছে ভাইরাল ছবিটিতে।
সাইনবোর্ডটির উল্টো দিকে লেখা আছে, 'ওয়েলকাম টু সর্দার বল্লভভাই পটেল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট'। নীচে দেওয়া দ্বিতীয় ছবিটিতে তেমনটাই দেখা যাচ্ছে।
আমরা দেখি, এয়ারপোর্ট অথরিটি অফ ইন্ডিয়া-র (এএআই) ওয়েবসাইটেও আমদাবাদ বিমানবন্দরের নাম 'সর্দার বল্লভভাই পটেল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট'ই রয়েছে।
বিমানবন্দরটির নাম বদলে দেওয়া হয়েছে, এই দাবিটি মিথ্যে। কিন্তু বুম দেখে, আদানি গোষ্ঠীর ব্র্যান্ডিং বেশ নজরকাড়ার মতো করেই করা হয়েছে বিমানবন্দরটিতে।
আরও পড়ুন: ২০০৬ তে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিধানসভা লবিতে বিক্ষোভের ভিডিও ফিরে এল