গণশক্তি খবর বিতর্ক, টুইটে ভুল স্বীকার বিজেপির রাম মাধবের
বুম দেখে ১৭ জুন প্রকাশিত গণশক্তির প্রতিবেদনের ভাইরাল অংশটি আসলে চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ানের বক্তব্য।
ভারত-চিন সীমান্ত লাদাখের গালওয়ানে সেনা সংঘর্ষ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সিপিএমের মুখপাত্র গণশক্তি সংবাদপত্রের প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু অপ্রাসঙ্গিকভাবে জাতীয় টেলিভিশনের সাক্ষাৎকারে তুলে ধরার জন্য ভুল স্বীকার করলেন বিজেপি সাধারণ সম্পাদক রাম মাধব। রাম মাধব ২৬ জুন শুক্রবার একটি টুইট করে সিপিএম পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমের তাঁকে নিশানা করা টুইট কোট করেই এই ভুল স্বীকার করে নেন।
১৫ জুন গালওয়ানে ভারত ও চিনের সংঘর্ষে ২০ জন ভারতের সেনা নিহত হন। চিনের তরফে হতাহতের সংখ্যা সরকারীভাবে কিছু জানানো হয়নি। এই ঘটনার পর থেকেই চিনের প্রতি ভারতের নমনীয় কূটনৈতিক অবস্থান নিয়ে দেশের বিভিন্ন বিরোধী দলের মধ্যে রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়েছে।
রাম মাধব ওই টুইটে লেখেন, ''মহম্মদ সেলিম ঠিক। আমাকে দেওয়া বয়ান সম্পূর্ণ সঠিক ছিল না। আমি ভুলের জন্য অনুশোচনা করছি। আমি হোয়াটসঅ্যাপের গল্প বিশ্বাস করিনা। কিন্তু এটি বাংলার একজন বরিষ্ঠ ও শ্রদ্ধেয় ব্যক্তির থেকে এসেছিল। তাই আমি বিশ্বাস করি এটাকে সত্যি বলে। গণশক্তি বেজিংয়ের বয়ান দিয়েছিল, তার নিজস্ব নয়, যা আমি ভেবেছিলাম।''
Md Salim is right. I was given an interpretation not fully true. I regret d error. I never trust WhatsApp stories. Bt this one came from a very senior and respected person from Bengal. Hence I believed it was true. Ganoshakti was giving Beijing's version, not its own as I assumed https://t.co/m2yT5V933N
— Ram Madhav (@rammadhavbjp) June 26, 2020
সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম ২৬ জুন রাম মাধবকে নিশানা করে এক গুচ্ছ টুইট করেন। মহম্মদ সেলিম ওই টুইটে যোগ করেন ইন্ডিয়া টুডে সংবাদ চ্যানেল-কে দেওয়া রাম মাধবের একটি সাক্ষাৎকারের ৪৪ সেকেন্ডের অংশ বিশেষ।
মহম্মদ সেলিম টুইটে লেখেন, ''বিজেপির সাধারণ সম্পাদক এবং তথাকথিত 'কৌশল ও বিদেশনীতির বিশেষজ্ঞ' অশোভনভাবে ভুয়ো হোয়াটসঅ্যাপ ফরোয়ার্ড জাতীয় টিভিতে উল্লেখ করলেন। সংশ্লিষ্ট গণশক্তি প্রতিবেদনটি এখনও অনলাইনে আছে। এবং তিনি অবশ্যই যেন অনুবাদককে জিজ্ঞাসা করেন বাংলায় সাহায্য করার জন্য।''
The General Secretary of the BJP & so called 'strategic affairs & foreign policy expert' @rammadhavbjp blatantly cites a fake WhatsApp forward on National television. The referred Ganashakti article is still available online & he must ask a translator to help him with Bangla. pic.twitter.com/eiyjqwvXTs
— Md Salim (@salimdotcomrade) June 26, 2020
৪৪ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে রাম মাধবকে ইংরেজিতে বলতে শোনা যায়, ''আমাকে বিস্মিত করে। আমি বুঝি একটি কমিউনিস্ট দলের প্রকাশনা কলকাতায় আজকেও অভিযুক্ত করছে ভারতীয় সেনা আসলে সমস্ত সমস্যা শুরু করেছে গালওয়ান উপত্যকায়। আমাকে বলা হয়েছে। আমাকে একটি পেপার ক্লিপিং পাঠিয়েছে কেউ একজন। এটা বাংলায়, এটি বাম দলের অঙ্গ। এই সব (পড়ুন সীমান্ত) সমস্যা শুরু করার জন্য যেটি অভিযোগ করেছে ভারতের সেনাবাহিনীকে। আমি বুঝতে পারি বামকে। কারণ বামেরা সব সময় পঞ্চম কলমচি(ফিফথ কলামনিস্ট) যখন কমিউনিস্ট দেশের প্রসঙ্গ আসে। অতীতে সোভিয়েত ইউনিয়নের ক্ষেত্রে হয়েছে কিংবা এখন চিনের ক্ষেত্রে আপনারা জানেন।"
আরও পড়ুন: শি জিন পিং-এর সামনে নরেন্দ্র মোদীর মাথা নোয়ানোর ছবিটি ফোটোশপ করা
মহম্মদ সেলিম তাঁর টুইটে আরও লেখেন, ''ভুয়ো খবর ছড়ানোর পরিবর্তে মিস্টার মাধব যেন স্পষ্ট হন, কতজন বিজেপি ও সংঘ পরিবার অনুমোদিত আধিকারিক, আধা-আধিকারিক, রাজনৈতিক এবং ব্যবসায়ী ব্যক্তিত্ব গত ৬ বছরে চিনে গেছে। এমনকি আমি নরেন্দ্র মোদীর ৬ বার সফর ধরছিনা।''
Instead of spreading Fake News, Mr Madhav must come clean on how many official, semi-official, political & business delegations affiliated to BJP & Sangh Parivar have visited China in past 6 years. I'm not even counting 9 visits by Narendra Modi.
— Md Salim (@salimdotcomrade) June 26, 2020
অর্ধেক ক্লিপিং
সোশাল মিডিয়ায় গণশক্তির প্রথম পাতার প্রতিবেদনের অংশ বাদ দিয়ে সম্পর্কহীনভাবে শুধুমাত্র দ্বিতীয় পাতার অংশ ছড়িয়ে অভিযোগ তোলা হয় গণশক্তি চিনের পক্ষপাত করছে। ''সীমান্তে সংঘাত, মৃত্যু উভয় পক্ষেই''—এই শিরোনামে প্রতিবেদনটিতে দেখা যায়, ''...সীমান্তে উত্তেজনা প্রশমনে গুরুত্বপূর্ণ সহমতে পৌঁছেছিল। কিন্তু বিস্ময়করভাবে ১৫ জুন ভারতীয় সেনারা সেই সহমত গুরুতরভাবে লঙ্ঘন করে। এবং দু'বার অবৈধ কাজ করতে চিনের সীমান্ত অতিক্রম করে। তারা চিনের জওয়ানদের প্ররোচনা দেয় ও আক্রমণ করে। তা থেকে দু'দেশের সেনাদের মধ্যে গুরুতর শারীরিক সংঘর্ষ ঘটেছে। চিন এই ঘটনার জোরালো প্রতিবাদ জানিয়েছে ভারতের কাছে। ঝাও বলেন, আমরা ভারতকে অনুরোধ করছি সহমত মেনে চলার জন্য।...''
আরও পড়ুন: সিপিআই-এম ভারতের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে, ছবিগুলি সম্পাদিত
রাম মাধবের সাক্ষাৎকার
বুম বিজেপি সাধারণ সম্পাদক রাম মাধবের পূর্ণাঙ্গ সাক্ষাৎকারটি খুঁজে পেয়েছে। রাম মাধবের গালওয়ান উপত্যকায় সেনা সংঘর্ষ বিষয়ে ইন্ডিয়া টুডেকে দেওয়া ওই অনুষ্টানটি ইউটিউবে আপলোড করা হয় ১৯ জুন, ২০২০। অনুষ্ঠানের সঞ্চালক রাহুল কানওয়াল ১৯ মিনিট ২২ সেকেন্ডে গালওয়ান ভ্যালির ঘটনা নিয়ে ভারতের রাজনৈতিক দলগুলির অবস্থান নিয়ে রাম মাধবকে প্রশ্ন করলে, তার প্রত্যুত্তরে গণশক্তির ক্লিপিংয়ের প্রসঙ্গ তোলেন। ২২ মিনিট ৩৩ সেকেন্ড সময়ে রাম মাধবকে বিষয়টি নিয়ে বলতে শোনা যাবে। এই অংশটিই টুইট করেছেন মহম্মদ সেলিম।
গণশক্তির রিপোর্ট
বুম ১৭ জুন ২০২০ প্রকাশিত গণশক্তির প্রতিবেদনের ই-পেপার খুঁজে দেখেছে। গালওয়ান উপত্যকার সংঘর্ষ প্রসঙ্গে গণশক্তির প্রথম পাতায় ''লাদাখ সীমান্তে সংঘাত, মৃত্যু উভয় পক্ষেই'' এই শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল। দ্বিতীয় পৃষ্ঠায় থাকা প্রতিবেদনের দ্বিতীয় অংশটি সোশাল মিডিয়ায় অপ্রাসঙ্গিক ভাবে ছড়ানো হয়।
প্রথম পাতার প্রতিবেদনের অংশটিতে রয়ে যায় ভাইরাল অনুচ্ছেদের প্রথম অংশ। সেখানে লেখা হয়, ''চিনের তরফে কোনও ক্ষয়ক্ষতির কথা জানানো না হলেও সংঘাতের কথা স্বীকার করা হয়েছে। বেজিংয়ে চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, 'কোনও প্রাণহানির কথা আমাদের জানা নেই।' ঝাও বলেন, দু'দেশের সীমান্তের সেনারা উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করেছিল, সীমান্তে উত্তেজনা প্রশমনে গুরুত্বপূর্ণ সহমতেও পৌছেছিল।''
ভাইরাল ক্লিপিংটির ওই বিতর্কিত অনুচ্ছেদ আসলে চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ানের বক্তব্য। এটি গণশক্তির নিজস্ব বক্তব্য নয়।
প্রতিবেদেনের প্রথম অংশের ই-পেপার পড়া যাবে এখানে। দ্বিতীয় অংশের ই-পেপার পড়া যাবে এখানে।
১৭ জুন ২০২০ চিনের বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্রের গণমাধ্যমকে দেওয়া মূল বিবৃতি পড়া যাবে এখানে। (প্রসঙ্গত চিনের সময় ২ ঘন্টা ৩০ মিনিট এগিয়ে, গণশক্তির প্রতিবেদনটি ১৭ জুন ছেপে বের হয়)
মহিলা মোর্চার প্রতিবাদ
গণশক্তির এই প্রতিবেদনকে ঘিরে বিক্ষোভ জানাতে ২০ জুন দুপুরে অগ্নিমিত্রা পালের নেতৃত্বে মৌলালির কাছে পত্রিকার দপ্তর 'গণশক্তি ভবন' ঘেরাও অভিযানে অংশ নেয় বিজেপি মহিলা মোর্চার সদস্যরা। চিনের রাষ্ট্রপতির কুশপুতুলে অগ্নিসংযোগও করা হয়। কলকাতা পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দিতে আটক করে বেশ কয়েকজন বিজেপি মহিলা মোর্চা কর্মীদের। বিস্তারিত পড়ুন এখানে।