করোনাভাইরাস সংক্রমণের ফলে চিনের রাস্তায় ছড়ালো শব দেহ? একটি তথ্য যাচাই
বুম দেখে যে, জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টে একটি কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে মৃতদের স্মরণে ওই ছবিটি তোলা হয় ২০১৪ সালের ২৪ মার্চ।
নাৎসি জার্মানির কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে মৃত ব্যক্তিদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানাতে রাস্তায় পড়ে থাকা মানুষের ছবি—মিথ্যে দাবি সহ প্রচার করা হচ্ছে যে, সেগুলি হল চিনে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের মৃতদেহ।
ছবিটি ওপর থেকে তোলা। তাতে দেখা যাচ্ছে বেশ কিছু মানুষ একটা খোলা জায়গায় শুয়ে আছে, আর পথচারীরা তার পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে। ছবিটি এমন এক সময়ে প্রচারে এসেছে, যখন মারণ নোবেল করোনাভাইরাসের সঙ্গে চিন লড়াই করে চলেছে। সোশাল মিডিয়ায় মিথ্যে দাবি করা হচ্ছে যে, চিনের ইসলাম বিদ্বেষের জন্যই ওই মানুষগুলি মারা গেছে।
ছবিটির ক্যাপশনে বলা হয়েছে, "চিন 'ইসলামকে' 'ভাইরাস' আখ্যা দিয়েছে। এবং তাকে দেশ থেকে নির্মূল করার আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। তারা কোরান নিষিদ্ধ করেছে। তারা প্রার্থনা নিষিদ্ধ করেছে। তারা হিজাব নিষিদ্ধ করেছে। তারা উপবাস নিষিদ্ধ করেছে। তারা এক মিলিয়ন (১০ লক্ষ) নির্দোষ মুসলমানকে বন্দি করে রেখেছে। কিন্তু আজ চিনে ৩৫ মিলিয়ন (৩৫০ লক্ষ) মানুষের চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ২,৭০০'রও বেশি মানুষ এখন অসুস্থ। এবং ১০০+ মারা গেছেন। আল্লার নির্দেশ ছাড়া কিছুই হয় না। আল্লা সব জানেন। চিন পরিকল্পনা করেছে। আল্লাও পরিকল্পনা করেছেন। আল্লাই হলেন শ্রেষ্ঠ পরিকল্পক। #রিপোস্ট#।"
নতুন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত ৪৯৪ জন মারা গেছে এবং বিশ্বজুড়ে ২৪,৬০৭ জন সংক্রমিত হওয়ার কথা জানা গেছে (সূত্র: জনহপকিন্স)। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ভাইরাসটিকে আন্তর্জাতিক স্তরে জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত এমার্জেনসি বলে ঘোষণা করেছে।
এরকম একটি পোস্ট আর্কাইভ করা আছে এখানে।
একই বয়ানে ছবিটি ফেসবুক ও টুইটারে ভাইরাল হয়েছে।
Nothing happens without the permission of Allah and Allah is aware of all things. China planned, Allah planned. Indeed, Allah is the Best Planner. #Repost! pic.twitter.com/WcAmy9JSCv
— shaikh aslam (@shaikhaslam313) January 30, 2020
বুম তার হেল্পলাইনেও যাচাই করার জন্য ছবিটি পেয়েছে।
আরও পড়ুন: করোনাভাইরাস: ইন্দোনেশিয়ার বাজারের ছবি চিনের উহানের বলে চালানো হচ্ছে
তথ্য যাচাই
বুম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে খুঁজে পায় যে চিনে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের সঙ্গে ছবিটির কোনও সম্পর্ক নেই।
আমরা দেখি যে, 'হিন্দুস্তানটাইমস' 'দিনের সেরা ফটো' হিসেবে ছবিটিকে মার্চ ২০১৪'য় প্রকাশ করেছিল। ক্যাপশনে বলা হয়, "ফ্রাঙ্কফুর্টের কাছে কাটসবাখ কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে ৫২৮ মৃত ব্যক্তির স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে, একটি আর্ট প্রকল্পের অঙ্গ হিসেবে, পায়ে হাঁটার এলাকায় শুয়ে আছেন মানুষজন, রয়টার্স।"
কয়েকটি বিশেষ কি-ওয়ার্ড দিয়ে সার্চ করে, আসল ছবিটির সন্ধান পাওয়া যায়। রয়টার্স সংবাদ মাধ্যমের জন্য ছবিটি তোলেন চিত্র-সাংবাদিক কাই পাফেনব্যাখ।
ছবিটি ২৪ মার্চ ২০১৪ সালে, জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টে তোলা হয়। একটি নাৎসি কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে যারা মারা যায়, তাদের কথা স্মরণ করে লোকেরা পথচারীদের জন্য একটি নির্দিষ্ট করা জায়গায় শুয়ে পড়েন। ওই শ্রদ্ধা জ্ঞাপন একটি প্রতিবাদ শিল্পের অঙ্গ ছিল। আসল ছবিটি রয়টার্সের সংগ্রহে রয়েছে।
মূল ছবিটির ক্যাপশনে বলা হয়, "কাটসবাখ নাৎসি কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে অত্যাচারে শিকার হওয়া ৫২৮ জনের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে পথচারীদের জন্য নির্দিষ্টকরা জায়গায় ২৪ মার্চ ২০১৪'য় শুয়ে পড়েন মানুষজন। ওই শ্রদ্ধা জ্ঞাপন ছিল একটি শিল্পকর্মের অঙ্গ। কাটসবাখ কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পটি অ্যাডলার কারখানায় অবস্থিত ছিল। সেখানকার বন্দিদের বুখেনওয়াল্ড ও ডাচাউয়ের কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে ২৪ মার্চ ১৯৪৫'এ হত্যা করা হয়। কাটসবাখে প্রায় ৫২৮ মৃত ব্যক্তি ফ্রাঙ্কফুর্টের কেন্দ্রীয় সমাধিতে শায়িত আছেন। রয়টার্স। কাই প্যাফেনব্যাখ।"