জেএনইউ-এর অচলাবস্থার সময় কি ইন্দিরা গান্ধী সীতারাম ইয়েচুরিকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করেছিলেন?
মোহনদাস পাই অপ্রাসঙ্গিক একটি ছবি শেয়ার করে এই ভুয়ো দাবিটির মান্যতা দিয়েছেন।
ইনফোসিস-এর প্রাক্তন অধিকর্তা মোহনদাস পাই ১৯৭৭ সালের সিপিআইএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরির একটি ছবি পোস্ট করেছেন, যেখান দেখা যাচ্ছে, তিনি জেএনইউ-র ছাত্রদের রচিত একটি স্মারকলিপি পাঠ করছেন, যে লিপিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের তদানীন্তন আচার্য ইন্দিরা গান্ধীর ইস্তফা দাবি করা হয়েছে।
মোহনদাস পাইয়ের শেয়ার করা ছবিতে একটি ভুয়ো বিবরণী ঢোকানো হয়েছে, যেখানে মিথ্যাচার করে লেখা হয়েছে যে, ১৯৭৫ সালে ইয়েচুরিকে ইন্দিরা গান্ধী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করার পর তিনি দুঃখপ্রকাশ করে লেখা একটি বিবৃতি পাঠ করছেন।
পাই এই ছবিটি টুইট করে তার ক্যাপশন দিয়েছেন, "ওহে! এটা কি সত্যি!" শুধু তাই নয়, তিনি পোস্টটিতে ইয়েচুরিকে ট্যাগও করেছেন।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ইন্দিরা গান্ধীর সামনে একটি বড়-সড় জমায়েত, যেখানে ইন্দিরার পাশে দাঁড়িয়ে ইয়েচুরি একটি কাগজ থেকে কিছু পাঠ করছেন। ইন্দিরার চারপাশ পুলিশ ঘিরে রেখেছে। আর ছবিতে যে বিবরণী জোড়া হয়েছে, তা হলো,
"জরুরি অবস্থা, ১৯৭৫
দিল্লি পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে ইন্দিরা গান্ধী জেএনইউ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করে ছাত্র সংসদের সভাপতি সীতারাম ইয়েচুরিকে পেটালেন এবং তাঁকে সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দিতে বাধ্য করলেন। সেই সঙ্গে জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য ইয়েচুরিকে তিনি দুঃখপ্রকাশেও বাধ্য করলেন।
একেই বলে বজ্রমুষ্টিতে কমিউনিস্টদের মোকাবিলা করাl ইন্দিরার এই কঠোর নিদানের পাশে অমিত শাহকে প্রায় সন্ত মনে হয়।"
ক্যাপশন থেকে কয়েকটি মূল শব্দ বেছে নিয়ে বুম ফেসবুক ও টুইটারে দ্রুত অনুসন্ধান চালিয়ে দেখেছে, এই দুই সোশাল মিডিয়াতেই ছবিটি শেয়ার হয়েছে।
এই ছবি ও তার ক্যাপশন ভাইরাল হয়েছে আগের রবিবার সন্ধ্যায় জেএনইউ-র ছাত্রীনিবাসে মুখোশ পরিহিত গুণ্ডাদের হামলা ও তাণ্ডবের প্রেক্ষিতে।
তথ্য যাচাই
বুম ছবিটির বিবরণ অংশটি ছেঁটে কেবল ছবিটি খোঁজখবর করে দেখেছে, এটির প্রেক্ষিত সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল। তার মধ্যে একটি টুইটও রয়েছে, যাতে ছবিতে কী ঘটছে তার যথার্থ বিবরণ রয়েছে।
টুইটার ব্যবহারকারী কোরা আব্রাহাম জানাচ্ছেন, ছবিটিতে জেএনইউ-র তত্কালীন ছাত্র-সংসদের সভাপতি সীতারাম ইয়েচুরিকে দেখা যাচ্ছে ১৯৭৭ সালের ৫ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে ছাত্রদের লেখা একটি স্মারকলিপি পড়ে শোনাতে, যাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের পদ থেকে ইন্দিরা গান্ধীর পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে।
আব্রাহামের টুইটে আরও জানানো হয়েছে, এর পর ইন্দিরা সত্য-সত্যই জেএনইউ-র আচার্যের পদ থেকে ইস্তফা দেন।
Pic 1: Sitaram Yechury as a student leader in JNU reading the memorandum presented by students on September 5, 1977 to Indira Gandhi, demanding her resignation as chancellor of the university. She resigned after this.
— Korah Abraham (@thekorahabraham) December 19, 2019
Pic 2: Being arrested in #CAAProtest today. pic.twitter.com/wUe9o3skDC
আব্রাহামের এই ক্যাপশনের সূত্র ধরে আমরা আরও অনুসন্ধান চালাই এবং হিন্দুস্তান টাইমস ও ইন্ডিয়া রেজিস্টস্-এ দুটি সংবাদ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল যেখানে আব্রাহামের বক্তব্যই সমর্থিত হয়।
বুম এ ব্যাপারে ইয়েচুরির সঙ্গেও যোগাযোগ করে এবং তিনিও হিন্দুস্তান টাইমস ও ইন্ডিয়া রেজিস্টস্ পত্রিকায় প্রকাশিত ৪২ বছরেরও বেশি পুরনো সেই ঘটনা নিয়ে লেখা প্রতিবেদনগুলিকে সঠিক বলে জানান।
তিনি জানান, "এই ফোটোটি ১৯৭৫ সালের নয়, এটি ১৯৭৭ সালের সেপ্টেম্বরে তোলা হয়েছিল। ছাত্ররা সেদিন দাবি করেছিল যে ইন্দিরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্যের পদ থেকে ইস্তফা দিন, এবং সেই দাবি মেনে ইস্তফাই দিয়েছিলেন।" ইয়েচুরি সেই সঙ্গেই ইন্ডিয়া রেজিস্টস্-এ প্রকাশিত প্রতিবেদনটির একটি লিংকও বুমকে পাঠিয়ে দেন, যা জেএনইউ-এর হিন্দি অনুবাদ বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক চমন লালের বিবরণের সঙ্গেও মিলে যায়।
ভাইরাল হওয়া ভুয়ো বার্তাটিতে যেমন দাবি করা হচ্ছে, সে ভাবে ইন্দিরা গান্ধী কি ইয়েচুরির প্রতি আক্রমণাত্মক হয়েছিলেন?
স্মৃতি হাতড়ে ইয়েচুরির জবাব, "না, তিনি যথেষ্ট ভদ্র আচরণই করেছিলেন। তার পর তিনি স্রেফ ওখান থেকে চলে যান।"