স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক রাজ্যগুলিকে 'হিন্দু' শব্দটি ব্যবহার করতে নিষেধ করেছে?
'হিন্দু' ও 'শিবলিঙ্গ'এই শব্দ দুটির ব্যবহার নিষেধ করে রাজ্যগুলিকে চিঠি দেওয়ার কথা অস্বীকার করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।
একটি বিজ্ঞপ্তির স্ক্রিনশট বা ছবি দেখাচ্ছে যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে এই মর্মে নির্দেশ দিচ্ছে যে, তাদের মুখ্য সচিবরা যেন কোনও সরকারি বার্তায় 'হিন্দু' শব্দটি ব্যবহার না করেন। কিন্তু ওই স্ক্রিনশটটি ভুয়ো।
সরকারের প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরোর (পিআইবি) তথ্য যাচাই করার টুইটার অ্যাকাউন্ট পিআইবি ফ্যাক্টচেকও দাবিটি খণ্ডন করেছে।
A purported #MHA letter asking the Chief Secretaries 'to avoid the use of the term ''Hindu" in respect of Indian in Official Communication and transactions' is doing the rounds of social media#PIBFactCheck: This letter has NOT been issued by MHA.
— PIB Fact Check (@PIBFactCheck) January 17, 2020
Conclusion: #FakeNews pic.twitter.com/53hiP4kcUj
যুগ্ম-সচিব (প্রশাসন) শ্রী প্রকাশের সঙ্গে যোগাযোগ করে বুম। উনি জানান ইমেলটি ভুয়ো। "আমি নিশ্চিত হয়ে জানাচ্ছি যে, ওই চিঠির প্রতিটা অংশই ভুয়ো। কারণ, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক এরকম কোনও চিঠি লেখেনি কখনও," ইমেলের মাধ্যমে দেওয়া উত্তরে শ্রী প্রকাশ এই কথা বলেন।
স্ক্রিনশটটিতে দাবি করা হয়েছে, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক নাকি এখন ১৯৯৫ সালে দেওয়া সুপ্রিম কোর্টের একটি রায় অনুসরণ করছে। ওই রায়েতে নাকি সরকারি লেখালিখিতে 'হিন্দু' শব্দটির ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। কারণ, শব্দটি নাকি 'গালি গালাজ'-এর পর্যায়ে পড়ে। ওই স্ক্রিনশটে আরও বলা হয়েছে যে, শিবলিঙ্গ বলতে পুরুষ যৌনাঙ্গ বোঝায়। তাই ভগবান শিবের মন্দির বা ধর্মস্থানের ক্ষেত্রে ওই শব্দ যেন না ব্যবহার করা হয়। ওই শব্দগুলির বদলে 'সেকুলার' ও 'মহাদেব' ব্যবহার করতে হবে। জনৈক ব্যক্তি ক্যামস্ক্যানার অ্যাপ ব্যবহার করে চিঠিটি স্ক্যান করে। ছবিটির নীচের ডানদিকের কোণে তার ইঙ্গিত আছে।
ওই বিজ্ঞপ্তিটিতে আরও বলা হয় যে, প্রকাশ্যে যেন শিবলিঙ্গের পুজো না করা হয়। শিবলিঙ্গকে ব্রাহ্মণ, স্তূপ এবং রাজা অশোকের তৈরি বিহার হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে, এবং বলা হয়েছে যে, তফসিলি জাতি/জনজাতি ও অন্যান্য পিছিয়ে-থাকা সম্প্রদায়গুলি (ওবিসি) একে 'মহাদেব' হিসেবে পুজো করে।
সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ছবিটি বুমের হোয়াটসঅ্যাপ হেল্পলাইনে আসে।
আরও পড়ুন: তথ্য যাচাই: বিজেপি সাংসদ স্মৃতি ইরানি ধর্ষনে অভিযুক্ত চিন্ময়ানন্দকে নমস্কার জানিয়েছেন?
তথ্য যাচাই
ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে, সঞ্জয় মেহেতা নামের এক আন্ডার সেক্রেটারি বা অবর সচিব ৪ অক্টোবর ২০১৯ বিজ্ঞপ্তিটি লেখেন, এবং ২৭ নভেম্বর ২০১৯ সেটি পাঠানো হয়। কিন্তু বুম ওই নোটিস বা বিজ্ঞপ্তি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে দেখতে পায়নি।
বুম ওপরে দেওয়া তারিখ এবং কি-ওয়ার্ড 'সুপ্রিম কোর্ট', 'হিন্দু' '১৯৯৫' ও 'সঞ্জয় মেহতা' ব্যবহার করে সার্চ করে। কিন্তু ওই রকম কোনও চিঠি পাওয়া যায়নি। ওই সংক্রান্ত কোনও খবরও সামনে আসেনি।
কি-ওয়ার্ড 'সুপ্রিম কোর্ট', 'হিন্দু' ও '১৯৯৫' দিয়ে সার্চ করলে, সুপ্রিম কোর্টের এক সম্পূর্ণ ভিন্ন নির্দেশের সন্ধান পাওয়া যায়। সেই সময়, সর্বোচ্চ ন্যায়ালয়, প্রধান বিচারপতিকে পাঁচ বিচারপতির একটি বড় বেঞ্চ গঠন করতে অনুরোধ করে, যার কাজ হবে 'হিন্দুত্ব' শব্দটির অর্থ ব্যাখ্যা করা। কিন্তু আজ অবধি সুপ্রিম কোর্ট সেরকম কোনও কমিটি গঠন করেনি।
চিঠিটি খুঁটিয়ে দেখলে, একাধিক বানান ও ব্যাকরণের ভুল চোখে পড়ে। তাছাড়া, নির্দেশ ও বিজ্ঞপ্তি লেখার ক্ষেত্রে প্রচলিত ধারা ব্যবহার করা হয়নি। বেশ কিছু ইংরেজি শব্দে—যেমন, 'ডিরেক্টেড', 'ম্যানডেটেড', 'ব্যান', ইন্সটলেশন—বড় হাতের অক্ষর এলোমেলোভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। তাছাড়া 'শিশ্ন' বা 'গালি গালাজ'-এর মতো চটুল শব্দ সাধারণত সরকারি বার্তায় ব্যবহার করা হয় না।
আরও পড়ুন: এই বোরখা পরা মহিলার ছবিটির সঙ্গে শাহিন বাগের প্রতিবাদের কোনও যোগ নেই