তারাপীঠে করোনাভাইরাস? ভাইরাল হল ছাগলের মাংস নিয়ে ভুয়ো আতঙ্কের বার্তা
বুম যাচাই করে দেখেছে তারাপীঠে করোনাভাইরাস—এই বার্তাটি ভুয়ো। বিশেষজ্ঞরা আগেই জানিয়েছেন খাসি ও মুরগির মাংস খাওয়া নিরাপদ।
ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপে ভুয়ো বার্তা শেয়ার করে দাবি করা হয়েছে বীরভূমের তারাপীঠে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। ছাগলের মাংসের মাধ্যমে নাকি ছড়াচ্ছে এই ভাইরাস।
বুম আগেই গুজবের তথ্য-যাচাই করেছে যে খাসি বা মুরগির মাংসের মাধ্যমে মানবদেহের নভেল করোনা ভাইরাস বা কোভিড১৯ ছড়ায় না। আজমেঢ়ের একটি ভুয়ো ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে দাবি করা হচ্ছিল সেগুলি ভাইরাস আক্রান্ত। অন্য রাজ্যের ছাগল এরাজ্যে আমদানির ফলে মাংসের মাধ্যমে করোনা ছড়াচ্ছে।
আরও পড়ুন: রাজস্থানে করোনাভাইরাসের কবলে ছাগল? খাসির মাংস কতটা নিরাপদ
ভাইরাল হওয়া বার্তাটিতে লেখা হয়েছে, ''বীরভূমের তারাপিঠ এ করোনা ভাইরাস পোঁছে গেছে। এখন পর্যন্ত অনেক মানুষকে রামপুরহাটের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে৷ Dr. অশোক দত্ত বলেছেন এই রোগ বীরভূমের তারাপিঠে এলো ছাগলের মাংস এর মাধ্যমে। তিনি এও বলেছেন যদি এটা এইভাবেই চলতে থাকে তবে অতিশিঘ্রই লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষ মারা যাবে। এক সপ্তাহের মধ্যে৷ তাই সবাইকে জানানো যাচ্ছে যে আপনারা কেউ ছাগলের মাংস বর্তমানে খাবেন না এবং বাচ্চাদেরকে এর থেকে দূরে রাখবেন৷ প্রচুর পরিমাণে ছাগলকে কে বেশি করে ইজ্ঞেকশেন করার জন্য এই রোগটি বেশি ছড়াচ্ছে, এই রোগটি বিশেষ করে কিডনিকে নষ্ট করে দিচ্ছে। বহরমপুরের Dr. বিদ্যুৎ পাল নিজেও এই রোগের শিকার হয়েছেন। এই রোগের কোনো ওষুধ বার হয়নি তাই এই রোগকে সারানো বর্তমানে অসম্ভব। দয়াকরে খবরটি অন্য সবাইকে জানান। PLEASE FORWARD THIS MSG।''
ওই পোস্টগুলির শেষে, ''পশ্চিমবঙ্গ সরকার দ্বারা জন স্বার্থে প্রচারিত'' কথাটি জুড়ে আরও বিভ্রান্তি তৈরি করা হচ্ছে।
এরকম একটি পোস্ট আর্কাইভ করা আছে এখানে।
একই বয়ানে ওই ভুয়ো পোস্টগুলি ভাইরাল হয়েছে ফেসবুকে।
এই একই বার্তা হোয়াটসঅ্যাপেও ভাইরাল হয়েছে।
তথ্য যাচাই
তারাপীঠে করোনাভাইরাস
বুম যাচাই করে দেখেছে এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত পশ্চিমবঙ্গে কোনও ব্যক্তির দেহে নোভেল করোনা বা কোভিড-১৯ ভাইরাসের দেখা মেলেনি। সন্দেহজনক ব্যক্তিদের কয়েকজন বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে ভর্তি আছেন। আগেও কয়েকজন সন্দভাজন ব্যক্তির দেহে করোনার নমুনা না মেলায় তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
বর্ধমান জেলার গুসকরায় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উন্নয়নমূলক কাজে আসা ইতালিও কয়েকজন নাগরিক মাস্ক পরে ঘোরাফেরা করলে চাঞ্চল্য ছড়ায়। গুজব রটে তারা করোনা আক্রান্ত। পরে পুলিশের হস্তক্ষেপে তাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে সেখান থেকে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
মহামারী রোগ আইন (১৮৯৭)-এর আওতায় রোগাতঙ্ক নিয়ে ভুয়ো খবর বা গুজব ছড়ানো শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ওড়িশায় এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
ছাগল ও মুরগীর মাংস কি নিরাপদ?
ভারত সরকার মাংস খাওয়াতে কোনও নিষেধাজ্ঞা জারি করেনি।
বুম পশ্চিমবঙ্গ প্রাণী ও মংস্য বিজ্ঞান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটিরিনারি মাইক্রেবায়েলজি বিভাগের সরকারী অধ্যাপক ডঃ কুনাল বটব্যালের সঙ্গে যোগাযোগ করে। তিনি জানান, ''কোভিড১৯ মানবদেহের ভাইরাস। তা মুরগী বা ছাগলের আক্রমনের যে খবর ছড়ানো হচ্ছে তা নিতান্তই গুজব।''
বুম ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক অধ্যাপক ডঃ পার্থ সারথি জানার সঙ্গে কথা বলেছে। যিনি ভেটিরিনারি এপিডোমলোজি এবং প্রিভেনটিভ মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক। তিনি বলেন, ''এই সময় ছাগল অন্যান্য ভাইরাস ঘটিত রোগে আক্রান্ত হয় যা খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। অসুস্থতা সারলে সেই ছাগলের মাংস খাওয়ার অসুবিধা কোথায়। ছাগলে 'করোনা' সংক্রমণের খবরগুলো সবই ভুয়ো।''
আরও পড়ুন: করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মুরগি? ভুয়ো খবর
রাজ্যর করোনা হেল্পলাইন
কোন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকেরহেল্পলাইনের (০১১ ২৩৯৭৮০৪৬) পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের জন্য চালু করা হয়েছে করোনাভাইরাসের হেল্পলাইন। নম্বরগুলি হল ১৮০০৩১৩৪৪৪২২২, ০৩৩২৩৪১২৬০০ করোনাভাইরাস সংক্রান্ত যে কোনও সহায়তা ও পরামর্শের জন্য যোগাযোগ করা যাবে ওই নম্বরগুলিতে। করোনাভাইরাসে মৃত, আক্রন্ত ও সেরে যাওয়া ব্যক্তির রাজ্যভিত্তিক সংখ্যা জানা যাবে স্বাস্থ্য মন্ত্রকের ওয়েবসাইটে: https://www.mohfw.gov.in/
আরও পড়ুন: মাছে মরফিন ভাইরাস? আবার ফিরলো পুরনো গুজব