ব্রাজিলে এক মহিলাকে নির্মম মারার ভিডিওকে ভারতের ঘটনা বলে চালানো হল
বুম দেখে এই ভিডিওটি ব্রাজিলের ফোর্টালেজা অঞ্চলের, যেখানে একটি মেয়েকে অপহরণ করে কুপিয়ে মারার দৃশ্য ক্যামেরাবন্দী করা হয়।
ব্রাজিলে এক মহিলাকে নৃশংসভাবে কুড়ুল দিয়ে কুপিয়ে মারার এক বিভৎস দৃশ্যের ভিডিও ভাইরাল করে দাবি করা হচ্ছে, এটি ভারতের ঘটনা।
৩১ সেকেন্ডের এই ভিডিও ক্লিপটিতে দেখা যাচ্ছে, মুখোশ পরা এক ব্যক্তি, হাত বাঁধা এবং মুখে কাপড় গোঁজা এক মহিলাকে কুড়ুল দিয়ে কুপিয়ে মারছে।
দৃশ্যটি ভীষণ অস্বস্তিকর হওয়ায় বুম সেটিকে এই প্রতিবেদনের অন্তর্ভুক্ত না-করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ভিডিও ক্লিপটি শেয়ার করা হচ্ছে এই বিবরণী সহ যে, এটি ভারতেই ঘটা একটি ঘটনা।
পোস্টটির আর্কাইভ করা আছে এখানে।
এই পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
আরও পড়ুন: ব্রাজিলে ডাকাতের হাতে নিহত কুকুরকে ভারত-চিন সংঘর্ষের সঙ্গে জোড়া হল
তথ্য যাচাই
বুম দেখেছে, এই ঘটনাটি ব্রাজিলের ফোর্টালেজা অঞ্চলের, যেখানে ২৩ বছর বয়সী এক মহিলা থালিয়া তোরেস ডিসুজাকে, যাঁকে একটি অপরাধী চক্রের ঘাতকরা অপহরণ করে হত্যা করে।
আমরা ভিডিওটি বিশ্লেষণ করে দেখেছি, মহিলার ঊর্ধাঙ্গে পরনের টি-শার্টটিতে ফোর্ট শব্দটি রোমান হরফে পড়া যাচ্ছে। ওটা আসলে ব্রাজিলেরই একটি ফুটবল দল ফোর্টালেজা স্পোর্টস ক্লাবের জার্সি। আর এ থেকেই বোঝা যায়, এটি ভারতের কোনও ঘটনা নয়, ব্রাজিলের।
পোর্তুগিজ ভাষার শব্দ বসিয়ে গুগল-এ ছবি খোঁজ করে আমরা দেখি, এই ভাইরাল হওয়া ক্লিপটি বীভত্স দৃশ্যের ওয়েবসাইটে শেয়ার করা হয়েছে। ওয়েবসাইটের বিবরণেও এটিকে ব্রাজিলের ঘটনা বলেই উল্লেখ করা হয়েছে।
একই জার্সি এবং জিনস-এর হাফপ্যান্ট পরা, মাটিতে পড়ে থাকা ওই মহিলার আরকটি ছবি একটি ব্লগে আমরা দেখতে পেয়েছি, যেটি রাতে তোলা হয়েছে এবং সেখানেই মহিলাকে থালিয়া তোরেস ডিসুজা নামে শনাক্ত করা হয়েছে।
থালিয়া তোরেস-এর নাম দিয়ে খোঁজ করে আমরা সিএন-৭ ওয়েবসাইটে একটি রিপোর্টও প্রকাশিত হতে দেখেছি ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর তারিখে, যাতে বলা হয়েছে ব্রাজিলের সেয়ারা প্রদেশের ফোর্টালেজায় এক মহিলাকে অপহরণ করে খুন করে এক অপরাধী চক্রের একটি গোষ্ঠী।
প্রতিবেদনটিতে জানানো হয়েছে, শুধু অগস্ট মাসেই ১৭ জন মহিলা এই সেয়ারা প্রদেশে খুন হয়েছেন এবং এই বছরে ইতিমধ্যেই এ রাজ্যে ২২৬ জন মহিলাকে খুন করা হয়েছে। প্রতিবেদনে আরও জানানো হয়, থালিয়াকে বোম জার্দিন এলাকা থেকে অপহরণ করা হয় এবং পাশেরই এলাকা গ্রাঞ্জা পোর্তুগালে নিয়ে যাওয়া হয় ২৬ অগস্ট।
বিস্তারিত রিপোর্টে বলা হয়েছে, থালিয়াকে বন্দুকের ডগায় হাত বেঁধে মুখে কাপড় গুঁজে দুষ্কৃতীরা মারাংগুয়াপিনহো নদীর ধারে নিয়ে যায় এবং সেখানে মাথায় পাথর মেরে এবং শরীরে কুড়ুল দিয়ে কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। শুধু তাই নয়, দুষ্কৃতীরা গোটা হত্যাকাণ্ডের ভিডিও তুলে রাখে। এটা ভাইরাল ভিডিওর সঙ্গেও মিলে যায়, যাতে থালিয়ার হত্যা ছবিতে তুলে রাখা দেখানো হয়েছে। সিএন-৭ এর রিপোর্টে জানানো হয়েছে, মৃত্যুর কয়েক ঘন্টা পরে থালিয়ার মৃতদেহ খুঁজে পাওয়া যায়, যাতে দেখা যায়, তার হাত বাঁধা এবং মাথা থেঁতলানো। প্রতিবেদনে থালিয়ার পোশাকের যে বর্ণনা দেওয়া হয়েছে, সেটাও ভাইরাল ভিডিওর সঙ্গে হুবহু মিলে যায়।
সিএন-৭-এর রিপোর্ট জানাচ্ছে, দুষ্কৃতীদের কাউকেই এখনও ধরা যায়নি, তবে রাজ্যের অপরাধ দমন বিভাগ জানিয়েছে, তদন্ত চলছে। তারা এই হত্যার পিছনে দুষ্কৃতী দলের ভিতরের ঝগড়ার বিষয়টাও খতিয়ে দেখছে।
আমরা নিহত মহিলার ফেসবুক অ্যাকাউন্টও দেখেছি, যার প্রোফাইল ছবি হিসাবে সেই ফোর্টালেজা ক্লাবের জার্সি পরা ছবিটাই রয়েছে, যা দেখে প্রমাণ হয় যে, তিনি ভাইরাল ভিডিওটিতে আক্রমণের শিকার হওয়া মহিলা। তাঁর ওই পোস্টে আমরা কিছু শোকবার্তাও দেখতে পাই এবং ফেমিনসিডিও নামে একটি ফেসবুক পেজ-ও আমাদের নজরে পড়ে, যেটি নিহত মহিলাদের উদ্দেশে উৎসর্গীকৃত এবং সেখানে ১ সেপ্টেম্বরের থালিয়ার হত্যাকাণ্ড বিষয়েও বলা হয়েছে।
বুম নিজে থেকে ঘটনাটির তথ্য যাচাই করে দেখতে পারেনি, তবে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছে যে, ঘটনাটি আদেও ভারতের নয়, যেমনটা ভাইরাল পোস্টে দাবি করা হচ্ছে এবং সেটি ব্রাজিলের একটি মর্মান্তিক ঘটনা।
এর আগেও বুম ব্রাজিলের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ক্লিপ তথ্য-যাচাই করে দেখিয়েছে যে, এই রোমহর্ষক হত্যাকাণ্ডগুলি ভারতের নয়।
আরও পড়ুন: ব্রাজিলের বিমানের জ্বালানি ভরার পুরনো ভিডিওকে ভারতের রাফাল বলা হল