ঝুলন্ত লাশের ছবি মিথ্যে করে লকডাউনের সঙ্গে জোড়া হল
বুম যাচাই করে দেখে ছবিটি ২০১৮ সালের জুন মাসের, মহারাষ্ট্রের ওয়ার্ধাতে এক ব্যক্তি, স্ত্রী ও তার কন্যার মর্মান্তিক আত্মহত্যার ঘটনা।
ঝুলন্ত ৩ জনের লাশের মর্মান্তিক একটি পুরনো ছবি বিভ্রান্তিকর দাবি সহ সোশাল মিডিয়ায় ছড়ানো হচ্ছে। ফেসবুক পোস্টে দাবি করা হচ্ছে লকডাউন চলাকালীন গুজরাতের সুরাটে পরিযায়ী শ্রমিকের সপরিবারে আত্মহত্যার ঘটনা এটি।
ভাইরাল হওয়া ছবিটিতে রাস্তার পাশে গাছে (সম্ভবত) গলায় দড়ি দিয়ে ৩ জনকে ঝুলতে দেখা যাচ্ছে। সাদা জামা নীল জিন্স প্যান্ট পরা এক ব্যক্তির সঙ্গে গোলাপি শাড়ি পরা এক মহিলা ও ফ্রক পরা একটি বাচ্চা মেয়ে রয়েছেন ওই ছবিটিতে। পাশেই পড়ে রয়েছে ব্যাগ, জলের বোতল। কয়েকজন ব্যক্তি ওই আত্মহননকারীদের দিকে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন।
ফেসবুকে ছবিটি শেয়ার করে হিন্দি বাংলা মিশিয়ে ক্যাপশন লেখা হয়েছে, "যদি তারা আরও দুইদিন বাঁচত তবে ৫এপ্রিল রাত ৯ টায় টর্চ প্রদীপ জ্বালিয়ে তাদের জীবন বেঁচে যেত… সুরাট থেকে একটি পরিবার যাওয়ার সময় অনাহারে রাস্তায় আত্মহত্যা করেছে"
বুম সিদ্ধান্ত নিয়েছে ছবিটি মর্মান্তিক হওয়ায় এই প্রতিবেদনের শুধুমাত্র তথ্য যাচাই অংশে অস্বচ্ছ ভাবে ব্যবহার করার।
ফেসবুক পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
অনেক ব্যবহারকারী ছবিটি ফেসবুকে শেয়ার করেছেন প্রতিকী হিসেবে। ছবিটি শেয়ার করে লকডাউন চলাকালীন অনাহারে মৃত্যুর সঙ্গে তুলনা করে প্রশাসন ও সরকারের ব্যর্থতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া পোস্ট গুলি দেখা যাবে এখানে।
মজদুর পরিবারের আত্মহননের ঘটনা বলে ছবিটি টুইটারেও শেয়ার করা হয়েছে। টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
কংগ্রেস নেত্রী এবং দিল্লি বিধানসভার প্রাক্তন বিধায়িকা অলকা লম্বাও এই ছবিটি টুইট করেছেন। টুইটে তিনি একটি হিন্দি শায়েরির সাথে কটাক্ষ করে লিখেছেন এই পরিবারের জন্য একটি প্রদীপ জ্বালানোর কথা। টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
আরও পড়ুন: মুম্বইয়ের ভিডিওকে বলা হল ইন্দোরে ডাক্তার হামলার জেরে পুলিশি প্রত্যাঘাত
তথ্য যাচাই
বুম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে জানতে পারে ছবিটি লকডাউনের সঙ্গে সম্পর্কিত গুজরাতের সুরাটে আত্মহত্যার কোনও ঘটনা নয়।
বুম কিওয়ার্ড সার্চে করে ২০১৮ সালের ১৩ জুন প্রকাশিত নাগপুর টুডের একটি প্রতিবেদনের হদিস পায়। প্রতিবেদনে বলা হয় মহারাষ্ট্রের ওয়ার্ধাতে এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে। সকালে রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় পথচারীদের নজরে আসে ঘটনাটি। মৃতরা হলেন অনিল বানখেড়ে, তাঁর স্ত্রী স্বাতী ও তাদের কন্যা আস্থা। পুলিশ তদন্ত করে পারিবারিক বিবাদ বা ঋণের জেরে এই ঘটনা কিনা খতিয়ে দেখছে।
মহারাষ্ট্রের বান্দ্রা ও গুজরাতের সুরাট সহ দেশের নানা প্রান্ত থেকে লকডাউনের প্রভাবে দিনমজুর ও পরিযায়ী শ্রমিকদের বিচ্ছিন্ন অসন্তোষের খবর এসেছে। এব্যাপারে বিস্তারিত পড়ুন এখানে।
নোট: এই প্রতিবেদনটি প্রকাশিত হওয়ার সময় ছবিটি ২০১৯ সালের ৬ মার্চ থেকে অনলাইনে আছে তথ্য যাচাই করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: না, এই মর্মান্তিক ছবিগুলি পাকিস্তানে সংখ্যালঘু পরিবারকে খুনের ঘটনা নয়