অটল বিহারী বাজপেয়ীর ভাইঝি কি সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের সমালোচনা করছেন?
বুম দেখে যন্তর-মন্তরের ওই ভাইরাল ভিডিওতে যে মহিলাকে দেখা যাচ্ছে, তার নাম আতিয়া আলভি।
চার মিনিটের এক ভিডিওতে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে জানুয়ারির শুরুতে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত এক জনসভায় বক্তৃতা দিতে দেখা যাচ্ছে এক মহিলাকে। ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে এই দাবি সহ যে, ওই মহিলা নাকি প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর ভাইঝি।
হিন্দিতে লেখা ক্যাপশনে বলা হয়েছে, "মাননীয় বাজপেয়ীজির ভাইঝি শেষ পর্যন্ত তার মৌনতা ভাঙ্গলেন। জানুন উনি কি বলেছেন।"
(হিন্দি ক্যাপশনটি ছিল এই রকম: "माननीय वाजपयी जी की भतीजी ने आखिरकार तोड़ी चुप्पी। जानिए क्या कहा")
ভিডিওটি এমন এক সময় এসেছে যখন নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ও জাতীয় নাগরিক পঞ্জির বিরুদ্ধে এক মাস ধরে দেশজুড়ে বিক্ষোভ চলছে।
ভিডিওটিতে মহিলাকে হিন্দিতে বলতে শোনা যাচ্ছে:
"ওরা (ইংরেজরা) অনেক খারাপ কাজ করেছিল। কিন্তু ওরা ছিল বিদেশি। প্রথমত, তারা আমদের কেউ ছিল না। এমনকি তারা এ দেশেরও কেউ ছিল না। এবং ওই ধরনের কাজ করতেই তারা অনেক দূর থেকে এসেছিল। তা সত্ত্বেও তাদের (ভারত সরকার আর ইংরেজদের) মধ্যে তফাৎ হল এই যে, ওরা (ইংরেজরা) শিক্ষিত ছিল। তারা এই রকম অশিক্ষিত ছিল না। অন্তত তারা নিজের দেশের লোকের সঙ্গে এমন কোনও কাজ করেনি যা ভারত সরকার তার নিজের মানুষের সঙ্গে করছে। ওরা কেন বুঝছে না যে আমরা ভারতীয়। ওদের ভারত সম্পর্কে কথা বলা উচিৎ। ওরা কংগ্রেসকে বলে, অন্যদের বলে, আমাদের বলে, আমরা কেন পাকিস্তান সম্পর্কে নীরব? আমরা কি পাগল যে পাকিস্তান সম্পর্কে কথা বলব? পাকিস্তান সম্পর্কে তো ওরাই সব কথা বলছে। পাকিস্তান ওদের মন দখল করে রেখেছে। পাকিস্তান ছাড়া তো ওরা কিছু ভাবতেই পারছে না। ওরা মুখ খুললেই পাকিস্তানের প্রসঙ্গ তোলে। ভারত সম্পর্কে কে কথা বলবে? পাকিস্তান কি তোমাদের নির্বাচিত করেছে? আমরা তোমাদের নির্বাচিত করেছি। এবং তার জন্য এখন আমরা অনুশোচনা করছি।"
বুমের হেল্পলাইনেও ভিডিওটি আসে। সেটির সত্যতা জানতে এক ব্যক্তি পাঠিয়েছিলেন ভিডিওটি।
ভিডিওটি ফেসবুকেও ভাইরাল হয়েছে।
তথ্য যাচাই
রিভার্স ইমেজ সার্চ করে বুম দেখে যে, এক সপ্তাহ আগে বেশ কয়েকটি ইউটিউবচ্যানেল ভিডিওটি আপলোড করে। ভিডিওটির সঙ্গে দেওয়া ক্যাপশনে মহিলার নাম আতিয়া আলভি বলে জানানো হয়।
তাছাড়া, ভিডিওটিতে যে বুম মাইক দেখা যাচ্ছে, তাতে এইচএনপি নিউজ-এর লোগো লাগানো আছে। দেখা যায়, ওই সংবাদ চ্যানেলটি ৩ জানুয়ারি, ২০২০ ভিডিওটি ইউটিউবে তাদের নিজস্ব চ্যানেলে আপলোড করেছিল।
নাজিয়া আলভি রহমান নামের এক ব্যক্তির পোস্টও আমাদের নজরে আসে। তাতে উনি দাবি করেন যে, ভিডিওতে যে মহিলাকে দেখা যাচ্ছে, উনি তার বোন আতিয়া আলভি।
নাজিয়া আলভি লেখেন, "ঠিক এই ভাবেই ভুয়ো খবর ছড়ায়। নীচের ক্যাপশনটি পড়ুন। আমি মনেপ্রাণে তেমনটাই চাই। কিন্তু ওটা সত্যি নয়। উনি আমার বোন আতিয়া আলভি সিদ্দিকি, একজন সাধারণ মানুষ।"
বুম ফেসবুকের মাধ্যমে আতিয়া আলভির সঙ্গে যোগাযোগ করে। উনি জানান যে, ভিডিওতে যে মহিলাকে দেখা যাচ্ছে, উনিই সেই ব্যক্তি। "আমি এক প্রতিবাদ সভায় যোগ দিতে মান্ডি হাউস গিয়েছিলাম। সেখানেই ইন্টারভিউটা নেওয়া হয়," আতিয়া বুমকে বলেন। তিনি আরও বলেন যে, উনি নিজেকে একজন অ্যাক্টিভিস্ট হিসেবে দেখেন না বরং একজন "সচেতন নাগরিক" বলেই গণ্য করেন নিজেকে।
অটল বিহারীর ভাইঝির নাম করুণা শুক্লা। তাঁর বয়স ৭০। এবং একেবারেই আতিয়া আলভি সিদ্দিকির মত দেখতে নন। ছত্তিসগড়ে বিধানসভা নির্বাচনের সময়, কংগ্রেস তাঁকে রাজনন্দগাঁও কেন্দ্র থেকে প্রার্থী করে। করুণা শুক্লা একজন সাংসদ এবং বিজেপির সদস্য ছিলেন। কিন্তু ২০১৪'র পর উনি বিজেপি ছাড়েন। রাজ্য ও অন্যান্য নানা বিষয় নিয়ে উনি বেশ সোচ্চার। এবং ২০১৯'র নির্বাচনে, অটল বিহারীর মৃত্যুকে বিজেপি ব্যবহার করে বলে অভিযোগ করেন।