
এটা কি ভারতে কোনও বাংলাদেশি উদ্বাস্তু পরিবারের ছবি? না আদেও তা নয়
এটি একটি রোহিঙ্গা পরিবারের ছবি, যারা নিরাপত্তা পেতে মায়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়।

বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে বসবাসকারী মায়ানমার থেকে উৎখাত হওয়া এক রোহিঙ্গা পরিবারের ছবি ভারতীয় সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার হচ্ছে এই বলে যে, এটি ভারতে বসবাসকারী বেআইনি বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের ছবি।
মালয়ালম ভাষায় ক্যাপশন দিয়ে ছবিটি ভাইরাল করা হয়েছে, যার অনুবাদ করলে দাঁড়ায়, "এরা বেআইনি ভাবে ভারতে অনুপ্রবেশকারী এক বাংলাদেশি পরিবার। এই লোকটির আরও ৩ জন স্ত্রী এবং ২৬টি সন্তান আছে। একটা পরিবারেরই সদস্য ৩১ জনl আমাদের কি এই অনুপ্রবেশকারীদের বসিয়ে খাওয়ানোর কথা? ওরা যেখান থেকে এসেছে, সেখানেই ওদের ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হোক।"
(মালায়লি ভাষায় মূল লেখা: 'ഭാരതത്തിലെ ഒരു ചെറിയ ബംഗ്ലാദേശി അനധികൃത കുടിയേറ്റ കുടുംബം. ഇവർക്കൊന്നും വേറെ തൊഴിൽ ഒന്നും ഇല്ലേ. 7 എണ്ണം ഇനി കുറഞ്ഞത് ഒരു 3 എണ്ണം കൂടി. ഇതിനെ ഒക്കെ നമ്മൾ തീറ്റി പൊറ്റണോ? എല്ലാത്തിനെയും എത്രയും പെട്ടെന്ന് തിരിച്ചു അയക്കണം. പിള്ളാരെ ഉണ്ടാക്കാൻ മാത്രം ഉള്ള ജന്മങ്ങൾ.')
গত বুধবার রাজ্যসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ হওয়ার পর থেকেই মালয়ালম ফেসবুক গোষ্ঠীগুলির মধ্যে এই একই ক্যাপশন সহ ছবিটি ভাইরাল হচ্ছে। এই বিলটি ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনকে সংশোধন করেছেl মতুন বিল অনুযায়ী পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানে ধর্মীয় নির্যাতনের ফলে এদেশে চলে আসা ৬টি সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর লোকেরাও বেআইনি অনুপ্রবেশকারীই গণ্য হবে, কিন্তু তাদের ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার প্রক্রিয়াটা ত্বরান্বিত করা হবে। ওই সব দেশ থেকে যে সব মুসলিম এদেশে এসেছে, তাদের বিলের আওতা থেকে বাদ রাখা হয়েছে, এবং সেটাকেই বৈষম্যমূলক বলে সমালোচনা করা হচ্ছে। বিলটি পাশ হওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে মুসলিম-বিরোধী এবং অনুপ্রবেশ-বিরোধী পোস্টের ছড়াছড়ি পড়েছে সোশাল মিডিয়ায়।
তথ্য যাচাই
আমরা ইয়ানডেক্স সার্চ ইঞ্জিন মারফত ছবিটির সুলুক-সন্ধান করে দেখেছি, ছবিটি প্রথম ২০১৭ সালে ছাপা হয় আল জাজিরা-র একটি সংবাদ প্রতিবেদনেl মাহমুদ হুসেনের করা ফিচারে তার ক্যাপশন: "রোহিঙ্গা: মায়ানমার থেকে বিতাড়িত, বাংলাদেশেও স্বাগত নয়।" ফিচারটিতে ৪০ বছর বয়সী আমির হোসেনের লড়াইয়ের কথা বিবৃত হয়েছে, যে মায়ানমার থেকে তাড়া খেয়ে তার ৭ সন্তান সহ বাংলাদেশে নিরাপত্তার খোঁজে আশ্রয় নিয়েছেl কিন্তু এখানেও তাদের অবস্থা ত্রিশঙ্কুর মতো, কেননা বাংলাদেশ তাদের শরণার্থী বলে স্বীকৃতি দিতে নারাজ। ফোটো-ফিচারটির কোথাও এমন কোনও খবর নেই যে লোকটির ৩ জন স্ত্রী এবং ২৬টি সন্তান রয়েছে, যেমনটা নাকি ফেসবুক পোস্টে প্রচার করা হচ্ছে।
ইতিপূর্বে ফ্যাক্ট ক্রেসেন্ডো নামের একটি ওয়েবসাইটও এই ভুয়ো খবরটির পর্দাফাঁস করেছে।
ফোটো-ফিচারটিতে আরও কয়েকটি পরিবারের কথা বিবৃত হয়েছে, যারা মায়ানমারে নির্যাতিত হয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে।
পুরো প্রতিবেদনটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
শিয়া সংবাদ-পোর্টাল শাফাকনা ডট কম-ও এই পরিবারেরই ছবি দিয়ে ফিচার করেছেl ফার্সি ভাষা থেকে অনুবাদে খবরটির শিরোনাম হলো: "রোহিঙ্গা মুসলমান: মায়ানমার থেকে বিতাড়িত হয়ে বাংলাদেশে।"
প্রতিবেদনটি পড়তে এখানে ক্লিক করুন।
সুতরাং এরা ভারতে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশি বলে যে প্রচার পোস্টগুলি চালাচ্ছে, তা ভুয়ো।
Updated On: 2020-02-27T15:45:41+05:30
Claim : ভারতে আসা অবৈধ বাংলাদেশি পরিবার
Claimed By : Facebook Post
Fact Check : False
Next Story