জনস হপকিন্স নিজে থেকেই জানালো কোভিড-১৯ ভাইরাল সতর্কতা তালিকা তাদের নয়
জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ১৫-১৮ টি করোনাভাইরাস দাবি ও সতর্কতা সংক্রান্ত তালিকাটি অস্বীকার করেছে।
কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ থেকে আগাম সাবধানতা এবং করোনাভাইরাসের ভৌতপ্রকৃতি নিয়ে কিছু বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণের দাবি সম্মিলিত ১৫-১৮ টি বিষয়ের একটি তালিকা সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। ভাইরাল হওয়া এই তালিকায় থাকা তথ্যগুলির সূত্র হিসেব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যদিও জনস হপকিন্সের তরফ থেকে এরকম কোন তালিকা প্রকাশ করা হয়নি বলে জানানো হয়েছে।
এই তালিকাটি সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে এবং পিডিএফ ফাইলের মাধ্যমেও সোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারীদের মধ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তালিকায় বলা হচ্ছে এই তথ্য গুলো ডঃ ইরিন কেন এর মাধ্যমে পাওয়া গেছে, এবং ডঃ কেনের মেয়ে জনস হপকিন্সের সংক্রামক রোগের সহকারী অধ্যাপক।
তালিকায় থাকা দাবিগুলির মধ্যে রয়েছে নোভেল করোনাভাইরাসের জৈবরাসায়নিক গঠন ও কাঠামো বিষয়ক তথ্য, তালিকায় আরও বলা হয়েছে, এই ভাইরাস প্রতিহত করার জন্য ত্বক ও হাতকে সব সময় আর্দ্র এবং সিক্ত রাখা দরকার এবং দাবি করা হয়েছে ত্বকের মধ্যে থাকা সুক্ষাতিসুক্ষ খাঁজের মধ্যে ভাইরাসটি আটকে থাকতে পারে, তাই ত্বকের আর্দ্রতা যত পুরু হবে, ততই ভাল।
ভাইরাল তালিকার একটি অংশে বলা হয়েছে: "ভাইরাসটি জীবন্ত কোন প্রাণি নয়, কিন্তু এতে একটি প্রোটিন অনু (ডিএনএ) থাকে, যার চারপাশে একটি লিপিডের (চর্বির) আস্তরণ রয়েছে। মানুষের চোখ, নাক ও মুখের মিউকাস স্তরের কোশ এই ভাইরাসকে শোষণ করে নেয় এবং তারপর ভাইরাসে আকস্মিক জিন-কাঠামো পরিবর্তিত হয়ে যায় এবং এটি আগ্রাসী ও পুনরুৎপাদক কোষে রূপান্তরিত হয়।"
"সুস্থ-সবল ত্বকের ভিতর এই ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে না।"
"অতি-বেগুনি রশ্মি এই ভাইরাসের প্রোটিনকে ভেঙে দেয়। যেমন মুখোশ বা মাস্ককে অতি-বেগুনি রশ্মি দিয়ে জীবাণুমুক্ত করে পুনর্ব্যবহার করা শ্রেষ্ঠ পদ্ধতি। তবে মনে রাখতে হবে, এই রশ্মি ত্বকের কোলাজেন (যা একটি প্রোটিন) নষ্ট করে দেয় এবং তার ফলে ত্বক কুঁচকে যেতে পারে এবং ত্বকের ক্যান্সারও দেখা দিতে পারেl"
এই পুরো তালিকাটা নীচে দেখা যাবে। নীচের পোস্টটি একটি উদাহরণ, যাতে প্রকাশিত তালিকাটি অনেক ফেসবুক ব্যবহারকারী ফেসবুকে শেয়ার করেছে।
Important information! It's long but informative. The following is forwarded from Dr. Irene Ken, whose daughter is an...
Posted by Valerie Manfredini on Saturday, 28 March 2020
An informative read! The following is forwarded from Dr. Irene Ken, whose daughter is an Asst. Professor in infectious...
Posted by Sanjay Patoliya on Saturday, 28 March 2020
হোয়াটসঅ্যাপে শেয়ার হওয়া এই তালিকাটিকে পিডিএফ রুপে দেখা যাবে এখানে।
করোনাভাইরাস এবং কোভিড-১৯ নিয়ে প্রথম থেকেই জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রকাশ করে আসছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগ থেকে বিশ্বজুড়ে কোভিড-১৯ এর সক্রিয় সংখ্যা, মৃত্যু, আরোগ্যলাভ ইত্যাদিকে পর্যবেক্ষণে রেখে একটি জনপ্রিয় এবং নির্ভরযোগ্য একটি পোর্টাল চালানো হচ্ছে। এই পোর্টাল থেকে কোভিড-১৯ এর নানান পরিসংখ্যা এবং গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে নানান তথ্য জানা যায়। তাছাড়া এখান থেকে কোভিড-১৯ প্রতিরোধের ঔষুধীয় এবং সামাজিক নীতিনির্দেশও নির্ণয় করে দেওয়া হচ্ছে।
আরও পড়ুন: কোভিড-১৯ মোকাবিলায় ভারত সরকারের স্তুতিতে এক মার্কিন সিইওর আঁকা ম্যাপ?
তথ্য যাচাই
তথ্যের অনুসন্ধানে বুম দেখতে পায়, প্রথমত গত ২৮ মার্চ জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় একটি টুইট মারফত ভাইরাল হওয়া বার্তাটির সত্যতা অস্বীকার করে।
We have seen rumors about #COVID19 circulating on social media that cite a Johns Hopkins immunologist and infectious disease expert. We do not know the origin of these rumors.
— Johns Hopkins University (@JohnsHopkins) March 28, 2020
Get credible information from Johns Hopkins University and Medicine experts: https://t.co/8yP58VAR0N
৪ এপ্রিল একটি ব্লগ পোস্টের মাধ্যমে জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয় জানায়: "এই বার্তাটির সঙ্গে জনস হপকিন্স-এর কোনও নির্ণায়ক সম্পর্ক নেইl এতে যে ২০টি বিষয় তালিকাভুক্ত, তার প্রথমটিই শুরু হয়েছে এইভাবে... এই ভাইরাস কোনও জ্যান্ত প্রাণ নয়, ইত্যাদি। কখনও এই বার্তাটিকে জনস হপকিন্সের একজন চিকিৎসক বা ইমিউনোলজিস্ট, বা কখনও ডাক্তার ইরিন কেন, যাঁর মেয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে সংক্রামক ব্যাধি বিষয়ক সহকারী অধ্যাপক, তাঁদের নামে চালানো হচ্ছে।" জনস হপকিন্স তাদের ব্লগে সাধারন মানুষদের আরও অনুরোধ করে বলে যে কোভিড-১৯ বা করোনাভাইরাসে সংক্রান্ত তথ্য বা খবর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO), বা সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড ইনফেকশন কিংবা কোনও নির্ভরযোগ্য সংবাদসংস্থার কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করার জন্য।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তথ্য-যাচাইকারী সংস্থা স্নোপস থেকেও এই ভুয়ো বার্তাটির তথ্য যাচাই করা হয়েছে, তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জনস হপকিন্সের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম এতে মিথ্যে জড়ানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এক মুখপাত্র স্নোপস-কে জানায়, "জনস হপকিন্স মেডিসিন্স এই বার্তাটি তৈরী করেনি। আমরা দেখেছি, আমাদের প্রতিষ্ঠানের বিশেষজ্ঞদের নাম জড়িয়ে কোভিড-১৯ সম্পর্কে নানা গুজব সোশাল মিডিয়ায় ছড়ানো হচ্ছে। অনেকে আমাদের কাছে এ ব্যাপারে জানতেও চাইছেন। কিন্তু এই সব গুজবের উৎস সম্পর্কে আমাদের কিছু জানা নেই এবং এগুলির কোনও বিশ্বাসযোগ্যতাও নেই।"
আরও পড়ুন: মিথ্যে: করোনাভাইরাস তৈরি করার জন্য গ্রেপ্তার হলেন হার্ভার্ডের অধ্যাপক