বিহারের AIMIM বিধায়কের শপথ বিতর্ক নিয়ে ছড়াল বিভ্রান্তিকর পোস্ট
বিহারের এআইএমআইএম বিধায়ক আখতারুল ইমান বিধানসভায় শপথের বয়ানের উর্দু অনুবাদে 'হিন্দুস্তান' লেখা নিয়ে আপত্তি তোলেন।
বিহার বিধানসভায় নব নির্বাচিত বিধায়কদের শপথ গ্রহণের অধিবেশনে অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম) বিধায়ক আখতারুল ইমানের শপথ বাক্যের উর্দু বয়ানে 'ভারত'-এর বদলে 'হিন্দুস্তান' লেখার বিষয়ে আপত্তি তোলার ঘটনা সোশাল মিডিয়া ও গণমাধ্যমের একাংশে বিভ্রান্তিকর দাবি সহ শেয়ার করা হচ্ছে।
বিহার বিধানসভা ভোটে তেজস্বী যাদবের নেতৃত্বে আরজেডি একক সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে জিতলেও,নতুন সরকার গঠন করেছে জেডিইউ ও বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট। এই নিয়ে বিহারে ৭ বার মুখ্যমন্ত্রীর কুর্শিতে বসলেন নীতীশ কুমার। প্রথমবার ২৮ টি আসনে প্রার্থী দিয়ে ৫ টি আসনে জয়লাভ করে এআইএমআইএম। ২৩ নভেম্বর ২০২০ প্রটেম স্পিকার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয়মন্ত্রী জিতন রাম মাঁঝির সভাপতিত্বে শপথ নেন বিধায়করা।
গ্রাফিক পোস্টটিতে বাংলায় লেখা হয়েছে, "'হিন্দুস্তানের নামে শপথ নেব না', বিধানসভায় গিয়ে নিজের রুপ দেখাল AIMIM বিধায়ক আখতারুল ইমান! হিন্দুস্তান বাসী দেখতে থাকুন।" ফেসবুক পোস্টটিতে ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, "প্রিয় হিন্দুস্তান বাসী, ওটা ওদের সাহস নয়, বলতে পারেন দুঃসাহস!"
তথ্য যাচাই
বুম বিহার বিধানসভার ওয়েবাসাইটের ২৩ নভেম্বর ২০২০ কার্যবিবরণীতে থাকা অধ্যক্ষ ও এআইএমআইএম বিধায়ক আখতারুল ইমানের কথপকথনের হিন্দি বয়ান খুঁজে পেয়েছে। নীচে অনুবাদ দেওয়া হল।
আখতারুল ইমান: অধ্যক্ষ মহাদয়, সবার প্রথমে আমি একটি সংশোধনের কথা বলতে চাইছি, আমাকে শপথের জন্য উর্দুতে অনুবাদের যে কপি দেওয়া হয়েছে তাতে ভারতের জায়গায় হিন্দুস্তানের আইন লেখা হয়েছে। সংবিধানে ভারতের লোক, ভারতের সংবিধান লেখা আছে। এজন্য যদি আমাকে অনুমতি দেওয়া হয় তাহলে ভারতের নামে, সংবিধানের নামে উর্দুতে শপথ নিতে চাইছি।
অধ্যক্ষ (এখানে প্রটেম স্পিকার): সচিব মহদয়, এতে কি আছে। ভারতের সংবিধান তো আগে থেকেই চলছে। আজকের কথা নয় না। সবাই এই নামেই শপথ নেয়।
আখতারুল ইমান: সংবিধানে আমরা ভারতের লোক, ভারতের সংবিধান পড়ে থাকি। হিন্দি আর মৈথিলিতে ভারত লেখা রয়েছে। সবাই ওই নামেই শপথ নেয়।
দেখুন আখতারুলের শপথ গ্রহণের মূহূর্ত।
আখতারুল গণমাধ্যমকে বলেন, "যে কোনও ভাষাতেই সংবিধানের প্রস্তাবনায় ভারত কথাটি ব্যবহার করা হয়। যেহেতু সংবিধানের নামে আমরা শপথ নিচ্ছি আমি অধ্যক্ষের কাছে অনুমতি নিই ভারত শব্দ ব্যবহারের জন্য। আমি একটা বিষয় স্পষ্ট করতে চাই হিন্দুস্তান শব্দে আমার কোনও আপত্তি নেই। পড়ুন দ্য হিন্দু ও হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদন।
শপথের ভাষা ও সংবিধান
বুম সংবিধানের তৃতীয় তফশিলের শপথ বাক্য পাঠের সাংবিধানিক বয়ান খুঁজে দেখেছে সেখানে বর্ণনা করা আছে সংসদ, মন্ত্রী, ও বিধায়ক নির্বাচনে অংশগ্রহন ও নির্বাচিত হলে শপথের বয়ান।কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল, হাই কোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদেরও শপথের বয়ান পাওয়া যাবে সংবিধানের এই অংশে। এই তৃতীয় তফশিলের ৭ এর বি তে বিধানসভার সদস্যের শপথের বয়ান দেওয়া রয়েছে।
ঈশ্বরের নামে, একক শপথে, অথবা সংবিধানে মেনে ও বিশ্বাস রেখে শপথ নেন জনপ্রতিনিধি।
আবার সংবিধানের ১ (১) নম্বর ধারার প্রথম বাক্যে রয়েছে "ইন্ডিয়া, যা হল ভারত, কয়েকটি যুক্তরাষ্ট্র" এই বিষয়টি।
১৯৬৯ সালের সংশোধিত শপথ আইন দেখুন এখানে।
শপথ গ্রহণের বয়ান ইংরেজিতে ছাড়াও পাঠ করা যায় রাজ্যের আঞ্চলিক ভাষাতে। বিহারের ক্ষেত্রে হিন্দি, মৈথিলি ও সাঁওতালি ভাষায় শপথ নেওয়া যেতে পারে। লোকসভার ক্ষেত্রে ইংরেজি ছাড়া অষ্টম তফশিলের অন্তর্গত ২২ টি ভাষাতে শপথ নেওয়া য়ায়। ২০১৯ সালের লোকসভা সদস্যদের শপথ গ্রহণ বৈচিত্রপূর্ণ হয়ে ওঠে। ২০১৮ সালে লোকসভায় তৎকালীন অধ্যক্ষা সুমিত্রা মহাজন সংসদের সদস্যদের ওই ২২ টি ভাষাতেই বক্তব্য পেশের বিষয়টি সম্প্রসারণ করেন। আগে শুধুমাত্র লোকসভার ক্ষেত্রে ১৭ টি ভাষায় অনুবাদ উপলব্ধ ছিল।
অতীত বিতর্ক
১৯৮৯ সালে দেবী লাল প্রধানমন্ত্রী ভি পি সিংহের ক্যাবিনেটে শপথ নেওয়ার সময় "ডেপুটি প্রধানমন্ত্রী" উল্লেখ করে বিতর্কে জড়ান পরে তা শুধরে দেন রাষ্ট্রপতি আর বেঙ্কটরামন।
২০১২ সালে শপথ নেওয়ার সংবিধানিক নিয়ম লঙ্ঘন করে কক্ষ ত্যাগ করায় আবার মন্ত্রী হিসেবে পুনরায় শপথ নিতে হয় সমাজবাদী দলের নেতা আজম খানকে।
২০১৯ সালে নিজের নামের শেষে দীক্ষা গুরুন নাম ব্যবহার করে বিতর্কে জড়ান বিজেপি নেত্রী সাধবী প্রজ্ঞা ঠাকুর। ২০১৯ সালে উদ্ধব ঠাকরে শপথের সময় ছত্রপতি শিবাজি ও তাঁর বাবা মায়ের নাম নিলে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল।