ভিন্ন-ধর্মে দম্পতির বিয়ের কার্ডের সঙ্গে ভাইরাল খুনের সম্পর্কহীন ছবি
বুম দেখে ২০১৮ সালের একটি 'অনার কিলিং'-এর ঘটনাকে এক দম্পতির ভিন্ন-ধর্মের বিয়ের কার্ডের সঙ্গে মিথ্যে করে জড়ান হচ্ছে।
![ভিন্ন-ধর্মে দম্পতির বিয়ের কার্ডের সঙ্গে ভাইরাল খুনের সম্পর্কহীন ছবি ভিন্ন-ধর্মে দম্পতির বিয়ের কার্ডের সঙ্গে ভাইরাল খুনের সম্পর্কহীন ছবি](https://bangla.boomlive.in/h-upload/2020/09/14/929857-murder-victims-photo-viral-with-unrelated-wedding-card-of-inter-faith-couple.webp)
এক মুসলমান বর ও হিন্দু কনের বিয়ের নিমন্ত্রণ পত্র একটি সম্পর্কহীন ছবির সঙ্গে শেয়ার করা হচ্ছে। ছবিটি হল এক মৃত মহিলার, যাঁকে তাঁর পরিবারের সদস্যরাই খুন করেছিল। দু'টিকে এক করে শেয়ার করা হচ্ছে এই মিথ্যে দাবি সমেত যে, মুসলমান পুরুষদের বিয়ে করলে হিন্দু মহিলাদের এমনই পরিণতি হয়।
পোস্টটিতে দু'টি ফটো আছে। একটি হল সমীর খান ও প্রেমা ব্যাস-এর বিয়ের আমন্ত্রণ পত্র, যাতে প্রেমার নতুন নাম 'আয়েশা খান' ব্র্যাকেটের মধ্যে দেওয়া আছে। আর দ্বিতীয়টি হল এক মহিলার মৃতদেহের ছবি। ভাইরাল পোস্টগুলিতে ওই দুটি ছবির মধ্যে একটা সম্পর্ক স্থাপন করে দাবি করা হচ্ছে এটি একটি 'প্রেম জেহাদ'-এর ঘটনা, কারণ মেয়েটি হিন্দু। ক্যাপশনে বলা হয়েছে, "প্রেম জেহাদের শেষ গন্তব্য: মৃত্যু"।
(হিন্দিতে লেখা আসল ক্যাপশন: लव जिहाद का आखिरी पड़ाव...."मौत")
আর্কাইভ দেখতে এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম দেখে ছবি দু'টি সম্পর্কহীন। মৃতদেহটি এক মহিলার যাঁকে ২০১৮ সালে পশ্চিমবঙ্গে এক অনার কিলিংয়ে তাঁর পরিবারের সদস্যরা তাঁকে খুন করে। আর বিয়ের আমন্ত্রণ পত্রটি হল ২০১৯-এর এবং কার্ডে মহিলার যে নাম দেওয়া আছে, খুন-হওয়া মহিলার নাম তা নয়।
মৃত মহিলার ছবিটি নিয়ে সার্চ করলে, ২০১৮'র একটি ঘটনার কিছু রিপোর্ট নজরে আসে। তা থেকে জানা যায় এক মুসলমান মহিলা, জাহানা খাতুন বলে যাঁকে শনাক্ত করা হয়, তাঁকে একটি খোলা মাঠে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। ওই সংবাদ প্রতিবেদনগুলি থেকে জানা যায় যে, পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ ওই মহিলার বাবা ও ভাইকে গ্রেপ্তার করে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, একটি হিন্দু পুরুষের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক থাকায়, তারা মেয়েটিকে খুন করে।
৩১ অগস্ট ২০১৮ তারিখে, পশ্চিমরঙ্গের বর্ধমান জেলার নবগ্রামে দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ের কাছে একটি ঝোপ থেকে গোলাপী সালওয়ার-কুর্তা-পরা এক অল্পবয়সী মেয়ের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। ভারী পাথরের আঘাতে তাঁর মুখ বিকৃত করে দেওয়া হয়েছিল। ডিএনএ ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ওই ঘটনার খবর প্রকাশ করে। ওই সংবাদ প্রতিবেদনে মৃতদেহের যে ছবিটি ভাইরাল হয়েছে সেটিই ব্যবহার করা হয়েছিল।
ঘটনাটির সংবাদ প্রতিবেদন।
রিপোর্টে আরও বলা হয় যে, মুসলমান মেয়েটিকে জাহানা খাতুন বলে সনাক্ত করা হয়। অভিযোগ, কার্তার সিং নামের এক হিন্দু পুরুষের সঙ্গে তাঁর ভালবাসার সম্পর্ক গড়ে ওঠায়, তাঁর বাবা মহম্মদ মোস্তাক ও তার ভাই মহম্মদ জাহিদ মেয়েটিকে খুন করে।
পিটিআই-এর একটি রিপোর্টে একজন পুলিশ আধিকারিককে উদ্ধৃত করে বলা হয়, বাবা ও ভাই তাদের অপরাধ স্বীকার করেছে। মেয়েটিকে বিহারের জামালপুরে নিয়ে যাওয়ার সময়, তারা চলন্ত গাড়িতে মেয়েটির গলায় দড়ির ফাঁস পরিয়ে তাকে খুন করে। তারপর বর্ধমান জেলার কাছে পাথর দিয়ে তার মুখ বিকৃত করে দেহটা চাষের খেতে ফেলে দেয়।
আমরা ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ তারিখের এবিপি আনন্দ'র একটি ভিডিও রিপোর্টও দেখতে পাই। সেটির ০.৪৩ মিনিট সময়ে গোলাপী পোশাকে ওই একই মৃতদেহের ছবি দেখা যায়। দেখা যায় পুলিশ ইন্সপেক্টররা সেটিকে ঘিরে আছেন, ঠিক যেমনটি ভাইরাল ছবিতে রয়েছে।
এবিপি আনন্দ'র ভিডিও রিপোর্ট।
দেখার জন্য ক্লিক করুন এখানে।
যে মেয়েটি খুন হয় তার নাম জাহানা খাতুন আর যে হিন্দু ব্যক্তিটির সঙ্গে তার সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল তার নাম কার্তার সিংহ। বিয়ের নিমন্ত্রণ পত্রে দেওয়া সমীর খান ও প্রেমা ব্যাস (আয়েশা খান) নাম দু'টির সঙ্গে সেগুলি মেলে না।
তাছাড়া বিয়ের কার্ডে তারিখটা অক্টোবর ২০১৯-এর। কিন্তু মেয়েটির খুন হওয়ার ঘটনাটি ঘটে অগস্ট ২০১৮'য়, প্রায় এক বছর আগে। এর থেকে বোঝা যায় যে ছবি দু'টির মধ্যে কোনও সম্পর্ক নেই।
বিয়ের কার্ডটির রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে দেখা যায় সেটি অক্টোবর ২০১৯ থেকে অনলাইনে রয়েছে। অর্থাৎ অগস্ট ২০১৮'য় খুনের ঘটনাটি ঘটে যাওয়ার এক বছর পর সেটি অনলাইনে আসে।
আর্কাইভ দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
বুম বিয়ের আমন্ত্রণ পত্রটি স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারে নি। তবে এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে যে, অগস্ট ২০১৮'র খুনের ঘটনার ছবিটির সঙ্গে আমন্ত্রণ পত্রটির কোনও সম্পর্ক নেই।
বুম আগেও প্রেম জেহাদের ভুয়ো খবর খণ্ডন করেছে। সেটিতে ভিন্ন ধর্মের এক দম্পতির ছবির সঙ্গে পুলিশ ঘিরে আছে এমন একটি মৃতদেহের ছবি শেয়ার করা হয় এই মিথ্যে দাবি করে যে, ওই মহিলার বিয়ের পর তাঁর মুসমান স্বামী তাঁকে খুন করে।
আরও পড়ুন: সম্বিত পাত্রর মিথ্যে দাবি জেলের মধ্যে জঙ্গি আজমল কাসভ বিরিয়ানি খেত