না, ভারত ও ভারতীয়দের সম্পর্কে এই উক্তি করেননি বিল গেটস
বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশনের এক মুখপাত্র ভাইরাল বার্তাটি মিথ্যে বলে উড়িয়ে দিয়েছেন।
মাইক্রোসফট কর্পোরেশনের সহপ্রতিষ্ঠাতার নামে একটি পুরনো ও মিথ্যে ইন্টারনেটের বার্তা আবার হোয়াটসঅ্যাপে চালানো হচ্ছে। সেটির শিরোনাম: 'ভারতীয়দের সম্পর্কে বিল গেটস-এর মতামত পড়ুন'।
বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা ফাউন্ডেশনের এক মুখপাত্রর কাছ থেকে বুম নিশ্চিতভাবে জানতে পারে যে, ভাইরাল-হওয়া বার্তাটি বিল গেটসের নয়।
একটি ই-মেল বার্তায় মুখপাত্রটি বলেন, "ভারতের অর্থনীতি ও সংস্কৃতি সম্পর্কে ওই মন্তব্যের সঙ্গে মি. বিল গেটস-এর কোনও সম্পর্ক নেই। এটিকে মি. বিল গেটস-এর উক্তি বলাটা সম্পূর্ণ ভুল। এটি একটা মিথ্যে দাবি।"
ভারত কেন একটি সুপারপাওয়ার বা মহাশক্তি হতে পারেনি, তা ব্যাখ্যা করা হয়েছে ওই বার্তায়। বলা হয়েছে, নানা ধরনের আচার অনুষ্ঠানে টাকা খরচ না করে, সেই টাকা দিয়ে অসহায়দের প্রয়োজনীয় সাহায্য দেওয়া উচিৎ।
যাচাই করে দেখার জন্য, নীচের বার্তাটি বুমের হোয়াটসঅ্যাপ হেল্পলাইন নম্বরে (৭৭০০৯০৬১১১) আসে।
বিল গেটসের বলে চালানো হচ্ছে যে বার্তাটি, সেটিতে বলা হয়েছে:
"ভারত সম্পর্কে বিল গেটস যে ধারণা পোষণ করেন, তা পড়ে দেখুন। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী দেশ ভারত। 'তার মন্দির, চার্চ আর মসজিদে যে সম্পদ আছে, তা বিক্রি করলেই ভারত একটি সুপারপাওয়ার হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হল, লোকে বুঝতে পারে না যে তারা নিজেদের দেশে ক্রীতদাসের মত আছে। তাই ভগবান আর নিজেদের দুর্ভাগ্যকে তারা দায়ী করে এবং কৃষকরা আত্মহত্যা করে। তাদের দুর্দশার জন্য যারা দায়ী, ওই দেশে গরিব মানুষরা তাদের চিনতে পারে না। তাদের বেকারত্বের কারণ যারা, ওখানকার তরুণরা তাদের শনাক্ত করতে পারে না। ভগবানকে চুল আর টাকা দিলে কি সত্যিই পুন্য অর্জন করা যায়?? কোনও দেবীকে নারকেল আর কাপড় নিবেদন করলেই কি সমৃদ্ধি আসে। বাস্তবে...
"যে নারকেল আর চুল অর্পন করা হয়, তা বিরাট ব্যবসার উপাদান হয়ে দাঁড়ায়। সোনা/রূপো দান করে কী অর্জন করা সম্ভব? আসলে তো সেগুলি নিলামে বেচে দেওয়া হয়। ওই ধরনের দানধ্যান কোন কাজে আসে...
"কৃষকদের বীজ দান করার চেষ্টা করুন। একটি দুস্থ মেয়ের বিয়েতে সাহায্য করুন। একটি অনাথ শিশুকে দত্তক নেওয়ার চেষ্টা করুন। একজন ক্ষুধার্তকে চেষ্টা করুন খাওয়ানর। চেষ্টা করুন একজন প্রতিবন্ধীকে সাহায্য করার। একটি স্কুলের লাইব্রেরিতে দান করার চেষ্টা করুন। চেষ্টা করুন বৃদ্ধাবাসে দান করার। গ্রামের স্কুলে মাথার ওপর ছাদ নেই, অথচ মন্দিরের মেঝে মারবেলে বাঁধানো। একটি স্কুলে ২০০ টাকা দান করার ক্ষেত্রে অভিভাবকরা হাজারও প্রশ্ন করেন। কিন্তু বিনা প্রশ্নে মন্দিরে হাজার হাজার টাকা দান করে থাকেন। এমন এক দেশ কি প্রকৃত অর্থে মহাশক্তি হয়ে উঠতে পারবে কোনও দিন? আপনারা নিজেদের এক কৃষিপ্রধান দেশ বলে দাবি করেন। অথচ, প্রায় প্রতিটি রাজ্যে আপনাদের কৃষকরা আত্মহত্যা করেন। কেবল পড়বেন না; ফরওয়ার্ডও করুন...।"
এই বার্তাটি ২০১৮ থেকে ভাইরাল হয়ে রয়েছে। কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়া দত্ত সেটি ২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে পোস্ট করেন।
আরও পড়ুন: পাঞ্জাব পুলিশের এক নারীকে প্রহার ছড়াল উত্তরপ্রদেশে দলিত নির্যাতন বলে
তথ্য যাচাই
ভাইরাল বার্তাটি থেকে কিছু শব্দবন্ধ বেছে নিয়ে, বুম কি-ওয়ার্ড সার্চ চালায়। তার ফলে আমরা 'এমআইএসসিডাব্লিউ' (আর্কাইভ দেখুন এখানে) নামের একটি ওয়েবসাইট দেখতে পাই। সেটি ওই একই বার্তা ১৪ জানুযারি ২০১৮-য় প্রকাশ করেছিল। ওই লেখাটি সম্ভবত ভাইরাল বার্তাটির প্রথম সংস্করণ। ওয়েবসাইটটিতে কোনও ভূমিকা লেখা নেই, বা সেটির পরিচয় দিয়ে কোনও 'অ্যাবাউট আস' বিভাগও ছিল না। ওয়েবসাইটটির বাঁদিকের কোণে একটি কথাই লেখা ছিল। তা হল: "খবরের ভবিষ্যৎ একটি লেখা নয়।" সেটির কী মানে, তা স্পষ্ট নয়।
লেখাটির সঙ্গে বিল গেটসের যে ছবি দেওয়া হয়েছে, সেটি ২০১০ সালে তোলা হয়। ২০১৩ সালে, 'ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল'-এর একটি লেখায় ছবিটি ব্যবহার করা হয়। সেটির ক্যাপশনে বলা হয়: "মে ২০১০-এ, ভারতের পোলিও প্রোগ্রাম সম্পর্কে কথা বলার জন্য, বিল গেটস সে দেশের গুলেরিয়া গ্রামের কৃষকদের সঙ্গে কথা বলেন। দু'বছর হল, ভারত পোলিও-মুক্ত হয়েছে।"
তাছাড়া, ভাইরাল বার্তাটির বিষয়বস্তুর সঙ্গে মেলে, ধনপতি বিল গেটসের করা সে রকম কোনও উক্তির হদিস পাওয়া যায়নি।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানে বিরোধীদের সমাবেশে ভারতীয় পতাকার ছবিটি ভুয়ো