বিজেপির ভারতী ঘোষ দরিদ্র বাঙালিদের রেশন দেওয়া নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি
বুম যাচাই করে দেখেছে যে, বিজেপি নেত্রী ভারতী ঘোষের ভাইরাল হওয়া রেশন বন্টন সংক্রান্ত মন্তব্যটি ভুয়ো।
সোশাল মিডিয়াতে প্রাক্তন আইপিএস আধিকারিক ও বিজেপি নেত্রী ভারতী ঘোষের একটি মিথ্যে মন্তব্য সহ গ্রাফিক পোস্টার শেয়ার করা হচ্ছে। ফেসবুক পোস্টের ওই পোস্টারটিতে দাবি করা হয়েছে, ভারতী ঘোষ নাকি বলেছেন বাঙালিদের মধ্যে হিংসা বেশি হওয়ায় চাল-গম দেওয়া অর্থহীন। তিনি নাকি আরও বলেছেন, দরিদ্ররা খেতে না পেলে তাঁর কিছু এসে যায় না।
যে ছবিটি ফেসবুক পোস্টে শেয়ার করা হয়েছে সেখানে শ্রীমতী ভারতী ঘোষকে কালো কোট পরিহিতা অবস্থায় দেখা যাচ্ছে। তাঁর গলায় সাদা কালো স্কার্ফ এবং তার উপরে গেরুয়া-সবুজ উত্তরীয় দেখা যাচ্ছে। ছবিটির ডান পাশে সাদা রঙের জামার হাতার (সম্ভবত) উপর জলপাই রঙের পোশাকের অংশ দেখা যাচ্ছে।
এই পোস্টারটির পিছনে বিজেপির দলীয় প্রতীক পদ্মফুল দেখা যাচ্ছে। পোস্টারটিতে বাংলাতে লেখা হয়েছে, ''বাংলার মানুষের মধ্যে হিংসার বীজ সবথেকে বেশি। তাই বাংলাকে চাল গম দেওয়া অর্থহীন। ভারতী ঘোষ।'' পরে লেখা হয়েছে, ''তীর্যক বাক্য গরিবরা খেতে না পেলে আমার কিছু যায় আসে না।''
পোস্টারটির ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ''বিজেপির নেত্রী ভারতী ঘোষ বিস্ফোরক মন্তব্য করে বসলেন। গরীবরা খেতে না পেলে আমার যায় আসে না। এছাড়াও বাংলার মানুষ কে বললেন হিংসা ছাড়া কিছুই বোঝে না।''
তথ্য যাচাই
বুম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখেছে যে, এই ছবিটি ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের। তিনি গত বছর ওই সময় দিল্লিতে গিয়ে বিজেপিত যোগদান করেন।
বিজেপিতে যোগদানের ছবিটি ২০১৯ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি দ্য স্টেটসম্যান-এ প্রকাশিত হয়েছিল।
মূল ছবিটিতে ভারতী ঘোষের পাশে মুকুল রায়, কেন্দ্রীয়মন্ত্রী রবিশংকর প্রসাদ এবং বিজেপির সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয় রয়েছেন। কৈলাস বিজয়বর্গীয় সাদা পোশাকের উপর অলিভ রঙের কোট পরে রয়েছেন।
পোস্টারটিতে যে বিজেপির দলীয় প্রতীক পদ্মফুলটি দেখা যাচ্ছে সেটি সম্পাদনা করে বসানো হয়েছে। মূল ছবিতে কৈলাশ বিজয়বর্গী ও ভারতী ঘোষের মাঝে কোনও ভাইরাল ছবির মতো রঙের কোনও দলীয় প্রতীক ছিল না। মূল ছবিতে প্রতীকটি সাদা রঙের।
তাঁর বিজেপি যোগদানের ভিডিওটি সংবাদ সংস্থা এএনআই ৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ইউটিউবে আপলোড করে। ভিডিওটি নীচে দেখুন।
তিনি ভিডিওটিতে বলেছিলেন যে, পশ্চিমবঙ্গে আবার গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে হবে।
বুম গরীবরা খেতে না পেলে তাঁর কিছু যায় আসেনা, এই ধরনের ভারতী ঘোষের কোনও মন্তব্য খুঁজে পায়নি। সোশাল মিডিয়াতেও ভারতী ঘোষ এই ধরণের মন্তব্য করেননি।
২০১৯ সালে ভারতী ঘোষ ঘাটাল অঞ্চলে লোকসভা ভোটের প্রচারের সময় উত্তরপ্রদেশ থেকে ১০০০ ছেলে নিয়ে এসে তৃণমূল কর্মীদের প্রহার করা হবে বলে বিতর্কে জড়ান। রাজ্য সরকার আইপিএস ভারতী ঘোষকে পশ্চিম মেদিনীপুরের এসপির পদ থেকে বদলি করে রাজ্য সশস্ত্র পুলিশের তিন নম্বর ব্যাটেলিয়নে কমান্ড্যান্ড করে। এরপর চাকরি থেকে স্বেচ্ছা অবসর নিয়ে নিয়ে সক্রিয় রাজনীতিতে যোগদান করেন তিনি।
বিজেপি নেতাদের ভুয়ো মন্তব্য
বুম হুগলির লোকসভা সাংসদ বিজেপি নেত্রী লকেট চট্টোপাধ্যায় ও বিজেপির সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয়-এর সাম্প্রতিক সময়ে একই ধরণের ভুয়ো মন্তব্য খণ্ডন করেছে। এই পর্যায়ের ভুয়ো মন্থব্যের তালিকায় নতুন সংযোজন হলেন ভারতী ঘোষ।
তিনটি ভুয়ো মন্তব্যের পোস্টারেই কিছুটা সাদৃশ্য রয়েছে। প্রতেকটিতেই ব্যবহার করা হয়েছে পুরনো ছবি। নীচে পড়ুন বুমের তথ্য-যাচাই দুটি।
আরও পড়ুন: না, গ্রাম্য দুস্থ্যদের নিয়ে কুমন্তব্য করেননি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়
আরও পড়ুন: বিজেপি নেতা কৈলাস বিজয়বর্গীয় বাঙালি সম্পর্কে অবমাননাকর মন্তব্য করেননি