না, পালঘর গণপিটুনির ঘটনায় এনসিপি নেতা সঞ্জয় শিন্ডে অভিযুক্ত ছিলেন না
বুমকে মহারাষ্ট্রের সিআইডি জানায়—এনসিপি নেতা সঞ্জয় শিন্ডে ওই ঘটনায় জড়িত ছিলেন না, অভিযুক্তদের তালিকাতে তাঁর নাম নেই।
ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টির (এনসিপি) নেতা সঞ্জয় শিন্ডে এক অদ্ভূত দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই সোশাল মিডিয়ায় মিথ্যে দাবি করা হয় যে, পালঘর গণপিটুনি মামলায় তিনি একজন অভিযুক্ত ছিলেন। শিন্ডের গাড়িতে আগুন লেগে গেলে, তিনি মারা যান।
মহারাষ্ট্রের ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের অ্যাডিশনাল ডিরেক্টর জেনারেল (এডজি) অতুল চন্দ্র কুলকার্নির সঙ্গে বুম কথা বলে। তিনি বলেন, "পালঘর ঘটনার তদন্তে শিন্ডে অভিযুক্ত ছিলেন না।"
এনসিপি পার্টির নেতা হিসেবে উনি একটি তালুকের দায়িত্বে ছিলেন। ১৩ অক্টোবর সম্ভবত শর্ট সার্কিটের কারণে তাঁর গাড়িতে আগুন লেগে যায়। কিন্তু উনি গাড়ি থেকে বেরতে পারেননি এবং পুড়ে মারা যান বলেই জানা গেছে। নাসিকের পিম্পলগাঁও টোল প্লাজার কাছে ওই ঘটনা ঘটে। এবং আশেপাশে দাঁড়িয়ে-থাকা লোকজন সেই অঘটনের ছবি তোলেন।
ভারতের দক্ষিণপন্থীরা ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিথ্যে প্রচার করছেন। তাঁরা দাবি করছেন যে, পালঘরের গণপিটুনির ঘটনায় যুক্ত থাকার জন্য সিন্ধেকে ফল ভোগ করতে হল।
১৬ এপ্রিল ২০২০ তারিখে, একটি গণপিটুনির ঘটনায় তিনজন মারা যান। একটি গাড়িতে করে তাঁরা যখন পালঘর জেলার গাঢ়চিনচালে গ্রামের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন ওই ঘটনা ঘটে। ওই গণপ্রহারে দু'জন সাধু ও তাঁদের গাড়ি চালক মারা যান। ঘটনাটি সারা দেশের সংবাদ মাধ্যমের শিরোনামে আসে। তার মধ্যে কিছু কিছু খবরের চ্যানেল ও সোশাল মিডিয়ায় ঘটনাটির ওপর সাম্প্রদায়িক রঙ চড়ানর চেষ্টা চলে। দেশজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠলে, পালঘর পুলিশের বেশ কিছু কর্মীকে সাসপেন্ড করা হয় এবং তদন্তের ভার দেওয়া হয় মহারাষ্ট্রের সিআইডিকে। সেই সময়ে বুম তার রিপোর্টে বলে, সোশাল মিডিয়ায় মিথ্যে রটনা করা হয় যে ওই এলাকায় এক দল ছেলে ধরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। এবং ওই রটনাই ঘটনাটির পেছনে কাজ করে।
সিন্ধে সম্পর্কে মিথ্যে দাবিটির সঙ্গে ওই নেতার জ্বলন্ত গাড়িটির ছবিও দেওয়া হয়। ক্যাপশনে বলা হয়েছে যে, এটি হল তাঁর "কর্মফল", কারণ পালঘর মামলায় তিনি একজন অভিযুক্ত ছিলেন।
টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
আরও পড়ুন: উন্নাওয়ে পুলিশের মহিলা প্রতিবাদীকে নিগ্রহের ছবি ধর্মীয় দাবিতে ছড়াল
তথ্য যাচাই
ভাইরাল পোস্টে যে ভিডিও রয়েছে, আমরা প্রথমে সেটি সার্চ করি। দেখা যায় সেগুলি ওই ঘটনা সম্পর্কে প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে নেওয়া। ১৩ অক্টোবর মুম্বাই-আগরা রোডে, পিম্পলগাঁও বাসওয়ান্ত টোল প্লাজার কাছে এনসিপি নেতা শিন্ডের গাড়িতে আগুন ধরে যায়। সেই খবর ১৫ অক্টোবর সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হয়। মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, সিন্ধে ছিলেন এনসিপি পার্টির একজন তালুক সহসভাপতি ও আঙ্গুর রপ্তানিকারক। নিজের খেতে ছড়ানোর জন্য উনি সেদিন কীটনাশক কিনতে পিম্পলগাঁও যাচ্ছিলেন। সেই সময়, "সম্ভবত তারে শর্ট-সার্কিট হওয়ার কারণে" তাঁর গাড়িতে আগুন ধরে।
পুলিশের বক্তব্য উদ্ধৃত করে 'মিড-ডে'-তে বিস্তারিত রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। একজন পুলিশ অফিসার মিড-ডে'কে জানান, "আগুন দেখে, শিন্ডে গাড়ি থামান। কিন্তু গাড়ির দরজা লক থাকায়, উনি গাড়ি থেকে বেরতে পারেন না। উনি গাড়ির জানলার কাঁচ ভাঙ্গার চেষ্টা করেন, কিন্তু পারেন না। আগুন ছড়িয়ে পড়ে, এবং উনি গাড়ির মধ্যেই পুড়ে মারা যান।"
বেশ কয়েকটি সংবাদ সংস্থা খবরটি সম্প্রচার করে। ওপরে দেখুন।
এর পর আমরা এডিজি, সিআইডি অতুল চন্দ্র কুলকার্নির সঙ্গে যোগাযোগ করি। পালঘরের ঘটনায় শিন্ডে অভিযুক্ত ছিলেন, সেই দাবি উনি সম্পূর্ণ উড়িয়ে দেন। "আমাদের তদন্তে কোথাও ওনার নাম নেই," বলেন কুলকার্নি।
আমরা সংবাদ প্রতিবেদনগুলিও খুঁটিয়ে দেখি। কিন্তু পালঘরের ঘটনায় অভিযুক্তদের তালিকায় কোথাও তাঁর নাম ছিল না। ২২ এপ্রিল ২০২০ তে, পালঘরের ঘটনার কয়েকদিন পর, মহারাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও এনসিপি নেতা অনিল দেশমুখ, ওই ঘটনায় যে ১০১ জনকে গ্রেফতার করা হয়, তাদের নামের তালিকা প্রকাশ করেন। কিন্তু তাতে সঞ্জয় শিন্ডে নামের কেউ ছিল না।
পালঘরের ঘটনাটি বর্তমানে সিআইডি তদন্ত করছে। স্থানীয় ১৫ জুলাই ২০২০ তে কাসা থানায় নথিভুক্তকরা তিনটি অপরাধের ভিত্তিতে তারা এফআইআর করেছে। সিআইডি এখনও পর্যন্ত ১৫৪ জনকে গ্রেফতার করেছে এবং আটক করেছে ১১ অপ্রাপ্তবয়স্ককে। এ ব্যাপারে তিনটি চার্জশিট ফাইল করা হয়েছে। এবং শুনানি চলছে দাহানু কোর্টে। এছাড়া পুলিশের ভূমিকা নিয়েও বিভাগীয় তদন্ত চলছে। দু'জন অফিসারকে অবসর নিতে বাধ্য করা হয়েছে এবং ১৫ জন পুলিশেরমাইনে কমিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: ভুয়ো সতর্কবাণী: জামা মসজিদ তানিস্কের বিরুদ্ধে কোনও ফতোয়া জারি করেনি