কৃষকদের উপর জলকামান চালানোর পুরনো ছবি ছড়াল সাম্প্রতিক ঘটনা বলে
বুম যাচাই করে দেখে যে কৃষকদের 'দিল্লি চলো' কর্মসূচির পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কিছু কংগ্রেস নেতার শেয়ার করা ছবিটি আসলে ২০১৮ সালের।
২০১৮ সালে উত্তরপ্রদেশ-দিল্লি সীমান্তে প্রতিবাদরত কৃষকদের উপর পুলিশের জলকামান চালানোর পুরানো ছবি বিভিন্ন টুইটার হ্যান্ডেল এবং ফেসবুক পেজে শেয়ার করা হয়েছে। ২০২০ সালের ২৬ নভেম্বর হরিয়ানার কৃষকরা যে 'দিল্লি চলো' অভিযানের কর্মসূচি নিয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে এই ছবিটি শেয়ার করা হয়েছে।
বুম অনুসন্ধান করে দেখেছে যে ছবিটি ২০১৮ সালের ২ অক্টোবরের। ওই দিন কৃষকরা দিল্লি-উত্তরপ্রদেশ সীমান্তে ব্যারিকেড ভেঙ্গে দিল্লিতে ঢোকার চেষ্টা করলে পুলিশ জলকামান ও টিয়ার গ্যাস শেল ছোঁড়ে। ওই কৃষকরা ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়নের (টিকাইত) সঙ্গে যুক্ত এবং তাঁরা কিষাণ ক্রান্তি যাত্রায় অংশ নিতে গিয়েছিলেন। ২০১৮ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর হরিদ্বার থেকে কিষাণ ক্রান্তি যাত্রা শুরু হয়।
কেন্দ্রের কৃষি বিলের বিরোধিতা করে পাঞ্জাবের কৃষকরা প্রতিবাদ স্বরূপ দিল্লি চলো যাত্রার আয়োজন করে এবং এই যাত্রার পরিপ্রেক্ষিতেই ছবিটি শেয়ার করা হয়েছে। কেন্দ্র সরকারের আনা কৃষি বিলের সম্পর্কে এখানে আরও পড়তে পারেন।
ইমরান প্রতাপ গড়ি, বিজয়েন্দ্র সিং, অনিল চৌধুরীর মত বহু কংগ্রেস নেতার টুইটার হ্যান্ডেল থেকে ছবিটি শেয়ার করা হয়েছে।
২৬ নভেম্বর দিল্লির প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সভাপতি অনিল চৌধুরী একটি হিন্দি ক্যাপশনের সঙ্গে ছবিটি টুইট করেন। ওই হিন্দি ক্যাপশনের অনুবাদ, "মোদী সরকার কৃষকদের এত ভয় পাচ্ছেন কেন?"
আরও পড়ুন: প্রসঙ্গ: ত্রিপুরায় ব্রু-রিয়াং শরণার্থী পুনর্বাসন নিয়ে হিংসার ঘটনা
(হিন্দিতে লেখা ক্যাপশন मोदी सरकार किसानों से इतना क्यों डरती है?)
আর্কাইভ দেখতে পাবেন এখানে।
একই ভাবে কংগ্রেস নেতা ও কবি ইমরান প্রতাপ গড়ি ওই একই ছবি হিন্দি ক্যাপশনের সঙ্গে শেয়ার করেছেন। তাঁর লেখা হিন্দি ক্যাপশনের অনুবাদ, "কাঁটায় ভরা চাবুক বা জলোচ্ছ্বাস কোনও কিছুতেই ঝড় থামে না, কৃষকদের কোনও ভাবেই আটকানো যাবে না"।
(হিন্দিতে লেখা মূল ক্যাপশন "कंटीले तारों से, पानी की बौछारों से, तूफ़ान नहीं रुकने वाला, ये किसान नहीं रुकने वाला)
আর্কাইভ দেখতে পাবেন এখানে।
ভারতীয় যুব কংগ্রেসের ভেরিফায়েড হ্যান্ডেল থেকেও এই ছবিটি শেয়ার করা হয়েছে। সঙ্গে যে হিন্দি ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে তার অনুবাদ, "সংবিধান দিবসে কৃষকদের শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না, এর চেয়ে লজ্জার আর কী হতে পারে"।
(হিন্দিতে লেখা ক্যাপশন इससे ज्यादा शर्मनाक क्या हो सकता है कि संविधान दिवस के दिन ही किसानों को शांतिपूर्ण प्रदर्शन करने की इजाजत नहीं दी जा रही है।)
আর্কাইভ দেখতে পাবেন এখানে।
আম আদমি পার্টির নেতা রাঘব চাড্ডাও এই ছবিটি টুইট করেন।
ধ্রুব রাঠি ও বিজয়েন্দ্র সিং'র মত ফেসবুক ব্যবহারকারীরা ছবিটি শেয়ার করেছেন।
পোস্টটির আর্কাইভ দেখা যাবে এখানে।
আর্কাইভ দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
আরও পড়ুন: বাংলার কৃষকরা বিজেপির পক্ষে বলে বিহারের ছবি টুইট করলেন দিলীপ ঘোষ
তথ্য যাচাই
ভাইরাল হওয়া ছবিটির উপর বুম রিভার্স ইমেজ সার্চ চালায় এবং দেখতে পায় ২০১৮ সালে ২ অক্টোবর দ্য হিন্দু সংবাদপত্রে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনেও ওই একই ছবি দেখতে পাওয়া যায়।
ওই প্রতিবেদনে লেখা হয় ২০১৮ সালের ২ অক্টোবর উত্তরপ্রদেশ-দিল্লি সীমান্তে গাজীপুরে পুলিশ কৃষকদের মুখোমুখি হয়। ওই প্রতিবেদন অনুসারে, "ভারতীয় কিষাণ ইউনিয়নের সঙ্গে যুক্ত (টিকাইত গ্রুপ) হাজার হাজার কৃষককে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ জলকামান ও টিয়ার গ্যাসের শেল ছোঁড়ে। কৃষকরা ব্যারিকেড ভেঙ্গে দেশের রাজধানীতে প্রবেশ করতে চেষ্টা করেছিল।"
ভারতীয় যুব কংগ্রেসের টুইট করা ছবির রিভার্স ইমেজ সার্চ করে আমরা ২০১৮ সালের কিছু সংবাদ প্রতিবেদন দেখতে পাই যাতে ওই একই ছবি ব্য্যবহার করা হয়েছে। এই ছবিটি দিল্লি-উত্তরপ্রদেশ সীমান্তে পুলিশ ও কৃষকদের সংঘর্ষের সময় অন্য একটি অ্যাঙ্গেল থেকে তোলা হয়।
যে সংবাদ প্রতিবেদনগুলিতে এই ছবিটি ব্যবহৃত হয়েছে, তার সবক'টিতেই সংবাদসংস্থা প্রেস ট্রাস্ট অব ইন্ডিয়ার প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করা হয়েছে।
আমরা পিটিআই'র ওয়েবসাইটে ছবিটির খোঁজ করি এবং দেখতে পাই এটি ২০১৮ সালের ২ অক্টোবর আপলোড করা হয়।
ছবিটির সঙ্গে যে ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে তাতে লেখা হয়েছে, "নয়াদিল্লিতে 'কিষাণ ক্রান্তি পদযাত্রা'য় দিল্লি-উত্তরপ্রদেশ সীমান্তে প্রতিবাদরত কৃষকদের ছত্রভঙ্গ করার জন্য পুলিশ জলকামান ছোঁড়ে। পিটিআই ফোটো/ রবি চৌধুরি।"
এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে, ২৬ নভেম্বরের 'দিল্লি চলো' যাত্রার সময় পাঞ্জাবের কৃষক যারা রাজধানীর দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল তাদের পুলিশ ছত্রভঙ্গ করে। কৃষকদের আটকানোর জন্য পাঞ্জাব-হরিয়ানার সংযোগস্থল শম্ভু সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়া হয়।
স্বরাজ অভিযানের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য যোগেন্দ্র যাদবকে হরিয়ানা পুলিশ ২৬ নভেম্বর গ্রেফতার করে।
সংবাদ প্রতিবেদন থেকে আরও জানা যায় যে হরিয়ানা পুলিশ ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক দিয়ে রাজধানীতে সবক'টি প্রবেশপথ দিয়ে রাজধানীতে ঢোকার ব্যাপারে অ্যাডভাইসরি জারি করেছে।
হিন্দুস্তান টাইমসের প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন অনুসারে ২৬ নভেম্বর দিল্লি-হরিয়ানা সীমান্তের কাছে বিক্ষোভরত কৃষকদের উপর পুলিশ জলকামান ও টিয়ার গ্যাস ব্যবহার করে। ওই প্রতিবেদনে আরও জানানো হয় যে, কৃষকরা ব্যারিকেডের দিকে পাথর ছোঁড়ে এবং পুলিশের ব্যারিকেড তুলে নদীতে ফেলে দেয়।
এনডিটিভি দিল্লি চলো পদযাত্রার কার্নালের ছবি টুইট করে যাতে হরিয়ানা পুলিশকে কৃষকদের দিকে জলকামান ছুঁড়তে দেখা যায়।
আরও পড়ুন: ২০১৮ সালে মহারাষ্ট্রের কৃষক লং মার্চের ভিডিওকে সাম্প্রতিক বল হল