ফ্যাক্ট চেক
হাথরসে 'নকশাল ভাবি' বলে ছড়াল গোয়া কংগ্রেস নেত্রীর ছবি
রাজকুমারী বনসল নন, ছবিতে রয়েছেন প্রতিভা বোরকার ধাঙ্গে। তিনি গোয়া কংগ্রেসের সোশাল মিডিয়ার ভারপ্রাপ্ত।
একটি সাংবাদিক সম্মেলনে গোয়া কংগ্রেসের সোশাল মিডিয়া শাখার দায়িত্বপ্রাপ্ত নেত্রী প্রতিভা বোরকার-এর ছবি অনলাইনে এই বলে শেয়ার করা হচ্ছে যে, তিনি হলেন রাজকুমারী বনসল। রাজকুমারী হলেন, জবলপুরের সেই ডাক্তার যাঁকে উত্তরপ্রদেশে হাথরসের নির্যাতিতার বাড়িতে দেখা গিয়েছিল।
হাথরসের নির্যাতিতার বাড়িতে বনসলকে দেখা যাওয়ার পর, সংবাদ চ্যানেলগুলি তাঁকে নির্যাতিতার বৌদি বলে পরিচয় দিলে, বিতর্ক শুরু হয়ে যায়। পরে জানা যায় যে, তিনি নির্যাতিতার পরিবারের কোনও আত্মীয় নন। সেই থেকে বেশ কিছু দক্ষিণপন্থী সোশাল মিডিয়া ব্যবহারকরী তাঁকে 'নকশাল ভাবি' আখ্যা দেন।
এর আগে, একটি ছবিতে প্রিয়াঙ্কা গাঁধী ভদ্রকে হাথরসে নির্যাতিতার মাকে জড়িয়ে ধরতে দেখা যায়। কিন্তু সোশাল মিডিয়ায় ওই মহিলার মিথ্যে পরিচয় দিয়ে বলা হয়, তিনি হলেন 'নকসাল ভাবি'। বুম নির্যাতিতার ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, প্রিয়াঙ্কা গাঁধী ভদ্রর সঙ্গে যে মহিলাকে দেখা যাচ্ছে তিনি হলেন তাঁর (নির্যাতিতার ভাইয়ের) মা। রাজকুমারী বনসলও বুমকে বলেন যে, প্রিয়াঙ্কা গাঁধী ভদ্র যেদিন হাথরসে নির্যাতিতার মায়ের সঙ্গে দেখা করেন, সে দিন উনি সেখানে ছিলেন না।
ভাইরাল ছবিতে কংগ্রেস মুখপাত্র গৌরব বল্লভ সহ তিন জন পুরুষ ও এক মহিলাকে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে। তাঁদের পেছনে রয়েছে গোয়া কংগ্রেস কমিটির বোর্ড।
ভাইরাল ফটোটির সঙ্গে দেওয়া মিথ্যে ক্যাপশনে বলা হয়েছে: "ভুয়ো নকসাল ভাবি, যাঁকে প্রিয়াঙ্কা বঢরা, হাথরস ঘটনায় জড়িয়ে ধরেছিলেন। ভাল নাটক করলেন প্রিয়াঙ্কা বঢরা।"
টুইটারে ভাইরাল
'নকশাল ভাবি' বলে মহিলার মিথ্যে পরিচয় দিয়ে, একই ছবি টুইটারেও শেয়ার করা হচ্ছে।
ভারতীয় জনতা পার্টির জাতীয় মুখপাত্র নুপুর শর্মাও মিথ্যে দাবি সমেত ভাইরাল ছবিটি পুনঃটুইট করেন।
২৯ সেপ্টেম্বর ২০২০ তারিখে, দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে উত্তরপ্রদেশের হাথরসের এক দলিত মেয়ে মারা যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ছবিটি ভাইরাল হয়েছে। অভিযোগ, ১৪ সেপ্টেম্বর চার উচ্চবর্ণের ব্যক্তি মেয়েটিকে গণধর্ষণ ও প্রচণ্ড নিপীড়ন করে।
তথ্য যাচাই
বুম দেখে ভাইরাল ছবিতে যে মহিলাকে দেখা যাচ্ছে, তিনি হলেন গোয়া প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সোশাল মিডিয়া বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি প্রতিভা বোরকার। গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে গোয়া কংগ্রেসের একটি সাংবাদিক সম্মেলনে ছবিটি তোলা হয়।
২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯ তারিখের ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের গোয়া কমিটির ফেসবুক লাইভেও একই ব্যক্তিদের দেখা যাচ্ছে। এবং ভাইরাল ছবিটিতে বোরকারকে যে পোশাকে দেখা যাচ্ছে, এখানেও সেই একই পোশাক পরে থাকতে দেখা যাচ্ছে তাঁকে।
আমরা ২ অক্টোবর ২০২০-র একটি সংবাদ প্রতিবেদন দেখতে পাই যাতে বলা হয়, সাংবাদিক সম্মেলন করে গোয়া কংগ্রেস হাথরসের ঘটনায় উত্তরপ্রদেশ সরকারের নিষ্ক্রিয়তার নিন্দা করেছে।
১ অক্টোবর ২০২০-র সাংবাদিক সম্মেলনে বোরকারকে দেখা যাচ্ছে। এবং ভাইরাল ছবির মহিলার সঙ্গে তাঁর মুখের মিল খুব স্পষ্ট।
এ ছাড়াও, আমরা বোরকারের ফেসবুক অ্যাকাউন্ট দেখতে পাই। সেটি গোয়া কংগ্রেস তাদের কিছু পোস্টের সঙ্গে ট্যাগ করেছিল। আমরা দেখি, ভাইরাল ছবিটি তাঁর ফেসবুকের কভার ছবি বা প্রধান ছবিটি থেকে নেওয়া।
দেখা যাবে এখানে।
দেখা যাবে এখানে।
বোরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে উনি বলেন, ভাইরাল ছবিটিতে তাঁকেই দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সেটি গত বছর একটি সাংবাদিক সম্মেলন চলা কালে তোলা হয়। "হ্যাঁ, ভাইরাল ছবিটিতে আমাকে দেখা যাচ্ছে। কিন্তু আমি রাজকুমারী বনসল নই, যেমনটা দাবি করা হয়েছে। আমি উত্তরপ্রদেশের হাথরসে যাইনি ও সেখানে প্রিয়াঙ্কা গাঁধী ভদ্রর সঙ্গে দেখাও করিনি। এই ভাবে ছবি শেয়ার করে গোয়া কংগ্রেসের কাজকে নস্যাৎ করার চেষ্টা হচ্ছে। যে কেউ দেখে বুঝতে পারবে যে দু'জন আলাদা ব্যক্তি," বলেন বোরকার।
দক্ষিণপন্থী অ্যাকাউন্টগুলিতে যাঁকে 'নকসাল ভাবি' বলা হচ্ছে, তিনি হলেন রাজকুমারী বনসল নামের জবলপুর মেডিক্যাল কলেজের একজন চিকিৎসক। ওনার সঙ্গে যোগাযোগ করলে বনসল বুমকে বলেন, কংগ্রেসের সাংবাদিক সম্মেলনের ভাইরাল ছবিতে যে মহিলাকে দেখা যাচ্ছে তিনি সেই মহিলা নন। এবং তিনি এও বলেন যে, প্রিয়াঙ্কা গাঁধী ভদ্রর সঙ্গে তাঁর কখনও দেখা হয়নি।
"আজ অবধি আমি কোনও রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে দেখা করিনি। প্রিয়াঙ্কা গাঁধী সম্ভবত ৩ অক্টোবর ২০২০ তে হাথরস পৌঁছন। আমি হাথরস পৌঁছই ৪ অক্টোবর ২০২০ তে। প্রিয়াঙ্কা গাঁধীর সঙ্গে আমার কোনও দিনই দেখা হয়নি," বনসল বলেন বুমকে।
বনসল ও গোয়া কংগ্রেসের নেত্রী প্রতিভা বোরকারর ছবি মিলিয়ে দেখলে স্পষ্ট হয়ে যায় যে, দু'জন আলাদা ব্যক্তি, যাঁদের মুখের গঠনে কোনও মিল নেই।
Claim : পোস্ট দাবি করে ছবিতে গোয়া কংগ্রেস প্রেস কনফারেন্সে সেই নকশালবাদী মহিলাকে দেখা যাচ্ছে যে হাথরসে নির্যাতিতার বৌদি সেজেছিল
Claimed By : Facebook Posts
Fact Check : False
Next Story