ভারতীয় আহমেদ খান বাইডেনের পরামর্শদাতা নিযুক্ত হয়েছেন দাবিটি মিথ্যে
বুম দেখে, ভাবী মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে খানকে যে ছবিতে দেখা যাচ্ছে সেটি ২০১৫-র।
সোশাল মিডিয়া পোস্টে দাবি করা হয়েছে যে, আহমেদ খান নামের এক ভারতীয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভাবী রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনের পরামর্শদাতা নিযুক্ত হয়েছেন। কিন্তু দাবিটি বিভ্রান্তিকর।
বুম খানের সঙ্গে কথা বললে, খান জানান যে, উনি 'ড্রাফ্ট বাইডেন ২০১৬' প্রচার অভিযানের ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ছিলেন। ওই প্রচারে, ২০১৬ সালের নির্বাচনে বাইডেনকে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসেবে দাঁড় করানোর জন্য সওয়াল করা হয়। পোস্টগুলিতে ছবিও শেয়ার করা হয়েছে, যাতে ২০১৫ তে বাইডেন আর খানকে এক সঙ্গে দেখা যাচ্ছে। খান জানান ছবিগুলি পুরনো। বর্তমানে খান বাইডেনের প্রচার ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত নন। উনি এখন ইলিনয় রাজ্যের সেনেটার রাম ভিলিভালামের একটি কমিটির পরামর্শদাতা।
তাছাড়া, খানের নাম যে বাইডেনের পরামর্শদাতাদের তালিকায় রয়েছে, তার কোনও প্রমাণ পায়নি বুম।
জয়ের জন্য বাইডেন ২৭০ টি আসন জেতার পরই পোস্টগুলি ভাইরাল হয়। বাইডেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ৪৬তম রাষ্ট্রপতি হতে চলেছেন। ২০ জানুয়ারি ২০২১-এ উনি শপথ নিয়ে, বর্তমান রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের জায়গায় বসবেন। রাষ্ট্রপতি পদে বসার আগে যে সব খুঁটিনাঁটি কাজ সারার আছে, সেগুলি চলতে থাকবে। যদিও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নির্বাচনের ফলাফলকে চ্যালেঞ্জ করছেন। কিন্তু এরই মধ্যে, বাইডেন ও ভাবী উপরাষ্ট্রপতি ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রস্তুতি হিসেবে তাঁরা নিজেদের কর্মকর্তাদের দল গঠন করে নিয়েছেন।
বুম দেখে, সোশাল মিডিয়ায় একাধিক পোস্টে বাইডেন ও খানের একত্রে তোলা ছবি শেয়ার করা হচ্ছে। আর সেই সঙ্গে দাবি করা হচ্ছে, "আমেরিকার নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ভারতের হায়দ্রাবাদের বাসিন্দা আহমেদ খানকে তাঁর রাজনৈতিক পরামর্শদাতা নিয়োগ করেছেন। অনেক শুভেচ্ছা।"
যে সব পোস্টে এই দাবি করা হয়েছে, তার কিছু নীচে দেওয়া হল। সেগুলিতে ছবিও আছে। তাতে খান, বাইডেন ও বাইডেনের স্ত্রী ডঃ জিল বাইডেনকে দেখা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন: ট্রাম্পের জন্য প্রচারে নরেন্দ্র মোদীকে দায়ী করা জো বাইডেনের টুইট ভুয়ো
তথ্য যাচাই
বুম খানের সঙ্গে যোগাযোগ করলে খান বলেন, উনি শিকাগোয় বসবাসকারী একজন মার্কিন নাগরিক। আগে উনি বার্নি স্যান্ডার্স কে ডেমোক্র্যাটিক পার্টির রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী করার প্রচারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। বার্নি স্যান্ডার্সের প্রচারপত্রে খান সম্পর্কে বলা হয়, "আহমেদ খান আজীবন শিকাগোয় বসবাস করছেন। এক দশক ধরে উনি নানা সামাজিক কাজের সঙ্গে যুক্ত। সেই সঙ্গে তাঁর রাজনৈতিক ও অলাভজনক কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে।" ওই প্রচারপত্রের আর্কাইভ সংস্করণ এখানে দেখা যাবে।
তাঁকে বাইডেনের একজন পরামর্শদাতা হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে, এই দবি উনি অস্বীকার করেন। বুমকে উনি বলেন, "ভাইরাল টুইটের দাবিটি মিথ্যে। আমাকে রাজনৈতিক পরামর্শদাতা হিসেবে নিযুক্ত করা হয়নি। মনে হয়, অতি উৎসাহী কোনও ব্যক্তি, পুরনো তথ্যকে ভুল করে নতুন ভেবে সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করেন। অনেকেই ওই টুইটগুলি আমার সঙ্গেও শেয়ার করেন। এবং সেভাবেই আমিও ব্যাপারটা জানতে পারি।"
বর্তমানে, খান ইলিনয় রাজ্যের সেনেটার রাম ভিলিভালামের 'মাল্টিকালচারাল অ্যাডভাইসারি কমিটি'তে রাজনৈতিক পরামর্শদাতা হিসেবে নিয়োজিত রয়েছেন।
'ড্রাফ্ট বাইডেন ২০১৬' প্রচারের ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ছিলেন খান। ওই প্রচার অভিযানের উদ্দেশ্য ছিল, ২০১৬-র নির্বাচনে বাইডেনকে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী হিসেবে দাঁড় করানোর পক্ষে জনসমর্থন তৈরি করা।
ছবিগুলি সম্পর্কে খান বলেন, "উনি (বাইডেন) ঠিক করেন যে, প্রার্থী হিসেবে মনোনীত হওয়ার জন্য আর চেষ্টা করবেন না। ওয়াশিংটন ডিসি-তে মার্কিন নৌসেনার পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে বাইডেনের সেই সময়কার বাসভবনে ছবিটি তোলা হয়। আমরা যে প্রচার কাজ করেছিলাম তার জন্য ধন্যবাদ জানাতে আমাদের টিমের সদস্যদের সেখানে আমন্ত্রণ করা হয়েছিল।"
১৯ জুন, ২০১৫-র 'নিউ ইয়র্ক টাইমস'-এ প্রকাশিত লেখায় ড্রাফ্ট বাইডেন কমিটির কাজ সম্পর্কে জানা যাবে।
সাম্প্রতিক নির্বাচনে বাইডেন জয়লাভ করার পর, ১০ নভেম্বর, খান তাঁর একটি ফেসবুক পোস্টে বাইডেনকে অভিনন্দন জানান। সেই অভিনন্দন বার্তায় উনি ওই ছবিগুলিও পোস্ট করেন।
খানের ফেসবুক পোস্ট নীচে দেওয়া হল।
১১ ডিসেম্বর, ২০১৫-য় তৈরি তাঁর একটি ফেসবুক পোস্টও খান নতুন করে শেয়ার করেন। সেটিতে বাইডেনের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাতের একটি ছবি রয়েছে।
বাইডেনের সঙ্গে খানের ওই সাক্ষাতের খবর 'মুসলিম মিরার' নামের একটি কাগজে ডিসেম্বর ২০১৫-য় প্রকাশিত হয়। সেটি দেখুন এখানে।
রাষ্ট্রপতির পালাবদল তত্ত্বাবধান করার জন্য বাইডেন ও হ্যারিস যে টিম তৈরি করেছেন, তাতে খানের নাম দেখতে পায়নি বুম। কোনও বিজ্ঞপ্তিতেও তাঁর নাম নেই। পরামর্শদাতাদের তালিকার আর্কাইভ সংস্করণ এখানে দেখা যাবে।
আরও পড়ুন: জো বাইডেনের শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়েছেন মনমোহন সিংহ দাবিটি ভুয়ো