সেনাবাহিনীর ১ হাজার কোয়রান্টিন শয্যা তৈরির সোশাল মিডিয়া পোস্টগুলি ভুয়ো
বুম দেখে সেনাবাহিনী এই দাবিটিকে ভুয়ো বলেছে এবং পোস্টের ছবিগুলো পুরনো তার সঙ্গে ভারতে কোভিড-১৯ প্রাদূর্ভাবের কোনও সম্পর্ক নেই।
তিনটি পুরনো সম্পর্কহীন ছবিকে ভাইরাল করে একটি পোস্ট সোশাল মিডিয়ায় ছাড়া হয়েছে, সেখানে দাবি করা হয়েছে, রাজস্থানের বারমের-এ সেনাবাহিনী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য একটি ১০০০ শয্যার হাসপাতাল বানিয়েছে।
ছবিতে একটি চিকিৎসাকেন্দ্র, একটি হাসপাতালের ঘর এবং কয়েকজন সেনাবাহিনীর চিকিৎসককে দেখা যাচ্ছে। বুম দেখেছে, দাবিটি ভুয়ো এবং ছবিগুলোও কোভিড-১৯ অতিমারির সঙ্গে সম্পর্কহীন। তা ছাড়া, সেনাবাহিনীও তার সরকারি টুইটার হ্যান্ডেলে এই খবরকে ভুয়ো বলে শনাক্ত করেছে।
ছবিগুলোর সঙ্গে ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে, সেনাবাহিনী রাজস্থানের বারমেরে মাত্র ২ দিনের মধ্যে একটি ১ হাজার শয্যার হাসপাতাল তৈরি করে ফেলেছে, যেখানে ১০০টি ভেন্টিলেটর সহ একটি ইন্টেন্সিভ কেয়ার ইউনিট রয়েছে, যেখানে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ১ হাজার রোগীর চিকিৎসা চলতে পারে।
(মূল হিন্দিতে পোস্ট: भारतीय सेना के द्वारा बाडमेर (राजस्थान) में केवल दो दिनों में खड़ा किया गया पूरे "एक हजार बिस्तरों" का परिपूर्ण अस्पताल..!! इसमें सौ वेंटिलेटर्स से सुसज्जित "गहन चिकित्सा विभाग" (आइसीयू) भी हैं और एक साथ करोना-वायरस के एक हजार रोगियों के इलाज की पूरी व्यवस्था है.!)
এই বার্তাসহ ছবিগুলি ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ ও টুইটারে ব্যাপকভাবে শেয়ার করা হয়েছে।
বুম তার হোয়াটসঅ্যাপ হেল্পলাইন নম্বরেও (+৯১ ৭৭০০৯০৬১১১) একাধিক বার্তায় এই ছবি ও ক্যাপশন সহ পোস্টের সত্যতা যাচাই করার অনুরোধ পেয়েছে।
ফেসবুকেও একই ছবি ও ক্যাপশন সহ দাবিটি ভাইরাল হয়েছে, যার আর্কাইভ করা আছে এখানে।
গৌরব বিস্ট নামে জনৈক ফেসবুক ব্যবহারকারী ভুয়ো দাবিটিকে আরও খানিকটা এগিয়ে নিয়ে লিখেছেন: "এই হাসপাতালে প্রতি ২০জন রোগী পিছু একজন করে চিকিৎসক থাকবেন এবং অন্তরীণ থাকা রোগীদের জন্য টিভি, খেলাধূলা ও অন্যান্য বিনোদনমূলক ক্রিয়াকলাপের ব্যবস্থা রয়েছে।"
"সেনা অফিসাররা এ ধরনের আরও ৪ টি হাসপাতাল ২ দিনের মধ্যে বানিয়ে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন, যদি তার প্রয়োজন দেখা দেয়।"
টুইটারে ভাইরাল
👇👇भारतीय सेना के द्वारा बाडमेर (राजस्थान) में केवल दो दिनों में खड़ा किया गया पूरे "एक हजार बिस्तरों" का परिपूर्ण अस्पताल
— कुंदा कवळेकर...( K.K.) (@kundakavelkar) March 24, 2020
इसमें सौ वेंटिलेटर्स से सुसज्जित "गहन चिकित्सा विभाग" (आइसीयू) भी हैं और एक साथ करोना-वायरस के एक हजार रोगियों के इलाज की पूरी व्यवस्था भी. फौजीभाई 🙏🙏 pic.twitter.com/jQghKcpaio
তথ্য যাচাই
সেনাবাহিনী এই খবরের সত্যতা সম্পূর্ণ অস্বীকার করে জানিয়েছে— "বারমেরে ১০০০ করোনাভাইরাস রোগীকে কোয়ারেন্টাইন করার সুবিধাবিশিষ্ট একটি হাসপাতাল বানানোর এই সোশাল মিডিয়ার খবরটি সর্বৈব মিথ্যা।"
A Fake input is circulating on Social Media that #IndianArmy has established 1000 bed quarantine facility in Barmer.
— ADG PI - INDIAN ARMY (@adgpi) March 23, 2020
This is untrue. pic.twitter.com/ne78m7KCXW
তা ছাড়া, আমরা দেখেছি, ছবিগুলো আলাদা-আলাদা সময়ে ভিন্ন-ভিন্ন জায়গার ছবি, যার সঙ্গে কোভিড-১৯ অতিমারির কোনও সম্পর্ক নেই।
প্রথম ছবি
অনুসন্ধান করে আমরা দেখি, এই ছবিটি ২০১৯ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ট্রেন্ড নামে একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশ হয়েছিল। ছবি সহ প্রতিবেদনটির শিরোনাম ছিল: "রাশিয়া কিরঘিজস্তানের জরুরি বিভাগকে একটি চলমান হাসপাতাল দান করতে চলেছে। এই হাসপাতাল প্রকল্পটি অঞ্চলের উন্নয়ন ও বিকাশে সহায়ক হবে। ২০১৭ সাল থেকে এই প্রকল্প ৩০টি অগ্রবর্তী গ্রামের বিপর্যয় মোকাবিলায় সক্রিয় হয়েছে, ধস ও কাদার স্রোত থেকে মানুষকে রক্ষা করতে এবং সংক্রামক ব্যাধিতে মৃত গবাদি পশুদের দাহ করে দূষণ রোধ করতেও সহায়ক হয়েছে।"
বুম এই ছবিটির আদি উৎস শনাক্ত করতে সমর্থ হয়নি, তবে এটা যে করোনাভাইরাসের অতিমারির প্রাদূর্ভাবের অনেক আগের ঘটনা সে ব্যাপারে নিশ্চিত হয়েছে।
দ্বিতীয় ছবি
এই ছবিটিকে আমরা খোঁজ করে একটি ব্লগের হদিস পেয়েছি, যেটি সেনাবাহিনীতে ভর্তি হতে তরুণদের সাহায্য করে। আর একটু গভীরে গিয়ে খোঁজ করে আমরা ভারতীয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের প্রধান মুখপাত্রের সরকারি টুইটার হ্যান্ডেলে একটি টুইটের সন্ধান পাই।
টুইটে লেখা: "নেপালের ভূমিকম্প কবলিত মানুষদের সাহায্যার্থে কাঠমান্ডু বিমানঘাঁটিতে ভারতীয় বাহিনীর মেডিক্যাল কর্পস-এর কেন্দ্র।"
ছবিটি অতএব ভারতীয় সেনাদেরই, তবে এটি ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিলের ছবি।
#NepalEarthquake Casualty Triage Centre set up by Army Medical Corps at Kathmandu Air Base to aid the rescued people pic.twitter.com/a8FW48gaUI
— ADG (M&C) DPR (@SpokespersonMoD) April 28, 2015
তৃতীয় ছবি
এই ছবিটি ২০০৮ সালের ১৬ নভেম্বর থেকে অনলাইনে রয়েছে এবং এটি প্রকাশিত হয়েছিল ক্যালিফোর্নিয়ার মার্চ সংরক্ষিত বিমানঘাঁটির সরকারি ওয়েবসাইটে।
ছবির সঙ্গের প্রতিবেদনটিতে লেখা হয়েছিল: "৯০-এর দশকের মাঝামাঝি থেকে এই প্রথম মার্চ বিমানঘাঁটির একটা সক্রিয় হাসপাতাল তৈরি হলো। ২০০ শয্যার এই চলমান হাসপাতালটি ক্যালিফোর্নিয়া এমার্জেন্সি মেডিকেল সার্ভিস অথরিটির অধীন তিনটি হাসপাতালের একটি, যেটি গত রবিবার তৈরি হয় এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার সপ্তাহব্যাপী মহড়ার স্নায়ুকেন্দ্র হয়ে ওঠে। মার্চ-এর এ বছরের ময়দানি প্রশিক্ষণের আঞ্চলিক কেন্দ্র এটাই হয়ে ওঠে l"
এই ধরনের তিনটি হাসপাতাল গড়ে তোলা হয়েছিল।
আরও পড়ুন: মিথ্যে: করোনাভাইরাস রুখতে ঘরে থাকলে ফ্রি ইন্টারনেট দেবে ভারত সরকার