আহমেদনগরের বাবাভাই পাঠানের গল্পটি ভুয়ো দাবি সহ শেয়ার করা হচ্ছে
আমরা বাবাভাই পাঠানের সঙ্গে কথা বললে তিনি দু'জন হিন্দু বোনের অনাথ হওয়ার দাবি উড়িয়ে দিলেন।
মহারাষ্ট্রের আহমদনগর জেলার জনৈক মুসলিম বাবাভাই পাঠানের গল্প অনেকের হৃদয় স্পর্শ করেছে। তিনি দুই হিন্দু ভগিনী গৌরী ও শবরীর বিয়ে দিয়েছেন সম্পূর্ণ হিন্দু প্রথা ও লোকাচার মেনেl সোশাল মিডিয়ায় এই ঘটনাটিকেই ভুলভাবে ব্যাখ্যা করা হচ্ছে যে ওই দুই বোনই অনাথা, যাদের পাঠান দত্তক নিয়েছিলেন।
আমরা পাঠানের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, ওই দুই বোনের মা সবিতা এখনও জীবিত এবং পাঠানকে তিনি তাঁর রাখী-ভাই বলে গণ্য করেন, তবে ওদের বাবা আলাদা থাকেনl আর যেহেতু কন্যা পক্ষে ধর্মীয় আচারগুলো পালন করার মতো কোনও পুরুষ ছিল না, তাই পাঠান সেখানে দাঁড়িয়ে পরিবারের তরফে কন্যা-সম্প্রদান করেন।
বিয়ের দিনে মেয়েদুটি বাপের বাড়ি ছেড়ে চলে যাওয়ার দুঃথে কাঁদছে আর পাঠান তাদের সান্ত্বনা দিচ্ছেন, এই ছবিটির ভুল ব্যাখ্যা করে শেয়ার করা হয়েছে যে, মেয়েদুটি অনাথা আর পাঠান তাঁদের দত্তক নিয়েছিলেন।
ভাইরাল হওয়া পোস্টে লেখা হয়েছে: "আহমদনগরের এক মুসলিম দুই অনাথ ভগিনীকে দত্তক নিয়েছিলেন এবং তিনি নিজের খরচে হিন্দু লোকাচার মেনে তাদের বিয়ে দিয়েছেন l আর এই ঘটনাটি সারা রাজ্যেই মানবিকতার নজির হিসাবে প্রশংসিত হচ্ছে।"পোস্টটির আর্কাইভ বয়ান দেখুন এখানে।
সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল
এই একই ভুল ব্যাখ্যা সহ ফেসবুকেও পোস্টটি ভাইরাল হয়েছে।
#ANZAR UPDATE: A Muslim man from Ahmednagar district of Maharashtra, has adopted two orphan sisters and wedded them...
Posted by Awaam ki AwaaZ on Saturday, August 22, 2020
পোস্টটির আর্কাইভ বয়ান দেখুন এখানে।
Muslim man Bababhai Pathan, from Ahmednagar, Maharashtra, has adopted two orphan sisters & wedded them from his own expenses according to the Hindu rituals. He has been widely praised for his humanitarian work across the country. pic.twitter.com/zLIQP76JnS
— Aarif Shah (@aarifshaah) August 23, 2020
পোস্টের আর একটি আর্কাইভ বয়ান দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
স্কুপ-হুপ-ও এই ভুল ব্যাখ্যা সহ ঘটনাটি রিপোর্ট করে যে, ওই দুটি মেয়ে অনাথা এবং পাঠান তাদের দত্তক নিয়েছিলেন।
দেখুন এখানে এবং তার আর্কাইভ বয়ান এখানে।
আরও পড়ুন: আমেরিকার টেক্সাসের ডিটেনশন ক্যাম্পের ছবিকে অসমের বলা হল
তথ্য যাচাই
আমরা বাবাভাই-এর সঙ্গে কথা বললে তিনি গোটা গুজবটা নস্যাৎ করে দিয়ে জানান, গৌরী এবং শবরী দুই বোনেরই মা-বাবা বেঁচে রয়েছেন। তিনি আরও জানান যে ওদের মা সবিতা ভুসারি ওঁকে নিজের ভাইয়ের মতো দেখেন আর বাবা পরিবারের সঙ্গে থাকেন না: "ওরা কেউই অনাথ নয়, ওদের বাবা-মা দুজনেই জীবিত যদিও বাবা পরিবারের সঙ্গে থাকেন না। ওরা এই রাস্তার ওপারেই থাকে আর ওদের মা সবিতা ওদের মানুষ করতে এবং লেখাপড়া শেখাতে অনেক কষ্ট করেছেন। যেহেতু সবিতার নিজের ভাই বহু দিন গত হয়েছেন, তাই তিনি আমাকেই তাঁর ভাই বলে মনে করেন এবং অনেক বছর ধরে আমায় নিয়মিত রাখী পরান।"
আহমদনগর জেলার বোধেগাঁও গ্রামের বাসিন্দা বাবাভাই পাঠান দুই বোন গৌরী ও শবরীর বিয়ের যাবতীয় উদ্যোগ আযোজনে সাহায্য করেন যা ১৩ অগস্ট সম্পূর্ণ হিন্দু রীতি ও প্রথা মেনেই সম্পন্ন করা হয়।
যে প্রথা অনুযায়ী কন্যাপক্ষের কোনও বয়স্ক পুরুষকে কন্যাদান করতে হয়, সেটাও পাঠানই করেন।
আমরা এই মর্মে স্থানীয় সংবাদ-প্রতিবেদনও দেখেছি, যাতে লেখা হয়েছে, সবিতা ভুসারির স্বামী তার স্ত্রী ও মেয়েদের অনেকদিন আগেই ছেড়ে চলে গেছেন। তাই যখন মেয়েদুটির বিয়ে দেবার সময় হল, তখন প্রতিবেশী বাবুভাই পাঠান দাঁড়িয়ে থেকে পরিবারের তরফ থেকে কন্যা সম্প্রদান করেন এবং বিয়ের জোগাড়যন্ত্রও করেন।
জি-নিউজ তাস-এর এই রিপোর্টের ১ মিনিট ৫ সেকেন্ডের মাথায় সবিতাকে বলতে শোনা যাচ্ছে যে মেয়ে-পক্ষে কোনও পুরুষ অভিভাবক না থাকায় পাঠানই দাঁড়িয়ে থেকে বরপক্ষকে কন্যা সম্প্রদান করেন।
"বাবাভাই পাঠান আমার ভাইয়ের মতো। মেয়েদের বিয়ের সময় সে এক ছত্রভঙ্গ অবস্থা, আমার পাশে তখন কেউ নেই, যেহেতু আমার বাবা-মা, ভাই সকলেই মারা গেছে। আমার এক বোন আছে বটে, কিন্তু পুরুষ অভিভাবক বলতে পরিবারে কেউ নেই। তাই বাবাভাই পাঠান সাহেব এসে আমাদের পাশে দাঁড়ান"—বলতে শোনা গেল সবিতাকে।
আরও পড়ুন: বেঙ্গালুরুর ঘটনা বলে মিথ্যে করে ছড়াল পশ্চিমবঙ্গের বিক্ষোভের ভিডিও