পুলিশের গায়ে থুতু ছেটানোর ভিডিওটির সঙ্গে কোভিড-১৯ এর কোনও সম্পর্ক নেই
এই ভিডিওটি ভুয়ো দাবি সহ শেয়ার করা হচ্ছে যে, করোনাভাইরাস অতিমারির সময় এক মুসলিম পুলিশের গায়ে এভাবে থুতু ছেটাচ্ছে।
এক মাসের পুরনো একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, পুলিশ ভ্যানের ভিতর একটি লোক এক অফিসারের দিকে থুতু ছিটাচ্ছে। ভিডিওটা শেয়ার করা হচ্ছে এই ভুয়ো বিবরণী সহ যে, করোনাভাইরাস অতিমারির সময় এক মুসলিম এ ভাবে পুলিশের দিকে থুতু ছিটাচ্ছে।
এই বিবরণ বা ব্যাখ্যাটা সম্পূর্ণ মিথ্যা, কেননা এই ফুটেজটি মুম্বইয়ে ২৯ ফেব্রুয়ারি তোলা, যখনও করোনা মহামারি মুম্বইতে পৌঁছায়নি। ভিডিওতে আসলে দেখা যাচ্ছে এক বিচারাধীন বন্দিকে, যাকে বাড়ির খাবার থেকে বঞ্চিত করায় রেগে গিয়ে পুলিশের উদ্দেশ্যে থুতু ছুঁড়ছে।
২৭ সেকেন্ডের এই ভিডিও ক্লিপটি বুম টুইটারে খুঁজে পেয়েছে, যার ক্যাপশনে বিষয়টিকে সাম্প্রদায়িক রঙে রাঙানো হয়েছে এবং যার হ্যাশট্যাগ দেওয়া হয়েছে—#করোনাজেহাদ।
ওই ক্যাপশনের সূত্র ধরেই মূল শব্দগুলি বসিয়ে অনুসন্ধান করে আমরা দেখি, সোশাল মিডিয়ায় এই ভিডিওটি ভাইরাল হয়ে গেছে।
ভারতে করোনাভাইরাস অতিমারির প্রাদূর্ভাবের প্রেক্ষিতেই এই ভুয়ো ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে, যে-অতিমারি এই প্রতিবেদন রচনার সময় পর্যন্ত এ দেশে ২১০০ লোককে সংক্রমিত করেছে, যাদের মধ্যে ৫৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।
এই রোগ ড্রপলেটের মাধ্যমে ছড়ায়—যেমন কাশি, হাঁচি বা থুতু মারফত সংক্রমিত হতে পারে।
আরও পড়ুন: শাহরুখ খানের পাকিস্তানকে অর্থ দান করা নিয়ে তথ্য যাচাইয়ের সম্পাদিত ভিডিও আবার জিইয়ে উঠলো
তথ্য যাচাই
'ভারতে পুলিশের গায়ে থুতু'—এই মূল শব্দগুলি বসিয়ে বুম গুগল সার্চ-এ গিয়ে খোঁজ করে দেখেছে, মুম্বইয়ে অনুরূপ একটি ঘটনার কথা অনেক সংবাদ-প্রতিবেদনেই প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে এক বিচারাধীন বন্দি তার বাড়ি থেকে রান্না করে পাঠানো খাবার খেতে না দেওয়ার ক্ষোভে পুলিশ ভ্যানের ভিতর থুতু ছেটাচ্ছে।
২০২০ সালের ২ মার্চ ইউটিউবে টাইমস অফ ইন্ডিয়ার আপলোড করা একই ঘটনার একটি দীর্ঘতর ভিডিও আমরা খুঁজে পাই, যার শিরোনাম হলো: "দেখুন! এক বিচারাধীন বন্দি পুলিশ ভ্যানের ভিতর পুলিশের গায়ে থুতু ছেটনোর পর হাতাহাতি।'' ভিডিওটির ক্যাপশন ছিল: "এক বিচারাধীন বন্দিকে পুলিশ ভ্যানে করে নিয়ে যাওয়ার সময় শনিবার মুম্বই পুলিশের কিছু কনস্টেবলের গায়ে সে থুতু ছেটায় এবং তাদের আক্রমণ করে।"
২৯ মার্চ, ২০২০ এনডিটিভির প্রকাশিত পিটিআই-এর এই প্রতিবেদনে ঘটনাটির আরও বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়। সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী মহম্মদ সোহাল শৌকত আলি নামে ২৬ বছরের এক যুবককে মুম্বই পুলিশ আদালতে তোলার সময় তার বাড়ি থেকে পাঠানো রান্না করা খাবার খেতে না দেওয়ায় রেগে গিয়ে যুবকটি পুলিশকে আক্রমণ করে এবং এক কনস্টেবলের গায়ে থুতুও ছেটায়।
থানে পুলিশের মুখপাত্র সুখদা নারকর পিটিআই-কে জানান, "শুক্রবার আরও ১১ জন বন্দির সঙ্গে আলিকে শুনানির জন্য আদালতে তোলা হয়েছিল। শুনানি শেষ হওয়ার পর আদালত-কক্ষের বাইরে আলির এক আত্মীয় ওর জন্যে বাড়ি থেকে তৈরি করে আনা খাবার ওকে দিতে যায়, কিন্তু পুলিশ ওকে সেই খাবার দিতে দেয়নি। বিরক্ত হয়ে আলি পুলিশদের উদ্দেশে গালাগাল দিতে থাকে। তারপর যখন ওকে ভ্যানে করে জেলের দিকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা হয়, তখনই সে পুলিশের সঙ্গে কথা-কাটাকাটিতে জড়িয়ে পড়ে। এক পুলিশের গায়ে সে থুতু ছেটায়, অন্য একজনের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে, আরও একজনের আঙুলও কামড়ে দেয়।"
ঘটনাটি ২৯ ফেব্রুয়ারির এবং এর সঙ্গে করোনাভাইরাস সংক্রমণের কোনও সুদূরতম সম্পর্কও নেই, যেমনটা ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলিতে দাবি করা হয়েছে।
বস্তুত, মহারাষ্ট্রে প্রথম করোনাভাইরাস সংক্রমিত রোগী শনাক্ত হয় আরও অনেক পরে, ৯ মার্চ, যখন দুবাই থেকে মুম্বই ও পুনেতে আসা কিছু যাত্রীর শরীরে কোভিদ-১৯-এর লক্ষণ দেখা দেয় এবং পরীক্ষা করে তাদের শরীরে ওই ভাইরাস সংক্রমণের প্রমাণ মেলে।
আরও পড়ুন: মিথ্যা: ভিডিও দেখায় করোনাভাইরাস ছড়াতে মুসলিমরা বাসনকোসন চাটছে