ইয়েদুরাপ্পা ও লিঙ্গায়ত ধর্মগুরুর প্রকাশ্য বিবাদকে ভুল করে সিএএ সংক্রান্ত বলা হল
বুম অনুসন্ধান করে দেখেছে যে ক্যাপশনটি বিভ্রান্তিকর ছিল, কারণ লিঙ্গায়ত ধর্মগুরুর মন্তব্যটি নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন সম্পর্কে ছিল না।
কর্ণাটকের মূখ্যমন্ত্রী বিএস ইয়েদুরাপ্পা ও বীরশৈব লিঙ্গায়ত পঞ্চমাশালীর এক জন ধর্মগুরু স্বামী বচনানন্দের প্রকাশ্য ঝগড়ার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। মিথ্যে দাবি করা হচ্ছে যে বিবাদটি নয়া নাগরিকত্ব বিল সংক্রান্ত। আসলে স্বামী বচনানন্দ তাঁর সম্প্রদায়ের নেতাদের জন্য ইয়েদুরাপ্পার মন্ত্রিসভায় আরও বেশি আসন চাইছিলেন। এই বাকবিতণ্ডার আসল কারণ এটাই ছিল।
৪৭ মিনিটের যে ক্লিপটি বিভ্রান্তিকর ক্যাপশনের সঙ্গে শেয়ার করা হয়েছে, তাতে দেখা যাচ্ছে স্বামী বচনানন্দের কন্নড় ভাষায় করা একটি মন্তব্যের উত্তরে ইয়েদুরাপ্পা খুব রেগে গিয়ে কিছু বলছেন।
ক্লিপটি হিন্দিতে লেখা ক্যপশনের সঙ্গে শেয়ার করা হয়েছে। হিন্দি ক্যাপশনের অনুবাদ "গুরু সিএএ বিরোধী মন্তব্য করলে কর্ণাটকের মূখ্যমন্ত্রী খুব বিরক্ত হন।" ক্যাপশনের দ্বিতীয় অংশে বলা হয়েছে যে মূলধারার গণমাধ্যমে এই ক্লিপটি দেখানো হয়নি।
হিন্দিতে লেখা ক্যাপশন: "कर्नाटक BJP के C.M के मंच से ही जब गुरु जी ने CAA का विरोध किया तो CM साहब भड़क उठे😜 ऐसी बे इज्जती आपने कभी नही देखी होगी दलाल मीडिया के चाटूकार पत्रकारो ने एक बार भी नही चलाया करो तो ज़रा फेमस गुरू जी को😂😂"
कर्नाटक BJP के C.M के मंच से ही जब गुरु जी ने CAA का विरोध किया तो
— 🔥जलता हिंदुस्तान,जलता सविंधान🔥 (@HabibHasan_) January 21, 2020
CM साहब भड़क उठे😜
ऐसी बे इज्जती आपने कभी नही देखी होगी
दलाल मीडिया के चाटूकार पत्रकारो ने एक बार भी नही चलाया
करो तो ज़रा फेमस गुरू जी को😂😂@LambaAlka pic.twitter.com/uU4d3BB4Op
টুইটটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
আমরা দেখতে পাই অনেক সোশাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট থেকে এই একই ক্যাপশনের সঙ্গে একই ভিডিও শেয়ার করেছেন।
পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
আরও পড়ুন: মেঙ্গালুরু বিমানবন্দরে বোমা রেখে ধৃত বলে ভাইরাল হল বিজেপি কর্মীর ছবি
তথ্য যাচাই
অনেক টুইটার ব্যবহারকারী উপরের টুইটের উত্তরে জানিয়েছেন যে এই ক্লিপটি এই বিষয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত ছিল না। নিউজ মিনিটের প্রতিবেদন () অনুসারে ঘটনাটি এ বছর জানুয়ারী মাসের প্রথম দিকে দাবাংগিরির হরিহর অঞ্চলের একটি সভায় ঘটে। সভাতির আহ্বায়ক ছিল পঞ্চমশালী সমাজ গুরুপিঠ।
পঞ্চমশালী লিঙ্গায়তের একটি শাখা-সম্প্রদায়। এরা কর্ণাটকের একটি ছোট কিন্তু রাজনৈতিক ভাবে খুব গুরুত্বপুর্ণ একটি সম্প্রদায়।
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে ধর্মগুরু বলছেন, "মূখ্যমন্ত্রী আপনি একজন ভালো মানুষ। মুরগেশ নিরানি আপনার পাশে সব সময় ছিলেন, সব সময় আপনার হাত ধরে চলেছেন। এখন যদি আপনি তাঁর হাত ছেড়ে দেন, তবে পুরো সম্প্রদায় আপনার হাত ছেড়ে দেবে।" মুরগেশ রুদ্রাপ্পা নিরানি বাগালকোটের বিগলি থেকে নির্বাচিত এক জন বিধায়ক। তিনি লিঙ্গায়ত সম্প্রদায়ের মানুষ ও ইয়েদুরাপ্পার খুবই ঘনিষ্ঠ।
মূখ্যমন্ত্রী ধর্মগুরুর মন্তব্যের বিরোধিতা করেন এবং বলেন, "আপনি আমাকে ভয় দেখাতে পারেন না।" স্বামী তখন বলেন, "আমি আপনাকে ভয় দেখাচ্ছি না। আমি শুধু সত্যিটা বলছি এবং আমার অধিকার চাইছি।"
বস্তুত আমরা এই ঘটনার উপর অনেক প্রতিবেদন দেখতে পাই। এনডিটিভির একটি প্রতিবেদনে এই বিষয়টি সম্পর্কে বিশদে লেখা হয়।
এর পর ইয়েদুরাপ্পা যখন উপস্থিত শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন, তখন তিনি পদত্যাগ করার কথাও বলেন। এনডিটিভির প্রতিবেদনে আরও লেখা হয়েছে যে যে ইয়েদুরাপ্পা বলেছেন, "আমি ধর্মগুরুকে অনুরোধ করব আমার পরিস্থিতি বোঝার জন্য। ১৭ জন বিধায়ক মন্ত্রিপদ ও বিধায়কপদ থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। ইয়েদুরাপ্পা তাঁদের জন্য মূখ্যমন্ত্রী হয়নি। আপনাদের ত্যাগ এবং আশীর্বাদের কারণে আমি এই রাজ্যের মূখ্যমন্ত্রী হয়েছি। আমি ধর্মগুরুকে এই পরামর্শ দিতে চাই যে আমি তাঁর কাছে যাব এবং সামনাসামনি বসে কথা বলব। আপনারা যদি না চান, তবে আমি কালই ইস্তফা দিতে রাজি আছি। আমি চেয়ার আঁকড়ে থাকতে চাই না।''
এই ভিডিওর উপর নিউজ মিনিট যে রিপোর্ট করেছিল তার সারাংশ:
"সভা চলাকালীন পীঠের ধর্মগুরু স্বামী বচনানন্দ সর্বসমক্ষে বলেন যে যদি এই সম্প্রদায়ের অন্তত তিন জন বিধায়ককে মন্ত্রিসভার পরবর্তী সম্প্রসারণের সময় মন্ত্রী না করেন, তবে পুরো সম্প্রদায় বিএস ইয়েদুরাপ্পার বিরুদ্ধে চলে যাবে। যখন ধর্মগুরু এই মন্তব্য করেন, তখন মূখ্যমন্ত্রী সেখানেই উপস্থিত ছিলেন।
ধর্মগুরু আরও বলেন যে বাগালকোটের বিগলির বিধায়ক মুরগেশ নিরানির কোনও ভালো মন্ত্রকের দায়িত্ব পাওয়া উচিত। মুরগেশ নিরানি তখন মঞ্চেই উপস্থিত ছিলেন। তাঁর হয়ে বলার সময় এই ধর্মগুরু আরও বলেন যে নিরানি এবং তাঁর সম্প্রদায় অবিচল ভাবে ইয়েদুরাপ্পার সঙ্গে ছিলেন এবং এখন যদি মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে মন্ত্রিসভায় স্থান না দিতে পারেন, তবে পুরো পঞ্চমশালী সম্প্রদায় আর ইয়েদুরাপ্পাকে সমর্থন করবে না।"