শাহিনবাগের প্রতিবাদীদের নিয়ে শার্লি এবদোর ভাইরাল কার্টুনটি ভুয়ো
বুম দেখে ২০১৪ সালে অন্য প্রসঙ্গে আঁকা মূল ব্যঙ্গচিত্রটি সম্পাদনা করে তাতে ‘শাহিন ভাগ’ শব্দ বসানো হয়েছে।
ফরাসি ব্যঙ্গ রচনার সাপ্তাহিক শার্লি এবদো-র অক্টোবর ২০১৪-র সংখ্যায় প্রকাশিত ব্যঙ্গচিত্র সম্পর্কে মিথ্যে দাবি করা হচ্ছে। ছবিটিকে একটু সম্পাদনা করে সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হচ্ছে এই বলে যে, শার্লি এবদো ওই ব্যঙ্গচিত্রে শাহিনবাগের প্রতিবাদীদের এক হাত নিয়েছে।
বুম আসল কার্টুনটির সন্ধান পায়। সেটি ২০১৪-র অক্টোবরে প্রকাশিত হয়েছিল। ফরাসি ভাষায় সেটির শিরোনামে লেখা হয়, 'বোকো হারামের ক্ষুব্ধ যৌন দাসীরা'। ব্যঙ্গচিত্রটিতে ওই মহিলারা চিৎকার করে বলছেন, "আমাদের বরাদ্দের ওপর হাত দেবেন না"। ভাইরাল ছবিতে ওই কথাটি সরিয়ে দিয়ে তার জায়গায় বসানো হয়েছে "শাহিন ভাগ"।
১৪ অক্টোবর ২০১৯-এ, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বা সিএএ সংসদের দুই কক্ষেই পাস হয়ে যায়। সেই থেকে, দিল্লির শাহিনবাগে, মহিলাদের নেতৃত্বে, ২৪x৭ ধর্নায় বসেন বিক্ষোভকারীরা। কয়েক দিনের মধ্যেই 'শাহিন বাগ' ধর্না নামেই পরিচিত হয়ে যায় ওই বিক্ষোভ।
বেশ কিছু সোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারী ভাইরাল ছবিটি শেয়ার করেছেন। সেটিতে মাথায় কাপড় জড়ানো চার গর্ভবতী মহিলাকে "শাহিন ভাগ" (ত্রুটিপূর্ণ বানান) বলে চিৎকার করতে দেখা যাচ্ছে। সেই সঙ্গে হিন্দিতে লেখা ক্যাপশনে বলা হয়, "ভারতে কারোর সাহস হয়নি। কিন্তু শার্লি এবদো শাহিন বাগের মহিলাদের ওপর ব্যঙ্গচিত্র ছেপে সত্যটা প্রকাশ করেছে।"
(হিন্দিতে লেখা ক্যাপশন: भारत में तो किसी की हिम्मत नहीं हुई लेकिन चार्ली हेब्दो ने शाहीन बाग की ख़ातूनों का कार्टून छाप कर असलियत बयान कर दी।)
পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
অন্যান্য ব্যবহারকরীরাও একই ধরনের ক্যাপশন সমেত ওই একই ছবি শেয়ার করেছেন। অনেক সোশাল মিডিয়া ব্যবহারকারী আবার আসল ছবিটি শেয়ার করেছেন এই বলে যে, শার্লি এবদো শাহিন বাগের বিক্ষোভকারীদের ওপরও ব্যঙ্গচিত্র প্রকাশ করেছে।
পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
আরও পড়ুন: না, ভিডিওটি সৌদি সরকারের ফরাসি দ্রব্য নষ্ট করার দৃশ্য নয়
তথ্য যাচাই
বুম একই সঙ্গে কি-ওয়ার্ড সার্চ ও ছবিটি দিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে। দেখা যায়, ব্যঙ্গচিত্রটি ২০১৪-র অক্টোবরে প্রকাশ করা হয়। পত্রিকাটিতে ছাপা মূল ছবিটি আমরা দেখতে পাইনি। তবে, এমন বেশ কিছু প্রতিবেদন আমাদের নজরে আসে যেখানে ছবিটি ব্যবহার করা হয়।
১৫ জানুয়ারি ২০১৫-য় ভক্স-এ প্রকাশিত একটি নিবন্ধে বলা হয়, ব্যঙ্গচিত্রটিতে ফ্রান্সের কল্যানমূলক নীতি বিশ্লেষকদের প্রতি কটাক্ষ করা হয়। কারণ, তাঁরা বলেছিলেন, অভিবাসী মহিলাদের জন্য ফ্রান্স যে সাহায্য বরাদ্দ করে, তা কমিয়ে দেওয়া উচিৎ। তাঁদের যুক্তি, ওই মহিলারা তাঁদের দেওয়া অনুদানের অপব্যবহার করছেন।
নাইজেরিয়ার সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠী বোকো হারাম-এর দ্বারা নিগৃহীত মহিলাদের দুর্দশার ওপর আলোকপাত করে, নীতি বিশ্লেষকদের কটাক্ষ করেন কার্টুনিস্টরা।
আসল কার্টুনটিতে মাথায় কাপড় জড়ানো চার গর্ভবতী মহিলাকে দেখানো হয়। তাঁরা চিৎকার করে বলছেন, "আমাদের বরাদ্দে হাত দিও না"।
ব্যঙ্গচিত্রটির শিরোনামে লেখা হয়, 'বোকো হারাম-এর ক্ষুব্ধ যৌন দাসীরা'।
ভাইরাল ছবিটিতে শাহিনবাগকে লেখা হয়েছে শাহিন 'ভাগ'। তাছাড়া, ভাইরাল ছবিটির লেখা ও হরফের রঙ আসল ছবিটি থেকে আলাদা। তা থেকে বোঝা যায়, ভাইরাল ছবিটি হল আসল ছবির সম্পাদিত সংস্করণ।
ধর্মকে কটাক্ষ করে কার্টুন আর ব্যঙ্গাত্মক লেখা প্রকাশ করে শার্লি এবদো। ৭ জানুয়ারি ২০১৫ তে দুই বন্দুকধারী প্যারিসে ওই কাগজের সদর দফতরে গুলি চালিয়ে ১২ জনকে হত্যা করে।