এক মৌলবির নাবালিকাকে যৌন নিগ্রহের ভাইরাল ভিডিওটি পাকিস্তানের
বুম দেখে দু'বছর আগের ভিডিওটি পাকিস্তানের ঝঙ্গের, অভিযুক্ত মৌলবিকে গ্রেফতার করা হয় সেই সময়।
মৌলবির দ্বারা এক নাবালিকার যৌন নিগ্রহের অস্বস্তিকর এক ভিডিও ফেসবুক ও টুইটারে ব্যাপক হারে শেয়ার করা হচ্ছে। কিন্তু এ কথা বলা হচ্ছে না যে, ভিডিওটি পুরনো এবং ঘটনাটি এখানে ঘটেনি।
বুম দেখে ঘটনাটি পাকিস্তানের ঝঙ্গ অঞ্চলে ঘটে এবং অভিযুক্ত মৌলবিকে ২০১৮ সালে গ্রেফতার করা হয়।
ওই ভিডিওতে একটি অল্পবয়সী মেয়েকে যৌন নিগ্রহ করতে দেখা যাচ্ছে এক মৌলবিকে। ভিডিওটি সংবেদনশীল হওয়ায়, আমরা সেটি এখানে শেয়ার করছিনা।
দক্ষিণপন্থী পেজ 'কট্টর হিন্দু', 'কট্টর হিন্দু ধ্রুব পাণ্ডে' ও 'পিএম নরেন্দ্র মোদী ফ্যান ক্লাব' থেকে ভিডিওটি শেয়ার করা হয়েছে। সেটির সঙ্গে দেওয়া একটি অশ্লীল ক্যাপশনে বলা হয়েছে, "মাদ্রাসায় এক মেধাবি ছাত্রীকে রকেট বিজ্ঞান শেখাচ্ছেন মৌলবি।"
(হিন্দিতে লেখা ক্যাপশন: मदरसे में मौलवी साहब अपनी एक होनहार छात्रा को रॉकेट साइंस के बारे में गहन ज्ञान देते हुए)
ভাইরাল ভিডিওটি থেকে বুম একটি স্ক্রিনশট নিয়ে, 'টিনআই'-এর সাহায্যে রিভার্স ইমেজ সার্চ করে। তার ফলে, ১০ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে ওয়েব পোর্টাল 'ডেইলি পাকিস্তান'-এ প্রকাশিত একটি লেখা সামনে আসে। তাতে ওই একই ভিডিও থেকে নেওয়া একটি স্ক্রিনগ্রাব ছিল লেখাটির সঙ্গে।
লেখাটিতে অভিযুক্তকে পকিস্তানের ঝঙ্গ অঞ্চলের শিক্ষক আনওয়ার-উল-কামার বলে শনাক্ত করা হয়। এর পর আমরা 'আনওয়ার-উল-কামার', 'পাকিস্তানি টিচার', 'মলেস্টেশন' ও 'পাকিস্তান' – এই কি-ওয়ার্ডগুলি দিয়ে সার্চ করি।
তার ফলে, ওই বিচলিত করার মত ঘটনাটি সম্পর্কে বেশ কিছু সংবাদ প্রতিবেদন ও টুইট দেখতে পাই আমরা।
১০ অক্টোবর ২০১৮ তে পাকিস্তানি ওয়েবসাইট 'জিও টিভি'-তে প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়, ভিডিওটিতে যে ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে, তার নাম আনওয়ার-উল-কামার। দু'মাস আগে এক ছাত্রীকে যৌন নিগ্রহ ও সেই ঘটনার ভিডিও তোলার জন্য তাকে গ্রেফতার করা হয়।
পুলিশকে উদ্ধৃত করে রিপোর্টটিতে বলা হয়, কামার ঝঙ্গ অঞ্চলের একজন স্কুল শিক্ষক। সে ১৩ বছরের একটি মেয়েকে যৌন হেনস্তা করে এবং সেই অপকর্মের ভিডিও তুলে রাখে। "এর পর কামারের মোবাইল ফোন হারিয়ে যায়। এবং যে ব্যক্তি সেটি পায়, সে ভিডিওটি ইন্টার্নেটে আপলোড করে," বলা হয় জিও টিভির রিপোর্টে।
সেই লেখাটির সঙ্গে পাকিস্তানের মানবাধিকার মন্ত্রী শিরিন মাজারির টুইটও দেওয়া হয়। তাতে মন্ত্রী ঘটনাটি উল্লেখ করে আনওয়ার-উল-কামারের গ্রেফতারির কথা জানান।
তাঁর টুইটে, মাজারি অভিযুক্তের ছবি ও এফআইআর-এর প্রতিলিপি শেয়ার করেন। পাকিস্তানের তোবা টেক সিং-এর পীর মহল থানায় এফআইআর'টি নথিভুক্ত করা হয়।
'দ্য এক্সপ্রেস ট্রিবিউন'-এও একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়। তাতে বলা হয়, কামার হলেন একজন 'কারি সাহাব', যাঁর কাজ হল মসজিদে ও বাচ্চাদের কোরান শেখানো।
১৩ অক্টোবর ২০১৮ তারিখের একটি ফেসবুক পোস্টও আমাদের নজরে আসে। তাতে কামারের ছবি ছিল এবং তাঁকে তীব্র ভাষায় ভর্ৎসনা করা হয়।
বুম কামারের একটি রেকর্ড করা বিবৃতিরও হদিস পায়। তাতে কামার নিজের অপরাধ স্বীকার করে। কিন্তু বলে সে ওই নাবালিকাকে ধর্ষণ করেনি।
ওই ভিডিওটিতে কামার বলে যৌন নিগ্রহ করার ক্লিপটি সে নিজেই রেকর্ড করেছিল। সে আরও বলে যে, সে ক্লিপটি ডিলিট করে দিয়েছিল। তা সত্ত্বেও সেটি কী করে ইন্টারনেটে চলে যায়, তা সে বুঝতে পারছে না।