গুজব সতর্কতা: করোনাভাইরাস নিয়ে ভাইরাল হল ভুয়ো ''জরুরি বিজ্ঞপ্তি"
ভারত এই পর্যন্ত কেবল চিনযাত্রীদের জন্য একটি যাত্রী-নির্দেশিকা জারি করেছে এবং করোনাভাইরাস মোকাবিলায় স্বাস্থ্য-পরিষেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলিকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
![গুজব সতর্কতা: করোনাভাইরাস নিয়ে ভাইরাল হল ভুয়ো জরুরি বিজ্ঞপ্তি গুজব সতর্কতা: করোনাভাইরাস নিয়ে ভাইরাল হল ভুয়ো জরুরি বিজ্ঞপ্তি](https://bangla.boomlive.in/h-upload/2020/01/29/823214-823207-fi.webp)
করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ভারতীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক একটি জরুরি বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে বলে যে হোয়াটসঅ্যাপ বার্তাটি ভাইরাল হয়েছে, সেটি ভুয়ো।
ভারতীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক কেবল এই মারণ রোগের উৎসস্থল চিনে যাওয়া-আসা করা যাত্রীদের জন্য একটি নীতিমূলক পরামর্শ প্রণয়ন করেছে।
হোয়াটসঅ্যাপ এমনকী ফেসবুকেও ভাইরাল হওয়া ভুয়ো বার্তায় বলা হয়েছে, ২০২০ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত সবসময় গলা ভিজিয়ে রাখতে হবে এবং জনস্থান এড়িয়ে চলতে হবে।
বুম তার হোয়াটসঅ্যাপ হেল্পলাইন নম্বরেও বিভিন্ন পাঠকের কাছ থেকে এই বার্তার সত্যতা যাচাই করার অনুরোধ পেয়েছে।
ফেসবুকেও অনেকেই এই বার্তাটিকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের জারি করা জরুরি সরকারি বিজ্ঞপ্তি হিসাবে শেয়ার করেছে।
তথ্য যাচাই
ভাইরাল হওয়া বার্তাটি আদৌ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের কোনও জরুরি বিজ্ঞপ্তি নয়। ভারত সরকার এখনও পর্যন্ত কেবল চিনযাত্রী এবং চিন-ফেরত যাত্রীদের ক্ষেত্রে করোনাভাইরাস বিষয়ে একটি নির্দেশিকা এবং স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারীদের জন্য কিছু নীতিনির্দেশ জারি করেছে।
১৭ জানুয়ারি জারি হওয়া এই নীতিনির্দেশ ২৫ জানুয়ারি চিনে রোগাক্রান্তদের মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এবং অন্যান্য দেশেও সংক্রমণের খবর মেলার পর সংস্করণ করা হয়। সেই সঙ্গে যে সব ভারতীয়ের জ্বর, নাক দিয়ে জল পড়া, সর্দিকাশি ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দিচ্ছে, মন্ত্রক থেকে তাদের জন্য একটা হেল্পলাইন নম্বরও (০১১-২৩৯৭৮০৪৬) চালু করা হয়েছে।
নীতিনির্দেশে রোগ প্রতিরোধ এবং সতর্কতামূলক কিছু ব্যবস্থার কথাও বলা হয়েছে, যেমন ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা রক্ষা করা, মুখোশ ব্যবহার করা এবং সংক্রামিতদের সংশ্রব এড়িয়ে চলা।
সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রদানকারীদের জন্য ২৬৪ পৃষ্ঠার একটি বিস্তারিত বিবরণীও প্রকাশ করা হয়েছে, যাতে কীভাবে রোগের সংক্রমণ এবং রোগাক্রান্তদের চিকিৎসা ও শুশ্রূষা করা যেতে পারে, সে বিষয়ে ধারণা দেওয়া হয়েছে।
এই নীতিগত পরামর্শে 'গলা শুকিয়ে যাওয়া'র ব্যাপারে কিংবা কোনও 'নির্দিষ্ট তারিখ পর্যন্ত জনস্থান এড়িয়ে চলা'র কোনও কথাই নেই।
মন্ত্রকের সরকারি টুইটার হ্যান্ডেলেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দেওয়া রোগ প্রতিরোধের সুপারিশগুলি উল্লেখিত হয়েছে।
Some preventive measures against Novel #coronavirus :#ncov2020#HealthForAll@PMOIndia @drharshvardhan @AshwiniKChoubey @PIB_India @DDNewslive @airnewsalerts pic.twitter.com/4TvVOB3P12
— Ministry of Health (@MoHFW_INDIA) January 28, 2020
বর্তমানে সংক্রমণশীল করোনাভাইরাস যেহেতু বায়ু-বাহিত, তাই অনেক স্বাস্থ্য-বিশেষজ্ঞ বায়ুকণার হাত থেকে বাঁচতে মুখোশ ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন। তার বাইরে পৃথিবীর কোনও দেশেরই গবেষক বা বিশেষজ্ঞরা গলা শুকিয়ে যাওয়া কিংবা একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ জল খাওয়ার ব্যাপারে কোনও পরামর্শ দেননি।
তা ছাড়া, ভারত জল মাপার জন্য ঘন-সেন্টিমিটারের একক ব্যবহার করে না, এই মেট্রিক পরিমাপ ব্যবহার করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। বুম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় স্বাস্থ্য সংস্থা সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি)-তেও খোঁজখবর করে দেখেছে, 'জল' এবং 'মার্চ ২০২০' নিয়ে কোনও বক্তব্য সেখানে নেই। নীতিনির্দেশে জল-এর উল্লেখ রয়েছে কেবল হাত ধোয়া এবং পরিশোধন প্রসঙ্গে।
ভাইরাল হওয়া বার্তায় রটানো হয়েছে যে, ২০২০ সালের মার্চ অবধি ভিড়ে ভরা জনস্থান এড়িয়ে চলতে। যেহেতু করোনাভাইরাস এখনও যথাযথভাবে শনাক্ত করাই সম্ভব হয়নি, তাই তার গতিপ্রকৃতি এবং তার সংক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার ব্যাপারেও নির্দিষ্ট করে কোনও সন-তারিখ নির্ধারণ করা যায় না। এমন হতেই পারে যে, ২০২০ সালের মার্চের আগেই বিজ্ঞানীরা এই জীবাণুর উত্স এবং তার প্রতিষেধক বার করে ফেলতে পারবেন।
করোনাভাইরাসের সঙ্গে মশলাদার খাবার খাওয়া কিংবা শরীরে ভিটামিন সি-র ঘাটতির কোনও সম্পর্কও প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তাই এ সংক্রান্ত সতর্কতাও বৈজ্ঞানিক ভিত্তিহীন।
এর সঙ্গে প্রচার করা হচ্ছে যে, শিশুরা নাকি সহজে এই ভাইরাসের শিকার হতে পার। এসএআরএস এবং এমইআরএস-এর মতো তীব্র শ্বাসকষ্টজনিত রোগের প্রকোপের ক্ষেত্রেও কিন্তু দেখা গেছে, এই সব রোগে শিশুরা সবচেয়ে কম আক্রান্ত হয়েছে, যা এই নিবন্ধটি পড়লেই স্পষ্ট হয়।
এই রোগে ইতিমধ্যেই চিনে শতাধিক মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন। এই লেখার সময় পর্যন্ত একজন ভারতীয়েরও এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার খবর নেই।