গত সপ্তাহে, সোশ্যাল মিডিয়ার একটি ভাইরাল ম্যাসেজ দাবি করে যে ৩০০র বেশি পাখি 5 জি নেটওয়ার্কের শিকার হয়েছে নেদারল্যান্ডসের হেগ এ। ভারতিয় খবরের ওয়েবসাইট গুলিও প্রতিবেদনটি শেয়ার করে নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়া পেজে যার মধ্যে
Zee News ,
Zee 24, News 18, এবং বাংলাদেশের যুগান্তর অন্যতম। প্রতিবেদনটির ফোকাস ছিল কিভাবে নেদারল্যান্ডসের মোবাইল প্রযুক্তি এবং 5 জি নেটওয়ার্ক বন্যপ্রাণীর বড় আকারে বিলুপ্ত হওয়ার কারণের জন্যে দায়ী। তবে, দাবি সম্পূর্ণরূপে বিভ্রান্তিকর। বন্যপ্রাণীদের মৃত্যু কোনও ভাবেই 5 জি নেটওয়ার্কের পরীক্ষার কারণে নয়। প্রকৃতপক্ষে, সম্প্রতি মুক্তিপ্রাপ্ত রজনীকান্ত ও অক্ষয় কুমার অভিনীত 2.0, ম্যাসেজটি ভাইরাল হওয়ার একটি ভূমিকায় আছে। ছবির একটি সাব প্লট পাখি এবং মৌমাছিদের উপর মোবাইল নেটওয়ার্ক বিকিরণগুলির খারাপ প্রভাবএর উপর।
আন্তর্জাতিক ফ্যাক্ট চেকার
Snopes বিস্তারিত তথ্য যাচাই করে দেখায় যে কীভাবে পাখিদের রহস্যজনক মৃত্যু বিষাক্রিয়ার জন্যে হতে পারে এবং ৫ জি নেটওয়ার্ক এর জন্যে নয়।
Snopes এর মতে, এই পোস্টগুলি 5 নভেম্বরের একটি প্রতিবেদন থেকে এসেছে 'Hundreds of birds dead during 5G experiment in The Hague, The Netherlands'
Health Nut News এ। প্রতিবেদনটি একটি কন্সপিরেসি ব্লগের অংশ। Snopes এর গবেষণার একটি বিস্তারিত রিপোর্ট -
(https://www.snopes.com/fact-check/5g-cellular-test-birds/) Snopes এর রিপোর্ট অনুযায়ী তথ্যগুলি জন খিউলের ফেসবুক পোস্টের একত্রিতকরণ। তিনি 5 জি বিরোধী। এটা সত্যি যে এই বছর অক্টোবরে হিউজেনসপার্কে বিপুল সংখ্যক পাখি মারা গিয়েছিল। যেটি প্রশাসন, পশু প্রেমীদের মধ্যে চরম উদ্বেগ সৃষ্টি করে। কিন্তু মৃত্যুর কারণ 5 জি নেটওয়ার্ক-পরীক্ষা নয়। পাখিদের মৃত্যুর পর স্থানীয় সরকার কুকুরদের নিষিদ্ধ করে। রিপোর্টটি এখানে দেখা যাবে।
(https://www.denhaag.nl/en/in-the-city/news/huygenspark-ban-on-dogs-lifted.htm). বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে 5 জি নেটওয়ার্ক পাখিকে এভাবে প্রভাবিত করতে পারেনা। দিপতর্ক দাশ, আইআইটি কানপুরের ফিজিক্স বিভাগের শিক্ষক এবং ম্যাক্স প্ল্যানক ইউনিভার্সিটি, জার্মানির প্রাক্তন গবেষক, ব্যাখ্যা করেন, "পাখিদের শ্রবণযোগ্য রেঞ্জগুলি মানুষ, বিড়াল, কুকুর ইত্যাদি অন্যান্য প্রাণীর সাথে উল্লেখযোগ্যভাবে ওভারল্যাপ করে। সেই কারণে এটি অবিলম্বে সন্দেহ সৃষ্টি করে যেহেতু সংবাদ রিপোর্ট শুধুমাত্র পাখিদের মৃত্যুর বিষয়ে আলোচনা করে। সিগন্যালিং টাওয়ারগুলি দ্বারা নির্গত ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক বিকিরণ এস-তরঙ্গ প্রেরণ করে যা গোলাকারভাবে সমমানের। তরঙ্গগুলি সাধারণত ভাবে উড়ন্ত পাখিদের কাছে পৌঁছে যায় না এবং মানুষের ও ভূগর্ভস্থ প্রাণীদের কাছেও পৌঁছায়। 5 জি নেটওয়ার্কের পরীক্ষা চীনে ব্যাপক পরিমাপে সূচনা হয়েছে, তবে এ ধরনের কোনও ঘটনা ঘটেনি চীনে। 5 জি 4 জি এর থেকে উচ্চতর - এটি আরও তথ্য স্থানান্তর করতে পারে এবং কম বিলম্বের সাথে আরও ডিভাইসগুলিকে সমর্থন করতে পারে। কিন্তু 5 জি প্রযুক্তি প্রচলিত প্রাথমিক নেটওয়ার্ক সেট আপ 4G র উপর নির্ভরশীল। একটি পরিমাণগত ভাবে 5 জি প্রযুক্তি অনন্য – যার কারণ প্রযুক্তির ফ্রিকোয়েন্সি রেঞ্জ। 5 জি মিলেমিটার পরিসীমা ব্যবহার করে, উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি রেডিও তরঙ্গ, যেহেতু প্রজুক্তির জন্যে অনেক ব্যান্ডউইথ পাওয়া যায়। উচ্চ ফ্রিকোয়েন্সি যদিও বৃহত্তর 'ফল অফ' বোঝায়। তাই জন্যে নেটওয়ার্ক বজায় রাখার জন্য ছোট ডিভাইস প্রয়োজন হয়। যেহেতু 5 জি প্রযুক্তির 'ফল অফ এত বেশি, এটি একটি বিস্ময়কর ব্যাপার যে এটি উড়ন্ত প্রাণীদের প্রভাবিত করেছে। নিম্ন ফ্রিকোয়েন্সি ছোট বস্তু অনুসন্ধান করতে পারে না। যদিও পূর্ববর্তী প্রজন্মের তুলনায় 5 জি প্রযুক্তির ফ্রিকোয়েন্সি উচ্চতর, এটি এখনও মিলিমিটার পরিসর 0.001 মির মধ্যে। জীবন্ত কোষটি 3 টি অর্ডার ম্যাগ্নিতিউদ ~ 0.000001 মিটার চেয়ে ছোট আকারের। এটা 5 জি তরঙ্গের কাছে কার্যকরভাবে অদৃশ্য। সুতরাং সেলুলার পর্যায়ে 5 জি বিকিরণ এর কোন প্রভাব অসমভব। এখনও মানুষের বা এমনকি পশু মস্তিষ্কের উপর ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক তরঙ্গ প্রভাব সম্পর্কিত অনেক পরীক্ষা হয়নি। যদিও এই গবেষণা গুরুত্বপূর্ণ (প্রধানত আমাদের মস্তিষ্কের কাজ বোঝার জন্য), কিন্তু তথ্য বিজ্ঞানের অসংখ্য সুবিধাগুলির মধ্যে অন্যতম হল স্বাস্থ্য প্রযুক্তিতে উন্নতি, যেটি 5G নিয়ে আসতে পারে । সুতরাং নতুন প্রযুক্তিতে উন্মুক্ত মন রাখা আমাদের পক্ষে ভাল হবে। বৈজ্ঞানিকভাবে এটি সম্ভাব্য বিপদজনক স্তরের সমান হবে যেমন আমাদের মহাবিশ্বের প্রকৃত ভ্যাকুয়াম দেওয়ালের মতো একটি প্রাচীরের যেটি আমাদের গ্যালাক্সিটির কাছে পৌঁছাতে পারে বা কালো গর্তের দিগন্তের মতো।"