নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২,৭৩০ কোটি টাকার দুর্নীতির একটি কেচ্ছায় নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেনের জড়িত থাকার অভিযোগের একটি ভুয়ো বার্তা জিইয়ে তুলে হোয়াটসঅ্যাপে ভাইরাল করা হয়েছে।
গত এপ্রিল মাসে টাইমস অফ ইন্ডিযার বরিষ্ঠ সম্পাদক ভারতী জৈনের একটি টুইটের সূত্রে একই ধরনের একটি ভুয়ো খবর ভাইরাল হয়েছিল। বুম পরে সেই ভুয়ো খবরগুলি খন্ডন করেছিল।
এ বারও সেই খবরটি জিইয়ে তোলার উপলক্ষ হল পশ্চিমবঙ্গে ধর্মকে রাজনীতির স্বার্থে অপব্যবহার করা নিযে ৮৫ বছর বয়স্ক এই প্রবীণ অর্থনীতিবিদের একটি মন্তব্য এবং “জয় শ্রীরাম” ধ্বনির এ রাজ্যে একটি রাজনৈতিক স্লোগান হয়ে ওঠা নিয়ে তাঁর সুচিন্তিত মতামত।
একটি খন্ডন করা খবরের পুনরুত্থান
২০১৯ সালের ৯ জুলাই বুম তার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে একটি বিশদ বার্তা পায়, যাতে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২,৭৩০ কোটি টাকার একটি আর্থিক কেলেঙ্কারিতে অমর্ত্য সেন এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের তিন কন্যা উপিন্দর সিং, দমন সিং ও অমৃত সিংয়ের জড়িত থাকার অভিযোগ বর্ণনা করা হয়।
একই সঙ্গে বুম একটি ফোটোও হাতে পায়, যেখানে ওই একই ভুয়ো খবর বাংলায় ছবি সহ ছাপা হয়েছে এই হেডিং দিয়ে যে, “অমর্ত্য সেন ও একটি স্ক্যাম”
ফেসবুকে ক্যাপশনের সাহায্যে আমরা খুঁজে দেখেছি, ভুয়ো খবরটি সোশাল মিডিয়াতেও জিইয়ে তোলা হয়েছে।
সোশাল মিডিয়ার সবকটি বার্তাতেই ভারতী জৈনের টুইটের একটি লিঙ্ক জুড়ে দেওয়া হয়েছে, যা এখন ডিলিট করে দেওয়া হয়েছে।
ফিরে দেখা
এ বারের ভাইরাল বার্তাটির সঙ্গে ২৮ এপ্রিল বুমের পাওয়া বার্তাটির আশ্চর্য মিল, যাতে অমর্ত্য সেনের বিরুদ্ধে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল তছরুপের ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হওয়ার অভিযোগ তোলা হয়েছিল।
বার্তাটি ভাইরাল হবার পরেই টাইমস অফ ইন্ডিয়ার আন্তঃ নিরাপত্তা সম্পাদক ভারতী জৈন টুইটারে বার্তাটির উৎস হিসাবে ‘সরকারি সূত্র’-এর উল্লেখ টুইট করেন।
মজার ব্যাপার হল, ভারতী জৈন পরে তাঁর টুইটটি মুছে দিলেও এবং তার বিষয়বস্তু ভ্রান্ত তথ্যের উপর ভিত্তি করে রচিত হয়েছিল বলে জানালেও, নতুন করে জিইয়ে তোলা ভাইরাল বার্তাগুলিতে সেই ভারতী জৈনের পুরনো টুইটকেই খবরের উত্স হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
আমাদের বিস্তারিত তথ্য যাচাই
দু মাস আগে যখন ভারতী জৈনের টুইটটি ভাইরাল হয়, তখনই বুম অভিযোগের প্রতিটি দিক পুঙ্খানুপঙ্খুভাবে যাচাই করে দেখেছিল যে, প্রতিটি অভিযোগই ডাহা মিথ্যা এবং বিভ্রান্তিকর।
টুইট বার্তায় দাবি করা হয়:
১) নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন (যিনি তাঁর মেয়াদের অধিকাংশ সময় বিদেশেই থাকতেন) মাসে ৫ লক্ষ টাকা করে বেতন পেতেন। করমুক্ত নানাবিধ সুযোগসুবিধা, যথেচ্ছ বিদেশভ্রমণ, বিলাসবহুল হোটেলে মিটিং করা এবং যাকে খুশি অধ্যাপক পদে নিয়োগ করার অবাধ স্বাধীনতাও তাঁকে দেওয়া হয়।
২) তাঁর সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট ২৭২৯ কোটি টাকা খরচ হয়।
৩) ডঃ গোপা সাবরওয়াল, ডঃ অঞ্জনা শর্মা, ডঃ নয়নজ্যোত লাহিড়ি এবং মনমোহন সিংয়ের কন্যা উপিন্দর সিং —দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের এই চারজনকে তিনি অধ্যাপক নিয়োগ করেন।
৪) মনমোহন সিংয়ের অন্য দুই কন্যা দমন সিং এবং অমৃত সিংকেও সাম্মানিক পদে নিয়োগ করা হয়, যাঁরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থেকেই নিয়মিত প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন পেতেন।
৫) ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর এই প্রতারণা বন্ধ হয় এবং অমর্ত্য সেন চ্যান্সেলরের পদ থেকে বিতাড়িত হন।
বলা বাহুল্য, এর প্রতিটি অভিযোগই সর্বৈব মিথ্যা এবং ভুয়ো। প্রতিবেদনের নীচের অংশটি ইতিপূর্বে একই বিষয়ে বুম-এর খন্ডন করা রিপোর্ট থেকে নেওয়া।
রিপোর্টটি হল: টাইমস অফ ইন্ডিযার বরিষ্ঠ সম্পাদক একটি বিভ্রান্তিকর টুইটে অমর্ত্য সেনকে আক্রমণ করে লেখা একটি হোয়াটঅ্যাপ বার্তাকে সরকারি সূত্র বলে ধরে নিয়েছেন।(ক্লিক করুন)