সংবিধানের ৩৭০ নং ধারা, যা জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যকে বিশেষ মর্যাদা দিয়েছিল, তা বাতিল করার কথা রাজ্যসভায় ঘোষণা করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। বিরোধীরা প্রতিবাদে সরব হলেও, শাহ বলেন, সরকার সংবিধানের ৩৭০ নং ধারা বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ছাড়াও তিনি ‘জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর রিঅরগানাইজেশন বিল, ২০১৯’ (বা জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্বিন্যাস বিল, ২০১৯) পেশ করেন। সেই বিল অনুযায়ী, ওই রাজ্যকে ভাগ করে দেওয়া হবে জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ- এই দুই কেন্দ্র-শাসিত অঞ্চলে।
জম্মু ও কাশ্মীর হবে বিধানসভা সম্বলিত একটি কেন্দ্র-শাসিত অঞ্চল। কিন্তু প্রস্তাবিত কেন্দ্র-শাসিত লাদাখে কোনও বিধানসভা থাকবে না।
বেশ কয়েকদিন ধরে কাশ্মীর উপত্যকায় অস্থিরতা চলছিল। এরপর সেখানে বড় মাত্রায় সুরক্ষা বাহিনী মোতায়েন করা হয়।এবং শ্রীনগরে জারি করা হয় ১৪৪ ধারা (যা এক জায়গায় পাঁচ জনের বেশি ব্যক্তির জমায়েত নিষিদ্ধ করে)। এছাড়াও সে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি ও ওমর আবদুল্লাকে গৃহবন্দী করা হয়। এই পদক্ষেপগুলি নেওয়ার পরই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ওই ঘোষণা করেন।
রাষ্ট্রপতি কোবিন্দ আদেশ সই করেন
রাষ্ট্রপতি কোবিন্দ ‘কনস্টিটিউশন (অ্যাপলিকেশন অফ জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর) অর্ডার ২০১৯-এ স্বাক্ষর করেছেন। এই নতুন অর্ডার ১৯৫৪ সালে রাষ্ট্রপতির অর্ডার বাতিল করে দেয়। আগের অর্ডারটি সই করেছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রাজেন্দ্র প্রসাদ। যার সুবাদে সংবিধানের ৩৫-এ ধারাটি সৃষ্টি হয়। তবে ৩৭০ নং ধারা বাতিল করার জন্য সংসদের উভয় কক্ষেই চাই দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা। যেমনটি বলা আছে এখানে।
রাষ্ট্রপতির আদেশ দেখা যাবে এখানে।
ভারতের সঙ্গে সংযুক্তির শর্ত হিসেবে, ৩৭০ নং ধারা জম্মু ও কাশ্মীরকে বিশেষ ক্ষমতা দেয়। আর ৩৫এ ধারায় বলা আছে কারা ওই রাজ্যের স্থায়ী বাসিন্দা হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
দুটি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলের জন্ম
জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যটিকে এখন দুভাগে ভাগ করা হবে।
- এগুলির মধ্যে প্রথম কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল হবে জম্মু ও কাশ্মীর, যার থাকবে আইন প্রণয়নকারী বিধানসভা। দিল্লি রাজধানী অঞ্চল আর পডুচেরির মত হবে ওই বিধানসভার কাঠামো।
- দ্বিতীয়টি হবে লাদাখ। কিন্তু তার কোনও বিধানসভা থাকবে না। বলা হচ্ছে, ওই দুটি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলেরই থাকবে নিজস্ব উপ রাজ্যপাল।
এ সব তথ্য জম্মু ও কাশ্মীর পুনর্বিন্যাস ২০১৯ বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সংক্রান্ত বিবরণ থেকে পাওয়া যায়।
অমিত শাহ এসব বিষয়ে রাজ্যসভার সদস্যদের অবহিত করার সঙ্গে সঙ্গে নীচের স্ক্রিনশটটি সোশাল মিডিয়ায় প্রচারিত হতে থাকে। বিলটির বিষয়বস্তু এখনও সংসদের মাধ্যমে জনসমক্ষে আনা হয়নি।
কার কেমন প্রতিক্রিয়া
শাহর বিবৃতির পর, রাজ্যসভায় হট্টগোল শুরু হয়ে যায়।
কিন্তু অমিত শাহ স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে, সরকার তাদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত করতে বদ্ধপরিকর।
এরই মধ্যে, জম্মু ও কাশ্মীরের পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টির সাংসদরা সংসদ ভবনের সামনে পোড়ায় সংবিধানের কপি।
প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী পিডিপি’র মেহবুবা মুফতি তাঁর প্রতিবাদ টুইট করেন।
প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি ওই সিদ্ধান্তকে যুগান্তকারী বলে বর্ণনা করেন। ওই পদক্ষেপের ফলে, অনেক অস্থায়ী ব্যবস্থা বাতিল হয়ে যাবে।
বিরোধী দলগুলির মধ্যে, বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি) এবং বিজু জনতা দল (বিজেডি) এই পদক্ষেপ সমর্থন করেছে।