মুসলমানরা পশ্চিমবঙ্গে বিরাট বড় আকারের দাঙ্গা ছড়াচ্ছে বলে দাবি করে যে ভিডিওটি সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে, সেটি আসলে বাংলাদেশের গাজিপুরের টঙ্গি টাউনশিপের।
সোশ্যাল মিডিয়া ও হোয়্যাটসঅ্যাপে ভিডিওটি ব্যাপক ভাবে প্রচারিত হচ্ছে। সেই ভিডিওর সঙ্গেই লেখা আছে পশ্চিমবঙ্গে ইসলামি সন্ত্রাসবাদ ছড়িয়ে পড়ার কথা। ভিডিওটির সঙ্গে পোস্টে হিন্দিতে যে কথাগুলি লেখা রয়েছে, তাকে বাংলায় অনুবাদ করলে দাঁড়ায়, “২০১৯ সালে যাঁদের পদ্মফুলে ভোট দিতে অসুবিধা আছে তাঁরা এই রকম ভবিষ্যতের জন্য তৈরি থাকুন। এই হল ভারতের ভবিষ্যৎ। বাংলায় ইসলামিক সন্ত্রাসের একটি ঝলক। দয়া করে মানুষকে সতর্ক করতে এটি যত বেশি সম্ভব শেয়ার করুন”।
পোস্টটির আরকাইভড ভার্সান দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
একটি বাড়ির ছাদ থেকে তোলা ভিডিওটিতে আছে শুধু হিংসার ছবি। প্রচুর মানুষকে লাঠি হাতে পরস্পরকে আক্রমণ করতে দেখা যাচ্ছে। তাঁরা যে ইসলাম ধর্মাবলম্বী, ভিডিও দেখে তাও বোঝা যাচ্ছে। ২.১৮ মিনিটের ভিডিওটি জুড়ে রয়েছে লুঙ্গি, কুর্তা ও টুপি পরিহিত মানুষের মারপিটের ও হিংসার ছবি।
অল্ট নিউজ আগেই এই খবরটির তথ্য যাচাই একটি প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছে।
তথ্য যাচাই
ক্লিপটি আসলে পশ্চিমবঙ্গের নয়, বাংলাদেশের। বুম ভিডিওটি বিশ্লেষণ করে দেখেছে, এবং জেনেছে যে পশ্চিমবঙ্গে সাম্প্রতিক কালে এ রকম কোনও ঘটনার রিপোর্ট নেই। তা ছাড়াও, ভিডিওটিতে যে সব কথা শোনা গেছে তার উচ্চারণও পূর্ববঙ্গের মতো।
২০১৮-র ডিসেম্বর মাসের গোড়ার দিকে এই রকম ভিডিও, কিন্তু অন্য গল্প সমেত, পোস্ট করা হয়েছিল। আমরা কিছু নির্দিষ্ট শব্দ (‘মুসলিম ক্ল্যাশ বেঙ্গল’) সার্চ করে দেখি, এটি আসলে তাবলীগই জামাতের দুটি গোষ্ঠীর সংঘর্ষ। তাবলীগই জামাত হল দেওবন্দী ভাবধারার একটি ইসলামী গোষ্ঠী যার সদস্যরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে ধর্ম সম্বন্ধে চর্চা এবং সাধারণ মানুষকে ধর্মপালনে উৎসাহ দিয়ে থাকেন। খবরটি বাংলাদেশের স্থানীয় খবরের কাগজেও প্রকাশিত হয়েছিল।
বাংলাদেশের একটি প্রতিষ্ঠিত সংবাদমাধ্যমের ওয়েবসাইটে জানানো হয়েছে যে তাবলীগই জামাতের গোষ্ঠী সংঘর্ষে টঙ্গিতে এক জন মৃত, আহত দুশোরও বেশি মানুষ। খবরে প্রকাশ, বিশ্ব ইজেতেমা মাঠের দখল নিয়ে তাবলীগই জামাতের দুটি দলের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। বিশ্ব ইজতেমা টঙ্গিতে মুসলিমদের বার্ষিক একটি মিলনস্থল। এটি ঢাকার উপান্তে তুরাগ নদীর ধারে অবস্থিত। এটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় শান্তিপূর্ণ ধর্মীয় সমাবেশগুলির মধ্যে একটি। এখানে ১৫০টি দেশ থেকে পুণ্যার্থীরা একত্রিত হন। দাঙ্গারত দল দুটির একটি ভারতীয় ধর্মপ্রচারক মৌলানা সাদ কান্ধালভির সমর্থক, অন্যটি বাংলাদেশের মৌলানা জুবায়েরের সমর্থক।
২০১৮-র ১ ডিসেম্বর ঢাকা ট্রিবিউনের রিপোর্টে বলা হয়, “ভারতীয় ধর্ম প্রচারক মৌলানা সাদ কান্ধালভির সমর্থক ও বাংলাদেশের মৌলানা জুবায়েরের সমর্থকরা সকাল থেকে বিক্ষিপ্ত আক্রমণ ও প্রতিআক্রমণে জড়িয়ে পড়ে।”
অন্য একটি সংবাদমাধ্যমের প্রকাশিত খবরে দেখা যাচ্ছে, ইজতেমা মাঠের দখল নিয়ে তবলীগের দুই দলের সংঘর্ষে এক জন নিহত। আসলে এটি দুটি গোষ্ঠীর সংঘর্ষ। সত্তর বছর বয়সী এক ব্যক্তি এই সংঘর্ষে প্রাণ হারান ও প্রায় ২০০ জন আহত হন। এখানে ঢাকা ট্রিবিউনের রিপোর্টটি ও এখানে bdnews24.com’s খবরটি পড়তে পারেন।