একটি সাদা-কালো ছবিতে দেখানো হচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি একটি লকার থেকে নিচু হয়ে টাকার বান্ডিল তুলছেন । ফেসবুকে শেয়ার হওয়া ছবিটির ক্যাপশন—কালীঘাটের সিসিটিভি ফুটেজ থেকে নেওয়া। সিসিটিভি ফুটেজের ফরম্যাট অনুসারে ছবিটির রঙ সম্পাদনা করা হয়েছে । প্রসঙ্গত, দক্ষিণ কলকাতার কালীঘাটেই মমতা ব্যানার্জি থাকেন ।
ছবিটি অনুসন্ধান করে আমরা দেখেছি, এটি কলকাতার একটি লকারের ছবি, যেখান থেকে এক তামিল ব্যবসায়ী একটা ভুয়ো লটারি কোম্পানি চালাতেন এবং হাওয়ালা মারফত সেই টাকা দুবাইয়ে চোরাচালান করতেন। ছটি জায়গা থেকে এমন কোটি-কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছিল, যার খবর ২০১৫ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর হিন্দু সংবাদপত্রে প্রকাশিত হয় । বোঝাই যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর ছবিটি ফোটোশপ করে জোড়া হয়েছে, যাতে মনে হয় যেন তাঁর বাড়িতেই আলমারি-ভর্তি টাকার বান্ডিল রাখা আছে ।
নারদা চিটফান্ড কেলেংকারিতে জড়িত সন্দেহে মমতা ব্যানার্জির নেতৃত্বাধীন তৃণমূল কংগ্রেস বর্তমানে সিবিআইয়ের তদন্তের সম্মুখীন । গত সপ্তাহেই সিবিআই অফিসাররা যখন সারদা কেলেংকারির গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র লুকিয়ে রাখা বা নষ্ট করে ফেলার সন্দেহে কলকাতা পুলিশের কমিশনার রাজীব কুমারের বাড়িতে হানা দেন, তখন কলকাতা একটি রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় । রাজ্য পুলিশ সিবিআই অফিসারদের আটক করে এবং তাঁদের শারীরিক নিগ্রহও করে । ঘটনা আচমকা নাটকীয় মোড় নেয়, যখন মমতা ব্যানার্জি পরোয়ানা ছাড়াই পুলিশ কমিশনারের বাড়িতে হানা দেওয়ার প্রতিবাদে ৩ ফেব্রুয়ারি থেকে চার দিনের ধর্নায় বসে যান ।
ইতিমধ্যে সিবিআই এবং রাজ্য পুলিশ উভয়েই একই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় এবং শীর্ষ আদালত অপেক্ষাকৃত শীতল স্থান শিলঙে জিজ্ঞাসাবাদ চালানোর নির্দেশ দিয়েছে।
সারদা কেলেংকারি ফাঁস হওয়ার পর মমতা ব্যানার্জি রাজ্য পুলিশের অফিসারদের নিয়ে একটা বিশেষ তদন্তকারী দল গঠন করেন । রাজীব কুমারকে সেই দলের নেতৃত্ব দেওয়া হয় । সারদা কেলেংকারির আর্থিক মূল্য ২৫ হাজার কোটি টাকা । চিট ফান্ড কোম্পানিগুলি আমানতকারীদের প্রতারিত করে এবং মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরেও তাদের প্রাপ্য টাকা ফেরত দেয় না । পরে কোম্পানি বন্ধ করে দেওয়া হয় । এরপর ২০১৪ সালে সুপ্রিম কোর্ট কেলেংকারির তদন্তের ভার সিবিআইকে হস্তান্তরিত করে ।