উত্তর চব্বিশ পরগণার ঠাকুরনগরের বিজেপি নেতা শান্তনু ঠাকুর মতুয়া সম্প্রদায়ের বড়মা বীণাপাণি দেবীর একটি চিঠি প্রকাশ করেছেন, যাতে বড়মা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অনুরোধ করেছেন, তিন দিন আগে রাজ্যসভায় পেশ হওয়া নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটি সমর্থন করার জন্য ।
একটি সাংবাদিক সম্মেলন করে শান্তনুবাবু জানিয়েছেন, মতুয়া সম্প্রদায়ের বড়মা বীণাপাণি দেবী মুখ্যমন্ত্রীকে একটি চিঠি লিখেছেন । চিঠিতে তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে অনুরোধ জানিয়েছেন নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটি সমর্থন করতে । চিঠিতে লেখা হয়েছে, "মতুয়া সম্প্রদায় সর্বদাই উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব এবং পুনর্বাসনের অধিকারের দাবিতে লড়াই করে এসেছেl রাজ্যসভায় এই বিলটি যদি পাশ হয়ে যায়, তাহলে মতুয়ারা সেই নাগরিকত্বের অধিকার হাসিল করতে পারবে ।"
খবরটি এখানে দেখুন ।
শান্তনুবাবুর মতে, সর্বভারতীয় মতুয়া সংঘ দীর্ঘকাল ধরে নাগরিকত্বের অধিকার দাবি করে আসছে । যদি তিনি আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে মতুয়াদের সমর্থন পেতে চান, তবে এটাই সময় তাদের নাগরিকত্ব হাসিল করার এই সুযোগটি সমর্থন করার ।
শান্তনু ঠাকুরের প্রকাশ করা চিঠিটি এখানে দেখুন ।
বীণাপাণি দেবীর পুত্রবধূ এবং তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতাবালা ঠাকুর অবশ্য গোটা বিষয়টি অস্বীকার করেছেন । বুমকে তিনি জানিয়েছেন, "বীণাপাণি দেবীর বয়স এখন ১০০-র বেশি, তাঁর বর্তমান শারীরিক অবস্থায় হাতে করে কোনও চিঠি লেখা সম্ভবই নয় । শান্তনু ঠাকুরের এই চিঠিটি ভুয়ো এবং এতে বড়মার সইটাও জাল করা হয়েছে । আমরা গাইঘাটা থানায় শান্তনু ঠাকুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছি ।"
মমতাবালা ঠাকুরের মতে, এটা মমতা ব্যানার্জিকে কলঙ্কিত করার জন্য বিজেপির একটা চক্রান্ত । "আমি গতকালই বড়মার সঙ্গে কথা বলেছি । তিনি আমায় স্পষ্ট বলেছেন যে এ ধরনের কোনও কাগজে তিনি সই করেননি । এটা স্পষ্টতই মতুয়া সম্প্রদায়ে বিভাজন সৃষ্টির একটা কৌশল ।"
পশ্চিমবঙ্গের ৭৪টি বিধানসভা কেন্দ্রে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে বসবাস করেন হিন্দু তফশিলি জাতিভুক্ত ৪৭ লক্ষ মতুয়া । লোকসভা নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গত সপ্তাহেই ঠাকুরনগরে সভা করেন । ঠাকুরনগর ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে । তাঁর সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার স্থির করেছে বাংলাদেশ থেকে আসা হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টানদের নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের আওতায় এনে বৈধ নাগরিকত্ব দেওয়া হবে । ঠাকুরনগরের ওই সভায় প্রধানমন্ত্রী ওই বিলের বিরোধিতাকারী তৃণমূল কংগ্রেসকেও অনুরোধ করেন রাজ্যসভায় বিলটি সমর্থন করতে ।
তার আগে মমতা ব্যানার্জি বলেছিলেন, এই বিলটি ধর্মের ভিত্তিতে উদ্বাস্তুদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করে । "কেন্দ্রকে এই বিল প্রত্যাহার করতেই হবে, এটা সমর্থন করার কোনও প্রশ্নই ওঠে না ।" ঠাকুরনগরে প্রধানমন্ত্রীর সভার পরেও তিনি তাঁর ওই অবস্থানে অনড় রয়েছেন ।