হলিউড অভিনেতা ডোয়েন জনসন, যিনি 'দ্য রক' নামে সমধিক পরিচিত, মৃত্যুর ভুয়ো সংবাদ ফের ছড়িয়ে পড়ল। আপাতদৃষ্টিতে ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন (বিবিসি)-র ওয়েবসাইট বলে মনে হয়, এমন একটি ভুয়ো সাইটের লিঙ্ক ছড়াল, যাতে ডোয়েইন জনসনের ছবির পাশে লেখা রেস্ট ইন পিস (আরআইপি) অর্থাৎ তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি। সঙ্গে লেখা ডোয়েইন জনসন (১৯৭২-২০১৯)।
ছবিটিতে বিবিসি নিউজের লোগো-ও ব্যবহার করা হয়েছে। প্রতিবেদনটির শিরোনামে লেখা হয়েছে, “বিবিসি নিউজ: স্টান্ট করতে গিয়ে ৪৭ বছর বয়সে মৃত ডোয়েইন জনসন। বিবিসি নিউজ”। সঙ্গে যে সারাংশ ব্যবহার করা হয়েছে, তাতে লেখা হয়েছে যে “স্টান্ট ক্রিউয়ের গাফিলতির কারণেই ডোয়েইন জনসনকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।”
যদিও এই খবরটির শিরোনামে বিবিসি নিউজের নাম ব্যবহার করা হয়েছে, তাতে যে লিঙ্ক দেওয়া হয়েছে, তা এই প্রসিদ্ধ সংবাদসংস্থাটির নয়। লিঙ্কটি হল TOPNEWS.LIVEBROADCAST.COM। দ্য রকের মৃত্যু সংক্রান্ত এমনই একটি ভুয়ো খবর দেখতে পারেন নীচে। পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
মৃত্যুর ভুয়ো খবর পৌঁছে দেয় স্প্যাম লিঙ্কে
বুম নিশ্চিত ভাবেই বলতে পারে যে ডোয়েইন জনসনের মৃত্যু সংক্রান্ত গুজবটি ভুয়ো, কারণ কোনও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেই এ ব্যাপারে কোনও সংবাদ প্রকাশিত হয়নি।
তা ছাড়ৃাও, এই লিঙ্কটিতে ক্লিক করলে যে ওয়েব পেজটি https://cnn.wereblogs.com/#news/8662 খুলছে, তাতে অনেক রকম গলদ রয়েছে।
ভাইরাল হওয়া একাধিক পোস্টে দেওয়া লিঙ্কে ক্লিক করে আমরা যে ওয়েবপেজটিতে পৌঁছোই, তা দেখতে অনেকটা বিবিসি-র ড্যাশবোর্ডের মতোই। তাতে বিবিসি-র লোগোও খুব সহজেই চোখে পড়ে।
বিবিসি-র লোগোর ঠিক নীচেই একটা টাইম স্ট্যাম্প রয়েছে, যাতে লেখা রয়েছে ‘ফিফটিন মিনিটস এগো’। অর্থাৎ, সংবাদটি মাত্র ১৫ মিনিট আগে আপলোড করা হয়েছে, এবং এটিকে ‘ব্রেকিং নিউজ’ হিসেবে ধরতে হবে। কিন্তু, বুম খেয়াল করে দেখেছে যে বেশ কিছু ক্ষণ পরে পরে পাতাটিতে ক্লিক করলেও টাইম স্ট্যাম্পটি অপরিবর্তিতই থাকছে।
কত জন ভিডিওটি দেখেছেন, সেই হিসেবেও গলদ রয়েছে। ভিডিওটি ‘লাইভ ভিডিও’, এবং রিয়াল টাইমে অর্থাৎ এই মুহূর্তে ২৯০০ জন তা দেখছেন। কিন্তু, লাইভ আইকনটির ঠিক নীচেই আর একটি সংখ্যা রয়েছে, যাতে লেখা হয়েছে যে ভিডিওটি মোট ১৬ লক্ষ বার দেখা হয়েছে।
তা ছাড়াও, ভিডিওটিতে ক্লিক করলে এক সংবাদপাঠিকাকে দ্য রকের মৃত্যু সংক্রান্ত একটি খবর পাঠ করতে দেখা যাচ্ছে, যা আচমকাই শেষ হয়ে যায়।
শোনা যায় যে তিনি বলছেন, “নিউ ডিটেলস দিস মর্নিং অন দ্য ডেথ অব ফাস্ট অ্যান্ড ফিউরিয়াস...”। ভিডিওটি এখানেই শেষ হয়, এবং একটি সতর্কবাণী শোনা যায় যে পরবর্তী অংশে যে ছবি দেখানো হবে, তা সবার পক্ষে গ্রহণযোগ্য নাও হতে পারে।
একই ভিডিও, একই রকম ভুয়ো বয়ানের সঙ্গে, ইউটিউবেও আপলোড করা হয়েছে।
‘আনকভার নাউ’ লেখাটিতে ক্লিক করলেই তা একটি এরর পেজে রিডাইরেক্টেড হয়ে যাচ্ছে। বহু বার চেষ্টা করার পরও একই ঘটনাই ঘটেছে।
২০১১ সালে ডোয়েইন জনসন নিজের মৃত্যু সম্বন্ধে গুজবের উত্তর দিয়েছিলেন। একটি ফেসবুক পোস্টে তিনি লেখেন, “আমার মৃত্যু সম্বন্ধে গুজবগুলো একেবারেই মিথ্যে— আমি এখনও দিনে ২৪ ঘণ্টা, সপ্তাহে সাত দিন, বছরে ৩৬৫ দিন চালিয়ে যাচ্ছি— লিপ ইয়ার সমেত!”
আগের সপ্তাহেই 'দ্য রক' নিজের ফেসবুক পেজে ভক্তদের জন্য নিজের পরবর্তী সিনেমা সংক্রান্ত খবর দিয়েছেন।
কিছু দিন আগে গায়িকা সিলিন ডিয়নের মৃত্যু সংক্রান্ত এমন একটি গুজব ছড়িয়েছিল। বুম বাংলা তার তথ্য যাচাই করে খবরটিকে মিথ্যে প্রমাণ করেছিল। প্রতিবেদনটি এখানে পড়তে পারেন।