ভারতে বসবাসরত বংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের ফিরিয়ে নেওয়া হবে এরকম একটি বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রীর ভুয়ো বক্তব্য সহ পোস্ট ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। ওই পোস্টে যোগ করা হয়েছে একটি ওয়েবসাইটের লিঙ্ক যার শিরোনাম, ‘‘ভারতে ঢুকে থাকা অবৈধ বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে নিতে প্রস্তুত আমরা, বললেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।’’
এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত পোস্টটি ৫৬৬ লাইক ও ২৪৭ জন শেয়ার করেছেন। পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
তথ্য যাচাই
২৮ জুলাই ২০১৯ প্রকাশিত ওই ওয়েবসাইটের প্রতিবেদনের প্রথম অনুচ্ছেদে লেখা হয়েছে লেখা হয়েছে, ‘‘বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে অনুপ্রবেশকারী বাংলাদেশিদের নিয়ে বড়ো বিবৃতি দিয়েছেন। শেখ হাসিনা বলেছেন উনি ভারতে থাকা অবৈধ বাংলাদেশিদের তাদের দেশে ফিরিয়ে নিতে প্রস্তুত কিন্তু একটা শর্তে। বাংলাদেশে এক বৈঠক চলাকালীন শেখ হাসিনা অসমের NRC সম্পর্কে মন্তব্য করেন। শেখ হাসিনা বলেন ভারতে থাকা বাংলাদশিদের দেশে ফিরিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রে ভারতকে সঠিকভাবে প্রমান করতে হবে যে তারা সত্যিকারের বাংলাদেশি। সঠিকভাবে প্রমান করার শর্তেই অবৈধ বাংলাদেশীদের ফিরিয়ে নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন।’’
প্রতিবেদনটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
এই প্রতিবেদনে কোথায় ও কোন বৈঠকে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এই মন্তব্য করেছেন তার উল্লেখ নেই। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক কালে এরকম কোনও মন্তব্যের প্রতিবেদন বুম খুঁজে পায়নি।
অনুপ্রবেশ প্রসঙ্গ ও বাংলাদেশের অবস্থান
বাংলাদশের বিদেশমন্ত্রী এ কে.আব্দুল মোমেন এবছরের ১৩ জুলাই যমুনা টিভির এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘‘আমরা আশা করছি করি এটি আভ্যন্তরীন বিষয়। তারা হয়ত নির্বাচনের রাজনীতির জন্য এসব কথা বলেছেন। যারা তাদের দেশে আছেন ৭৫ সাল থেকে। তারা কিন্তু তাদের দেশের নাগরিক। আমদের নাগরিক না। তবে বিভিন্ন তথ্য যে সব পত্রপত্রিকায় পাই।আমরা একটু দুশ্চিন্তয় থাকি। আমরা এই ১১ লাখ (রোহিঙ্গা) নিয়ে বড় কষ্টে আছি। আমাদের দেশটা পৃথিবার মধ্যে সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশ।’’
২০১৯ সালের ২০ জানুয়ারী ভারতীয় গণমাধ্যম সিএনএননিউজ১৮ কে এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এনআরসি (১০:৪৮ সময়ে) প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘এই বিশ্বে পরিযান একটি সাধারণ প্রক্রিয়া। নিঃসন্দেহে অনেক ভারতীয় আমেরিকা, ইউরোপ ও অন্যান্য দেশগুলিতে যায়। প্রতিবেশী দেশগুলিতে এটি খুব সাধারণ ব্যাপার।’’
তিনি ওই সাক্ষাৎকারে আরও বলেন, "এই মুহুর্তে আমাদের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হচ্ছে। আমাদের কর্ম সংস্থানের সুযোগ আছে। আমরা দরিদ্রতার মান কমিয়েছি। আমাদের সামাজিক নিরাপত্তা বেড়েছে। তাহলে কেন আমাদের মানুষজন ভারতে যাবে এবং সেখানে থেকে যাবে আমি বুঝিনা। যদি এই প্রশ্ন ওঠে আমরা দ্বিপাক্ষিকভবে সমাধান করব। ১৯৯৬ সালে আমি যখন সরকার গঠন করি। ৬৪,০০০ লোক ভারতে আমাদের লোক উদ্বাস্তু হিসেবে ছিল। আমি তাদের ফিরিয়ে নিই চট্টগ্রাম পাহারের চুক্তির মাধ্যমে। আমরা এটা দেখব। আর আমি মনেকরি তারা ধর্মের ভিত্তিতে বা উঠে আসা অন্য বিষয়ে কোনও মানুষকে সমস্যায় ফেলবেনা। আমাদের দেশের ভিতর সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি আছে। আপনি জানেন। প্রত্যেক ধর্মের মানুষ তাদের আচার শান্তি ও সম্মানের সঙ্গে তা যাতে পালন করে আমরা তা সুনিশ্চিত করেছি।’’
২০১৮ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী ভয়েসঅফআমেরিকাকে বলেছিলেন, ‘আমি আর উদ্বাস্তুদের নিতে পারবনা।’
২০১৮ সালের ৫ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেষ্টা গহর রিজভি কলকাতায় আয়োজিত ইন্দিয়াটুডে কনক্লেভে বলেন, ‘‘আমরা অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের ফিরিয়ে নোব কিন্তু ভারতকে প্রমান করতে হবে তারা আমাদের।’’ তিনি আরও বলেন, "অসমে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী ভারতের অভ্যন্তরীন বিষয় হিসেবেই বাংলাদেশ দেখে।"
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সংসদে এক প্রশ্নোত্তর পর্বে ১৭ জুলাই বলেন, ‘কেন্দ্র অবৈধ অনুপ্রেবেশকারীদের ফেরত পাঠাবে।’
অসমের করিমগঞ্জ জেলার কলিবারি ঘাট এলাকা দিয়ে এমাসে ৩০ জন বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়েছে।