একটি হোয়াটসঅ্যাপে ‘ফরোয়ার্ডে’ হুঁশিয়ার করা হচ্ছে যে, তার প্রাপ্ত বার্তায় যে সব পরিবর্তন করা হয়েছে, তাতে কোনও সরকারি সংস্থা সম্ভবত আপনার বার্তাগুলি পড়ছে। দাবিটি ভুয়ো। এটি একটি পুরনো ফরোয়ার্ড, যা আগেই গুজব বলে খণ্ডন করা হয়েছিল।
এই ভুয়ো ফরোয়ার্ডটি এমন সময় ছাড়া হয়েছে যখন একটি ইজরায়েলি গুপ্তচর ভাইরাস পেগাসাস বিশ্ব জুড়ে ১৪০০ ব্যক্তির বার্তায় নজরদারি চালাচ্ছে বলে খবর প্রকাশ হওয়ার পর হোয়াটসঅ্যাপের বিরুদ্ধে ভারতে ও বিদেশে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। নজরদারি চালানোর এই সফ্টওয়ারটি ইজরায়েলের এনএসও-র তৈরি এবং এটি হোয়াটসঅ্যাপের ভিডিও কলিং প্রক্রিয়ার মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ।
সর্বশেষ ভুয়ো বার্তাটি হলো—যদি কোনও হোয়াটসঅ্যাপ চ্যাটের পাশে তিনটি নীল রঙের টিক চিহ্ন দেওয়া থাকে, তাহলে বুঝতে হবে, সরকার সেই চ্যাট-বার্তাটি পড়ে দেখেছে, আর যদি দুটি নীল টিক এবং একটি লাল টিক চিহ্ন দেওয়া থাকে, তাহলে বুঝতে হবে, সরকার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে চলেছে।
এই ফরোয়ার্ডে হোয়াটসঅ্যাপ ব্যবহারকারীদের সতর্ক করা হয়েছে, তারা কী শেয়ার করছে, সে ব্যাপারে সাবধান থাকতে এবং অন্যদেরও সে বিষয়ে সাবধান করতে।
ধাপ্পাটিকে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে তারা বিবিসি-র একটি সংযোগ বা লিংকও জুড়ে দিয়েছে।
কিন্তু সরকার নজর রাখছে বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে এই প্রথম এ ধরনের ভুয়ো বার্তা ভাইরাল হলো, এমন নয়। বুম অতীতে একই ধরনের একটি ভুয়ো দাবির পর্দাফাঁস করেছে।
আরও পড়ুন: সরকার হোয়াটসঅ্যাপের উপর নজরদারি চালাচ্ছে? ২০১৫ সালের গুজব আবার ছড়ানো হচ্ছে
তথ্য যাচাই
বুম দেখেছে, এই ফরোয়ার্ড বার্তাটি সম্পূর্ণ ভুয়ো, কেননা হোয়াটসঅ্যাপের ওয়েবসাইটে কোথাও এই সব নীল টিক চিহ্ন বা লাল টিক চিহ্নের উল্লেখ নেই। ওয়েবসাইটটিতে হোয়াটসঅ্যাপের যাবতীয় বিষয় নথিভুক্ত রয়েছে এবং পঠিত কোন বার্তার সঙ্গে দেওয়া কী চিহ্নের কী তাৎপর্য, তাও সবিস্তারে বলা আছে।
পঠিত বার্তাগুলি যাচাই করা নিয়ে ওয়েবসাইটে একটি আলাদা অংশই রয়েছে, যাতে পঠিত তিন ধরনের বার্তার কথা বলা হয়েছে। প্রথম বার্তায় একটি চিহ্ন রয়েছে, যার মানে—বার্তাটি সফলভাবে পাঠানো হয়েছে। দ্বিতীয় রকমের বার্তায় দুটি যাচাই-চিহ্ন আছে, যার মানে—প্রাপকের ফোনে বার্তাটি সফলভাবে পৌঁছেছে আর তৃতীয়টিতে দুটি নীল টিক চিহ্ন থাকে, যার মানে হলো—প্রাপক প্রেরিত বার্তাটি দেখেছে বা পড়েছে।
একসঙ্গে অনেকে মিলে চ্যাট করা অর্থাৎ গ্রুপ চ্যাটের ক্ষেত্রে ওয়েবসাইটে বলা আছে, দ্বিতীয় চিহ্নটি তখনই বার্তার পাশে দেওয়া হবে, যখন চ্যাটে অংশগ্রহণকারী সকলেই আপনার বার্তাটি পড়ে ফেলেছে, আর নীল রঙের যাচাই-চিহ্ন দেখা যাবে তখনই, যখন গোটা গ্রুপের সব সদস্যই আপনার বার্তা পড়ে নিয়েছে।
ভুয়ো বার্তায় বিবিসি-র যে লিঙ্কটা ব্যবহার করা হয়েছে, তার নাম— "হোয়াটসঅ্যাপ নজরদারি হামলার হদিস পেয়েছে।" এই লিঙ্কটি ২০১৯ সালের ১৪ মে তারিখের এবং ওই পেগাসাস গুপ্তচর সফ্টওয়ার বিষয়েই প্রকাশিত।
আমরা বিবিসি-র সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাদের তরফে জানানো হয়, “এই অ্যাকাউন্টটি ভুয়ো এবং এর সঙ্গে বিবিসি নিউজের কোনও সম্পর্কই নেই। আমরা গ্রাহকদের কাছে আর্জি জানাচ্ছি, তারা যেন বিবিসি নিউজের ওয়েবসাইট থেকে এ ধরনের বার্তার সত্যতা যাচাই করে নেন।”
এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়া পর্যন্ত হোয়াটসঅ্যাপের মুখপাত্রের এ বিষয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। প্রত্যুত্তর পাওয়া গেলে প্রতিবেদনটিকে সংস্করণ করা হবে।