জনসমক্ষে বোরখা সরানোর অভিযোগে ২০০১ সালে আফগানিস্তানের (Afghanistan) কাবুলে (Kabul) এক বোরখা পরা মহিলাকে তালিবানের (Taliban) মারধর করার ছবি সোশাল মিডিয়ায় বিভ্রান্তিকর দাবি সহ সাম্প্রতিক ঘটনা বলে শেয়ার করা হচ্ছে।
তালিবানদের আফগানিস্তান দখলের পর দেশের মেয়েদের মৌলিক স্বাধীনতা ও নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছে মানবাধিকার সংগঠনগুলি। ১৫ অগস্ট তালিবান এক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে কাবুলে রাষ্ট্রপতির বাসভবন দখল করে নেয়। রাষ্ট্রপতি আশরাফ ঘানি দেশ ছেড়ে অন্য জায়গায় পালিয়ছেন বলে গণমাধ্যমের খবর। কাবুল দখলের পর প্রথমবার ১৭ অগস্ট সংবাদ সম্মেলনে বলেছে, ইসলামিয় শরীয়া আইন অনুসারে মহিলাদের কাজ ও অন্যান্য অধিকার দেওয়া হবে। কিন্তু ওই সংবাদ সম্মেলনে তালিবান মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ সুস্পষ্টভাবে কিছু খোলাসা করেনি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ তালিবানের হাতে আফগানিস্তানের শাসন থাকাকালীন কঠোরতম ইসলামিক স্বতন্ত্র আইনি ব্যবস্থা শরীয়া আইন-এর মাধ্যমে শাস্তির বিধান প্রচলিত ছিল। ১০ বছরের বেশি নারীদের শিক্ষা বিধিনিষেধ, মহিলাদের কাজে বাধা এবং সর্বাঙ্গ ঢাকা বোরখা পরার ব্যাপারে তালিবানি শাসন কায়েম ছিল সে সময়। এই প্রেক্ষিতেই ছবিটি সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হচ্ছে।
ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া গ্রাফিক ছবিতে পর্দানশীন মহিলাদের এক ব্যক্তিকে প্রকাশ্যে বেত্রাঘাত করতে দেখা যায়। গ্রাফিক ছবিটিতে লেখা হয়েছে, "তালিবানি আতঙ্কে কাবুলের রাস্তা প্রায় মহিলাশূন্য, ক্রমে বিক্রি বাড়ছে বোরখার"।
গ্রাফিক ছবিটি ফেসবুকে শেয়ার করে ক্যাপশনে লেখা হচ্ছে, "কাবুল দখল নেওয়ার পরেই আফগানিস্তান জুড়ে শুরু হয়ে গিয়েছে তালিবান-তাণ্ডব। দোকান, ব্যাঙ্ক থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে মহিলাদের। রাস্তায় প্রাণে বাঁচতে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটছেন সবাই। শরীর ঢাকতে এক দিনে হঠাৎ করে বিক্রি বেড়ে গিয়েছে বোরখার। #Taliban #Afganistan #burkha"।
ফেসবুক পোস্টটি দেখা যাবে এখানে।
ছবিটি ফেসবুকে অন্য ক্যাপশন সহ জিইয়ে তুলে সাম্প্রতিক তালিবানের ক্ষমতা হস্তান্তরের ঘটনার সঙ্গে জুড়ে শেয়ার করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: লন্ডনের পথনাটিকার ভিডিওকে তালিবান অধিকৃত আফগানিস্তানের দৃশ্য বলা হল
তথ্য যাচাই
বুম যাচাই করে দেখে ছবিটি ২০০১ সালের ২৬ অগস্ট আফগানিস্তানের কাবুলে তোলা। নারী অধিকার সংগঠন রেভোলিউশনারি অ্যাসোসিয়েশন অফ দ্য উমেন অফ আফগানিস্তান (RAWA) দাবি করে জনসমক্ষে বোরখা সরানোয় মহিলাদের বেত্রাঘাত করে তালিবানরা।
বুম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে প্রশ্ন-উত্তর ভিত্তিক সোশাল সাইট কোরা-তে ৪ বছর আগের একটি থ্রেডে ছবিটিকে খুঁজে পায় (আর্কাইভ লিঙ্ক)। ওই ওয়েবসাইটটিতে ছবির সূত্র হিসেবে "www.rawa.org" ওয়েবসাইটের নাম উল্লেখ রয়েছে।
এই সূত্র ধরে বুম রেভোলিউশনারী অ্যাসোসিয়েশন অফ দ্য উমেন অফ আফগানিস্তান (রাওয়া বা RAWA)-ওয়েবসাইটের ফোটোগ্যালারিতে ছবিটি খুঁজে পায় (আর্কাইভ লিঙ্ক)। আমরা রাওয়া-র ওয়েবসাইটে আরও তিনটি ছবি দেখতে পাই ওই ঘটনার যেখানে একই ব্যক্তিকে মহিলাকে মারধর করতে দেখা যাচ্ছে। ছবিটির ক্যাপশনে লেখা হয়, " এই ছবিগুলি কাবুলে ২০০১ সালের ২৬ অগস্ট রাওয়া (RAWA) দ্বারা এক গোপন ক্যামেরা থেকে তোলা ভিডিও থেকে নেওয়া। এতে দেখা যায়, আমরো বিল মাহরূফ বিভাগ থেকে দুইজন তালিবান (প্রমোশন অফ ভার্চু অ্যান্ড প্রিভেনশন অব ভাইস বা তালিবান নীতি পুলিশ) জনৈক এক মহিলাকে প্রকাশ্যে বোরখা সরানোর জন্য তাঁকে মারধর করছে।"
আমরা রাওয়া-র ওয়েবসাইট থেকে জানতে পারি মহিলাদের মানবাধিকার এবং সামাজিক ন্যায়বিচারের জন্য সংগঠিত একটি স্বাধীন রাজনৈতিক/সামাজিক সংগঠন ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা মীনা কিশোয়ার কামাল ১৯৮৭ সালে পাকিস্তানের কিওোটা প্রদেশে উগ্রপন্থীদের হাতে নিহত হন।
বুম নিশ্চিত হয়েছে ছবিটির সঙ্গে বর্তমানে তালিবানের আফগানিস্তান দখলের সঙ্গে কোনও সম্পর্ক নেই। বুম স্বাধীনভাবে রাওয়া-র ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য-যাচাই করেনি।
তালিবানের কাবুল দখলের পর সোশাল মিডিয়ায় একাধিক বিভ্রান্তিকর ভিডিও ও ছবি ভুয়ো দাবি সহ সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। বুমের তথ্য-যচাই করা প্রতিবেদনের টুইটার থ্রেড দেখুন।
আরও পড়ুন: না, 'শান্তিপূর্ণ দখল' ও 'মাস্ক পরার' জন্য সিএনএন তালিবান স্তুতি করেনি