২০০৬ সালে সৌদি আরবে উমরাহ (Umrah) করতে যাওয়ার সময় টেনিস তারকা সানিয়া মির্জার (Sania Mirza) হিজাব (Hijab) পরিহিত ছবি বিভ্রান্তিকর দাবি সহ তাঁরই পশ্চিমা পোষাকের বেশে থাকা ছবির সঙ্গে তুলনা করে ভুয়ো খবর ছড়ানো হচ্ছে।
১৫ অগস্ট উগ্রপন্থী সংগঠন তালিবান কাবুল দখল করার পর নারী স্বাধীনতা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করছে মানবাধিকার সংগঠনগুলি। উপযুক্ত বিধি বলবৎ হওয়ার আগে কর্মরত মহিলাদের বাড়ির ভেতরে থাকার পরামর্শ দিয়েছে তালিবান। ২০০১ সালের আগে আফগানিস্তানে তালিবানি জামানায় মহিলাদের সর্বাঙ্গ ঢাকা বোরখা পরার নির্দেশ ছিল। ১০ বছরের উর্ধ্বে বালিকাদের শিক্ষার অধিকার হরণ করা হয়। ২০০৭ সালে পাকিস্তান ভিত্তিক তালিবান সংগঠন সোয়াট উপত্যকায় বালিকাদের শিক্ষায় বিধিনিষেধ আরোপ করে। প্রতিবাদ শুরু হয় ১১ বছর বয়সী মালালা ইউসুফজাইয়ের নেতৃত্বে। পরে বোরখা পরে বালিকাদের স্কুলে যেতে দিতে সম্মত হয় ওই পাক তালিবানি সংগঠন। ২০১২ সালে মালালার মাথায় গুলি চালায় তালিবান আশ্রিত দুষ্কৃতি। সানিয়া মির্জার ছবি দুটি তালিবানের আফগানিস্তান দখলের প্রসঙ্গে ছড়িয়ে ইসলামিক রিপাবলিক অফ পাকিস্তানে (Pakistan) নারীর পোশাকের স্বাধীনতার বিষয়টি উত্থাপন করা হচ্ছে।
ভাইরাল হওয়া গ্রাফিক ছবিটিতে সানিয়া মির্জার দুটি ছবির তুলনা করা হচ্ছে। বাম দিকের ছবিতে পশ্চিমি "নি রিপ্পড জিন্স" পরে রয়েছেন সানিয়া মির্জা বলা হয়েছে এটি হিন্দুস্তানের দৃশ্য। ডানদিকের অন্য ছবিতে ইসলামিক হিজাব পরে রয়েছেন তিনি। সানিয়া মির্জার দুটি ছবির গ্রাফিক পোস্টটি ফেসবুকে পোস্ট করে ক্যাপশন লেখা হয়েছে, "ছবির পার্থক্যটি বুঝুন। এটাই হল হিন্দুস্তানের স্বাধীনতা।।"
পোস্টটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
আরও পড়ুন: ইরাকের সম্পাদিত ছবি ছড়াল আফগান নারীদের পায়ে তালিবানের শিকল বেড়ি বলে
তথ্য যাচাই
বুম যাচাই করে দেখে টেনিস খেলোয়াড় সানিয়া মির্জার ভাইরাল হিজাব পরা ছবিটি ২০০৬ সালে সৌদি আরবে উমরাহ করতে যাওয়ার ছবি, সেটি পাকিস্তানে তোলা নয়। সানিয়া মির্জা পাকিস্তানি ক্রিকেটার শোয়েব মালিককে বিবাহ করেন ২০১০ সালে।
বুম সানিয়া মির্জার হিজাব পরা ছবিটি রিভার্স সার্চ করে ২০০৬ সালের ১১ নভেম্বর প্রকাশিত রেডিফের এক প্রতিবেদন খুঁজে পায়। ওই প্রতিবদেনে ভাইরাল ছবির পাশাপাশি হিজাব পরা সানিয়া মির্জার আরও একটি ছবি দেখতে পাওয়া যায়। রেডিফের প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০০৬ সালে সানিয়া মির্জা সৌদি আরবের মক্কায় উমরাহ করতে গেলে সুহেইল আহমেদ সাজ্জাদ নামের এক ব্যক্তি তার অনুমতি নিয়ে ছবিটি তোলেন।
২০০৬ সালের ৪ মে প্রকাশিত আরব নিউজের প্রতিবেদন থেকে জানা যায় সানিয়া উমরাহ করতে সেসময় সৌদি আরবে গিয়েছিলেন। সানিয়া জানান উমরাহ ও মদিনায় নবী মহম্মদের কাছে প্রার্থনা করতে তিনি সেখানে গিয়েছেন।
"আমি ব্যক্তিগত কারণে এখানে এসেছি এবং এখানে এসে শুধু উমরাহের বিষয়ে মনোনিবেশ করতে চাই," আরব নিউজকে সে সময় সাক্ষাৎকারে বলেন সানিয়া।
উমরাহ হল মুসলিমদের মক্কা তীর্থে ভ্রমণ, হজের সংক্ষিপ্ত সংস্করণ। হজ অনুষ্ঠিত হয় শুধুমাত্র আরবির জ্বিলহজ্জ মাসে। অন্যদিকে উমরাহ করা যায় বছরের বাকি যে কোনও সময়।
বুম একই গ্রাফিক ছবিটি ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে তথ্য-যাচাই করেছিল।
বোরখা, হিজাব ও নিকাবের পার্থক্য?
ইসলামিক ধর্মাবলম্বীরা মহিলারা বিভিন্ন ধরণের পর্দা (Veil) ব্যবহার করেন। সর্বাঙ্গ ঢাকা পোশাককে বলে বোরখা। শুধুমাত্র চোখের সামনে জালি পর্দা (mesh screen) দিয়ে বাইরের দৃশ্য দেখা যায় বোরখাতে। বিশেষ বস্ত্রখণ্ডে গলা ও মাথা ঢাকাকে বলে হিজাব। ভাইরাল হওয়া ছবিতে সানিয়া মির্জা হিজাব পরে রয়েছেন।
নিকাব হল হিজাবের মত একই ধরণের পোশাক কিন্তু নিকাবে আলাদা বস্ত্রখণ্ডে ঢাকা থাকে মুখ কিন্তু চোখ দৃশ্যমান থাকে। ইসলামিক দেশের সাংস্কৃতিক পার্থক্য অনুযায়ী মহিলাদের ক্ষেত্রে আল-আমিরা, সাইলা, খিমার ও চাদর প্রভৃতি বিভিন্ন ধরণের পর্দার প্রচলন আছে।
আরও পড়ুন: লন্ডনে ২০১৪ সালের এক পথনাটিকার ছবি আফগানিস্তানের বলে চালানো হল