ভারতীয় জনতা দলের সাসপেন্ড হওয়া মুখপাত্র নূপুর শর্মাকে (Nupur Sharma) দিল্লিতে গনপিটুনির (mob attack) শিকার হয়েছেন এই ভুয়ো দাবি সহ এক সেট পুরনো (old images) ছবি সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হচ্ছে।
বুম যাচাই করে দেখে ভাইরাল ছবিগুলি নূপুর শর্মার আক্রান্ত হওয়ার দৃশ্য নয়। ২০০৮ সালে নূপুর শর্মা দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের সভানেত্রী থাকাকালীন অধ্যাপক গিলানির এক সেমিনারে প্রতিবাদ স্বরূপ গেট ভেঙে ফেলার ঘটনা।
এক টিভি চ্যনেলের বিতর্কচলাকালীন পয়গম্বর মহম্মদকে নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্যের প্রেক্ষিতে বিজেপি দলীয় মুখ্যপাত্র নূপুর শর্মাকে সাসপেন্ড করেছে। দল থেকে বহিঃষ্কার করা হয়েছে দিল্লির বিজিপির মুখপাত্র নবীন জিন্দলকে। মাধ্যপ্রাচ্যের ইসলামিক দেশগুলি পর পর ভারতের রাষ্ট্রদূতদের ডেকে পাঠানো হয়। ঘটনার আঁচে বিক্ষোভ শুরু হয়, উত্তরপ্রদেশে, ঝাড়খণ্ড ও পশ্চিমবঙ্গে। প্রতিবাদ বিক্ষোভ ঘিরে পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া, মুর্শিদাবাদ ও নদীয়া জেলায় পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। নারকেলডাঙ্গা থানা নুপূর শর্মাকে সমন পাঠিয়েছে। দিল্লি, মুম্বই ও এ রাজ্যের বিভিন্ন থানায় নূপুরের নামে এফআইআর দায়ের করা হয়।
সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হওয়া ফেসবুক পোস্টে দেখা যায়, নূপুর শর্মা পুলিশের উপস্থিতিতেও নিগ্রহের শিকার হচ্ছে।
ফেসবুকে দুটি ছবির একটি কোলাজ শেয়ার করে ক্যাপশন লেখা হয়েছে, "আলহামদুলিল্লাহ দিল্লিতে শপিং করতে গিয়ে জনতার গণধোলাইয়ের শিকার কুলাঙ্গার নুপুর শর্মা।" (ক্যাপশনের বানান অপরিবর্তিত)
ফেসবুক পোস্টটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
ফেসবুক পোস্টটি দেখতে ক্লিক করুন এখানে।
আরও পড়ুন: উত্তরপ্রদেশ পুলিশের লাঠিপেটার পুরনো ভিডিও কানপুরে হালের সংঘর্ষ বলা হল
তথ্য যাচাই
বুম ছবিগুলি রিভার্স সার্চ করে গেট্টি ইমেজেস ওয়েবসাইটে ছবিগুলির হদিস পায়, ছবিগুলি নূপুর শর্মার দিল্লিতে শপিং মলে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা নয়।
প্রথম ছবি
গেট্টি ইমেজেস ছবিটির ক্যাপশন হিসেবে লেখে, "এবিভিপি কর্মী ও ডিইউএসইউ সভাপতি নূপুর শর্মা ভারতের নয়াদিল্লিতে ২০০৮ সালের ৬ নভেম্বর দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের উত্তর ক্যাম্পাসে একটি জনসভায় অধ্যাপক এসএআর গিলানির বিরুদ্ধে তার প্রতিবাদের জন্য গেট ভেঙে ফেলছেন।" হিন্দুস্তান টাইমসের পক্ষে ছবিটি তোলেন সুশীল কুমার।
দ্বিতীয় ছবি
নূপুর শর্মার দ্বিতীয় ছবিটিও পাওয়া যাবে গেট্টি ইমেজেসের ওয়েবসাইটে। এই ছবির বর্ণনাতেও একই ঘটনার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। হিন্দুস্তান টাইমসের পক্ষে এই ছবিটিও তোলেন সুশীল কুমার।
নূপুর শর্মার তৎকালীন সেই প্রতিবাদের আরও কিছু ছবি দেখতে পাওয়া যাবে এখানে ও এখানে।
২০০৮ সালের ৮ নভেম্বর প্রকাশিত দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, অধ্যাপক এসএআর গিলানির সাম্প্রদায়িকতা শীর্ষক এক সেমিনারে অংশ নেওয়ার সময় দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের তৎকালীন সভানেত্রী নূপুর শর্মা তাণ্ডব চালান। সেসময় নূপুর বিজেপির ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি)-এর কর্মী ছিলেন। ২০০১ সালে সংসদ হামলায় অভিযুক্ত হিসেবে নূপুর অধ্যাপক গিলানিকে সভাস্থল ত্যাগ করতে বলেন। বহিরাগত এবিভিপি কর্মীরা তাণ্ডব চালায় বলে অভিযোগ করে ছাত্র সংগঠন এসএফআই।
দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ আব্দল রহমান গিলানিকে ২০০১ সালে সংসদ হামলার ঘটনায় প্রমাণের অভাবে ২০০৩ সালের অক্টোবরে মুক্তি দেয় দিল্লি হাই কোর্ট। পরে সুপ্রিম কোর্টে ২০০৫ সালে এই রায় স্থগিত হয়ে যায়। ২০১৬ সালে সংসদ হামলার চক্রী আফজল গুরুর জন্মদিনে অনুষ্ঠান আয়েজন করার অভিযোগে দেশদ্রহী আইনে এফআইআর করা হয়। ২০১৯ সালে প্রয়াত হন তিনি।
আরও পড়ুন: হিমাচল প্রদেশের নাগকেশর ফুল ভুয়ো দাবিতে ছড়াল সমুদ্র কলম প্রাণীর ছবি