২০১৬ সালের একটি পুরনো সংবাদ ক্লিপিংয়ের (newspaper clipping) ছবি হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজে ছড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গের (West Bengal) জনঘনত্বের (population density) সঙ্গে জন বিস্ফোরণের (population explosion) তুলনা সম্পর্কে বিভ্রান্তিকর দাবি করা হচ্ছে।
বুম দেখে ভাইরাল সংবাদ ক্লিপিংটি ২০১৬ সালের। তাছাড়া রাজ্যের প্রতি বর্গ কিলোমিটারে জন ঘনত্বের তুলনাটি বিভ্রান্তিকর।
হোয়াটসঅ্যাপে ভাইরাল হওয়া ছবিটি আসলে একটি সংবাদ ক্লিপিং সহ গ্রাফিক যা আদতে একটি ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিনশট।
সংবাদ ক্লিপিংটি ব্যবহার করে ফেসবুক পোস্টের ওই গ্রাফিকে লেখা হয়েছে, ‘বেকারত্ব ভারতের আসল সমস্যা নয়। আসল সমস্যা পারমানবিক জন বিস্ফোরণ। যেটার সমাধান না হলে বেকারত্ব সমস্যা খুব দ্রুত মানুষকে জম্বিতে রূপান্তরিত করবে।’
সংবাদ ক্লিপিংটির শিরোনামে লেখা, ‘২৩ তম সন্তানের মা হতে চলেছেন ৪৮ বছরের বসিরান বিবি।’ ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রকাশিত প্রতিবেদনটির সারমর্ম হল— পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং থানার মোহাড়ের কানুচক গ্রামের বাসিন্দা পেশায় নির্মাণকর্মীর সহকারী শেখ সাত্তার(৫৩)-এর সহধর্মিণী বসিরান বিবি (৪৮) তাঁর ২৩ তম সন্তানের মা হতে চলেছেন। বর্তমানে বসিরান বিবির জীবিত সন্তান সংখ্যা ১৭। ৫ জন সন্তান জন্মের পর পরই মারা যায়। বর্তমানে বসিরান বিবি ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। বসিরান বিবি ও তাঁর স্বামী ধর্মের দোহায় দিয়ে জন্ম নিয়ন্ত্রণে রাশ টানতে চান না, এমনটিই লেখা রয়েছে ওই প্রতিবেদনে।
গ্রাফিকটিতে ইংরেজিতে লেখা রয়েছে চিন, আমেরিকা ও ভারতের প্রতি বর্গ কিলোমিটারে জন ঘনত্ব যথাক্রমে ১৫১ জন, ৩৬ জন ও ৪৫৫ জন। পশ্চিমবঙ্গের জন ঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে ১০২৯ জন।
বুমের হোয়াটসঅ্যাপ টিপলাইনে জনৈক পাঠক বিষয়টি তথ্য যাচাইয়ের (+৯১ ৭৭০০৯০৬৫৮৮) জন্য আমাদের পাঠান।
বুম গ্রাফিকটির লেখা ফেসবুকে সার্চ করে দেখে এই প্রতিবেদনটি ২০১৮ সালেও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছিল। ফেসবুক পোস্টটি আর্কাইভ করা আছে এখানে।
তথ্য যাচাই
২০১৬ সালের রিপোর্ট
বুম গুগলে ‘‘২৩ তম সন্তানের মা হতে চলেছেন ৪৮ বছরের বসিরান বিবি” কিওয়ার্ড সার্চ করে ২০১৬ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের গণমাধ্যম কালের কণ্ঠ-তে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পায়। ওই প্রতিবেদনে সূত্র হিসাবে 'সংবাদ প্রতিদিন'-এর নাম উল্লেখ করা রয়েছে।
বুম এই সূত্র ধরে পশ্চিমবঙ্গের বাংলা দৈনিক 'সংবাদ প্রতিদিন'-এর ই-পেপারের আর্কাইভ খুঁজে দেখে। বুম দেখে ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ সংবাদ প্রতিদিন প্রথম পাতাতে ওই খবরটি প্রকাশ করেছিল।
প্রতিবেদনটি পড়ুন এখানে।
বুমের পক্ষে স্বাধীনভাবে এই প্রতিবেদনের সত্যতা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।
জনঘনত্বের তুলনা বিভ্রান্তিকর
জনঘনত্ব হল প্রতি বর্গ কিলোমিটারে জনসংখ্যার অনুপাত। পার্বত্য বা দুর্গম মরু এলাকার জনঘনত্ব যেমন কম, সেরকম উর্বর সমতল অঞ্চলে জনসংখ্যা তুলনামূলক ভাবে বেশি। ভারতের ক্ষেত্রে উত্তর-মধ্য ভারত ও দক্ষিণ ভারতের জনঘনত্বের ফারাক রয়েছে।
ভারতের ২০১১ সালের জনগণনার নিরিখে পশ্চিমবঙ্গের প্রতি বর্গ কিলোমিটারে জনঘনত্ব ১০২৪ জন। বিহার ও উত্তরপ্রদেশে জনঘনত্ব প্রতি বর্গ কিলোমিটারে যথাক্রমে ১, ১০৬ জন ও ৮২৯ জন।
উত্তরপ্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ ও বিহার রাজ্যের আয়তন যথাক্রমে, ২৪০,৯২৮ বর্গ কিলোমিটার, ৯৪, ১৬৩ বর্গ কিলোমিটার ও ৮৮,৭৫২ বর্গ কিলোমিটার।
কিন্তু, উত্তরপ্রদেশ রাজ্যের আয়তনের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গের আয়তন কম। আবার বিহার রাজ্যের আয়তন পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় কম। সেই নিরিখে পশ্চিমবঙ্গের জনঘনত্বের তুলনাটি বিভ্রান্তিকর।
২০২৩ সালের ২১ এপ্রিল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী ভারতে জনসংখ্যার হার ক্রমহ্রাসমান। ২০১১ সালের জনগণনা অনুযায়ী তা ছিল ১.৬ শতাংশ। ইউনাইটেড নেশনস্ পপুলেশন ফান্ডের তথ্য অনুযায়ী, জন্মহার ২০২১ সালে এসে দাঁড়িয়েছে ১ শতাংশ।
তথ্য অনুযায়ী, ভারতে সর্বোচ্চ জন্মহার উত্তর ও মধ্যভারতের রাজ্যগুলির; সেগুলি হল বিহার, উত্তরপ্রদেশে, মধ্যপ্রদেশ, রাজস্থান, ঝাড়খণ্ড ও ছত্তিসগড় প্রভৃতি রাজ্যের। সেই তুলনায় পশ্চিমবঙ্গের জন্মহার বেশ কম।