একটি ভাইরাল বার্তায় মিথ্যে দাবি করা হয়েছে যাঁরা করোনা ভাইরাসের (Corona Virus) বিরুদ্ধে তাঁদের টিকা নেওয়া সম্পূর্ণ করেছেন, সরকার তাঁদের ৫,০০০ করে টাকা দিচ্ছে। আরও দাবি করা হয় যে, ওই টাকা প্রধানমন্ত্রীর জনকল্যাণ যোজনার মাধ্যমে দেওয়া হচ্ছে। সেই সঙ্গে বার্তাটিতে বলা হয়েছে একটি ভুয়ো ওয়েবসাইটের কথা। দাবি করা হয়েছে, ব্যক্তিগত তথ্য জমা দেওয়ার পর, ওই পোর্টালটির মাধ্যমে টাকা পাওয়া যাবে।
ওই ওয়েবসাইটে দেখানো হয়েছে যে, ৩০ অগস্টের মধ্যে ফর্ম ভরে জমা দিলে, উপযুক্ত ব্যক্তিরা ৫,০০০ টাকা পাবেন। অথচ, টিকাকরণ সম্পূর্ণ করা নাগরিকরা ওই টাকা পাবেন, তেমন কোনও প্রকল্পের অস্তিত্বের প্রমাণ পায়নি বুম।
ভুয়ো ওয়েবসাইটটির লিঙ্ক সমেত https://pm-yojna.in/5000rs/ (সেটির আর্কাইভ সংস্করণ আছে এখানে) বার্তাটি যাচাইয়ের জন্য বুমের হেল্পলাইন নম্বরেও আসে (৭৭০০৯০৬৫৮৮)।
বার্তাটি ও তার বাংলা অনুবাদ নীচে দেওয়া হল।
"একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা - যারা ভ্যাকসিন নিয়েছেন তারা পাবেন ₹৫০০০। আপনি যদি করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে থাকেন তবে ফর্মটি পূরণ করুন এবং ₹৫,০০০ পান। যা শুধুমাত্র ৩০ আগস্ট পর্যন্ত বৈধ।"
বার্তাটি ফেসবুক-এও ভাইরাল হয়েছে।
আরও পড়ুন: আগরতলায় সিএনজি গাড়িতে আগুন দাবিতে ছড়াল গুয়াহাটির অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা
তথ্য যাচাই
ওয়েবসাইটটি যে ভুয়ো, সে ব্যাপারে বুম নিশ্চিত হতে পেরেছে। https://pm-yojna.in/5000rs/ ওয়েবসাইটটি কোনও বৈধ সরকারি ওয়েবসাইট নয়। কারণ, ভারত সরকারের বা রাজ্য সরকারগুলির ওয়েবসাইটের ঠিকানার শেষে থাকে .gov.in। এবং বেশির ভাগ রাষ্ট্রায়ত্ব সংস্থার ঠিকানা শেষ হয় .nic.in দিয়ে।
এর পর আমরা ওয়েবসাইটটিতে আরও অসঙ্গতি লক্ষ করি। ওই ওয়েবসাইটটি জানতে চায় ব্যবহারকারীর মোবাইল ফোন নম্বর, তাঁর পরিবারের সদস্য সংখ্যা, এবং কোন টিকা নেওয়া হয়েছে – কোভিশিল্ড না কোভ্যাক্সিন। ফর্মের সব ক'টি কক্ষে, যা ইচ্ছে তাই লেখা যায়। যেমন, ফোন নম্বরের জায়গায় অক্ষর বসালেও ওয়েবসাইটটি আপত্তি করে না।
এমনকি ব্যবহারকারীরা দু'টি ভ্যাক্সিনের নামও লিখে দিতে পারেন, যদিও দু ধরনের ভ্যাক্সিন নেওয়া সরকার অনুমোদিত নয়। যাঁরা দু'টি ডোজ নিয়ে তাঁদের টিকাকরণ সম্পূর্ণ করেছেন, তাঁদের একই ভ্যাক্সিন নিতে হয়েছে।
এরপর ওয়েবসাইটটি ব্যবহারকারীর নাম জানতে চায়। কিন্তু নামের জায়গায় অন্য কিছু লিখলেও ওয়েবসাইটটি তা আটকায় না।
শেষে, ৫,০০০ টাকা পাওয়ার জন্য, ব্যবহারকারীকে একটি পূর্ব নির্ধারিত লিঙ্কে ক্লিক করতে বলা হয় ও হোয়াটসঅ্যাপে বার্তাটি আরও পাঁচ জনের সঙ্গে শেয়ার করার অনুরোধ জানায় ওয়েবসাইটটি। তবে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তাটি শেয়ার না করলেও কিছু এসে যায় না। বোতামটি পাঁচবার ক্লিক করলেই চলে।
ওয়েবসাইটটি ব্যবহারকারীদের বিটকয়েন ও ক্রিপ্টো কারেন্সির ভুয়ো ওয়েবসাইটের সঙ্গেও যোগাযোগ করিয়ে দেয়।
তাছাড়া, সম্পূর্ণ টিকা প্রাপ্ত ব্যক্তিদের সরকার টাকা দিচ্ছে, তেমন কোনও নির্দিষ্ট প্রকল্পের সন্ধান পায়নি বুম। টিকাকরণে সকলকে উৎসাহিত করতে, সরকার যা করছে তা হল, বিনামূল্যে তৃতীয় ডোজ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। টিকাকরণের হার বৃদ্ধি করার এই অভিযান ১৫ জুলাই শুরু হয়ে ৭৫ দিন চলার কথা।
প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরোর তথ্য যাচাইয়ের মাধ্যমে, সরকারও এই বার্তাটিকে নস্যাৎ করেছে।
আরও পড়ুন: দিল্লির সরকারি স্কুল নিয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন কি বিজ্ঞাপণ?