এক দল লোকের একটি মিছিলে খালিস্তানপন্থী স্লোগান দেওয়া হচ্ছে, এমন একটি ভিডিও শেয়ার করা হচ্ছে সোশাল মিডিয়ায়। আর সেই সঙ্গে মিথ্যে দাবি করা হচ্ছে যে, পাঞ্জাবের (Punjab) বিধানসভা নির্বাচনে আপ-এর (AAP) বিপুল জয়ের পরেই খালিস্তান দাবি করে মিছিল বেরয়।
বুম দেখে, ভিডিওটি ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২-এ ইউটিউবে আপলোড করা হয়। অর্থাৎ, ১০ মার্চ, ২০২২-এ নির্বাচনের ফলাফল বেরনর কয়েক সপ্তাহ আগে। ওই মিছিলে আমরা সিধুর ছবি সমেত প্ল্যাকার্ড দেখতে পাই। উনি ১৫ ফেব্রুয়ারি মারা যান।
প্ল্যাকার্ডগুলি এই ধারণাই দেয় যে, মিছিলটি সিধুর স্মরণে বার করা হয়েছিল।
১০ মার্চ, ২০২২-এ, নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা হলে দেখা যায়, আম আদমি পার্টি ১১৭টি আসনের মধ্যে ৯২টি দখল করে বিপুল ভাবে জয়ী হয়। বুধবার ভগওয়ান্ত মান মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। এই প্রেক্ষাপটে শেয়ার করা হচ্ছে ভিডিওটি।
হিন্দি ক্যাপশন সহ ভিডিওটি ফেসবুকে শেয়ার করা হচ্ছে। তাতে লেখা আছে, "পাঞ্জাবে কেজরুদ্দিন সরকার গঠন হওয়া পরেই খালিস্তানিরা খালিস্তান দাবি করতে থাকে। ওই বিশ্বাসঘাতক খালিস্তানপন্থীরা কংগ্রেস, বামপন্থী ও আপকে সমর্থন করে।"
(হিন্দিতে লেখা ক্যাপশন: पंजाब मे केजरुद्दीन के सरकार बनते ही खालिस्तानीओ का खेल खालिस्तान की मांग शुरू हो गया वामपंथी कांग्रेस आमदमी पार्टी के समर्थक है ये देशद्रोही खालिस्तान समर्थक)
এখানে কেজরুদ্দিন বলতে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে বোঝানো হয়েছে।
ফেসবুক পোস্টগুলি এখানে, এখানে, এখানে, এখানে ও এখানে দেখুন।
একটি টুইটের ক্যাপশনে, ভিডিওটিকে সরাসরি আপ-এর জয়ের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। এবং ওই পার্টির অফিসিয়াল টুইটার হ্যান্ডেলটিকেও ট্যাগ করা হয়েছে। ক্যাপশনটি অনুবাদ করলে দাঁড়ায় এই রকম: "পাঞ্জাবে আম আদমি পার্টি ক্ষমতায় আসা মাত্রই পরিবর্তন শুরু হয়ে গেছে।"
(হিন্দিতে লেখা: @AamAadmiParty के आते ही पंजाब में बदलाव शुरू हो गया)
একটি হিন্দি ক্যাপশন সহ ভিডিওটি বুমের হেল্পলাইন নম্বরেও আসে। ক্যাপশনটিতে লেখা ছিল, "পাঞ্জাবে পরিবর্তন শুরু হয়ে গেছে।"
(হিন্দিতে লেখা: पंजाब में बदलाव शुरू हो गया)
আরও পড়ুন: না, পশ্চিমবঙ্গ সরকার মুসলিম ব্যবসায়ীদের জন্য জিএসটি মকুব করেনি
তথ্য যাচাই
'পাঞ্জাব খালিস্তান স্লোগান', এই শব্দগুলি দিয়ে বুম কি-ওয়ার্ড সার্চ করে। এছাড়া, ভিডিওটির প্রধান ফ্রেমগুলি নিয়ে বুম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে। কিন্তু ভাইরাল ভিডিওটি সামনে আসে না।
এরপর আমরা ভিডিওটির ফ্রেম ধরে ধরে সেটিকে বিশ্লেষণ করি। তার ফলে, প্রয়াত অভিনেতা দীপ সিধুর ছবি সমেত আমরা বেশ কিছু প্ল্যাকার্ড দেখতে পাই। আরও কিছু প্ল্যাকার্ড আমাদের নজরে আসে যাতে লেখা ছিল, "দীপ সিধুর জন্য ন্যায় চাই"।
১৫ ফেব্রুয়ারি, ৩৭ বছর বয়সী সিধু একটি পথ দুর্ঘটনায় মারা যান। বলা হচ্ছে, তাঁর গাড়ির সামনে একটি ট্রাক যাচ্ছিল। সেটি আচমকা ব্রেক কষলে, সিধুর গাড়ি সেটিকে সজোরে ধাক্কা মারে। তাঁর মৃত্যুর পর, তাঁর সমর্থনে বেশ কয়েকটি মিছিল বেরয় পাঞ্জাবে।
ওই সূত্র ধরে, 'খালিস্তান স্লোগানস পাঞ্জাব দীপ সিধু' কি-ওয়ার্ড দিয়ে আমরা আরও সূক্ষ্ম ভাবে, ২৫ ফেব্রুয়ারির পর থেকে সার্চ করি। তার ফলে, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২-এ ইউটিউবে আপলোড করা ওই একই ভিডিও দেখতে পাই। সেটির শিরোনামে লেখা ছিল: "ভাটিন্ডা শহরে (পাঞ্জাব) ভারত-বিরোধী স্লোগান"।
আমরা আরও একটি ইউটিউব ভিডিও দেখতে পাই। ভাইরাল ক্লিপটির একটি স্ক্রিনশট ছিল সেটিতে। এবং ক্যাপশনে লেখা ছিল: "সোমবার, স্থানীয় পুলিশের সাহায্যে, কংগ্রেস সরকারের নাকের ডগায়, পাঞ্জাবের ভাটিন্ডা জেলায় খালিস্তানপন্থীরা বাবা অজিত সিংহ চক থেকে গুরুদ্বার কিলা মুবারক পর্যন্ত মিছিল করেন। বলা হচ্ছে, সদ্য প্রয়াত পাঞ্জাবি অভিনেতা দীপ সিধুর অনুগামীরা সেটির আয়োজন করেন। পুলিশের নজরদারিতেই 'খালিস্তান জিন্দাবাদ' ও 'দীপ সিধু জিন্দাবাদ' স্লোগান দেওয়া হয় সেখানে।
"সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়, খালিস্তানি সন্ত্রাসবাদী জারনেইল সিংহ ভিন্দ্রানওয়ালে ও দীপ সিধুর পোস্টার দেখা যায় মিছিলটিতে। ওই ঘটনার ভিডিও ক্লিপ সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে। এবং পাঞ্জাব সরকারের কাছে নেটিজেনরা জানতে চাইছেন কেন তাঁরা এই মিছিল করার অনুমতি দিলেন।"
২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২-এ, ওই একই ভিডিও যাচাই-করা ফেসবুক পেজ 'নিউজে'-এ আপলোড করা হয়। সেটির হিন্দি ক্যাপশনে বলা হয়, "লাল কেল্লা সহিংসতার জন্য অভিযুক্ত দীপ সিধুর স্মরণে একটি মিছিল বার করা হয়। সেখানে খালিস্তানপন্থী স্লোগান ওঠে আর পুলিশ নীরব দর্শকের মতো দেখতে থাকে।"
(হিন্দিতে লেখা ক্যাপশন: लाला किला हिंसा के आरोपी दीप सिद्धू की याद में निकाली गई रैली में लगे खालिस्तान जिंदाबाद के नारे. तमाशबीन बनी रही पुलिस)
এ বিষয়ে আরও জানতে চেয়ে আমরা ভাটিন্ডা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। তাঁদের বক্তব্য পাওয়া মাত্র আমরা এই প্রতিবেদন আপডেট করব।
ভিডিওটি থেকে বুম আর বিশেষ কিছু জানতে পারেনি। কিন্তু প্ল্যাকার্ডগুলি থেকে এটা স্পষ্ট যে, দীপ সিধুর স্মরণেই মিছিলটি বার করা হয়। তাছাড়া, যেহেতু ভিডিওটি ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ থেকে ইন্টারনেটে রয়েছে, সেহেতু ১০ মার্চে আপ'র জয়ের সঙ্গে সেটির কোনও সম্পর্ক নেই।
আরও পড়ুন: মৃত মায়ের পাশে সদ্যজাত ও ডাক্তারের দুটো ছবি সম্পর্কহীন, কাহিনী মনগড়া