এক আহত মহিলাকে কয়েকজন বাংলাদেশী (Bangladesh) মহিলা পুলিশ কর্মীর উদ্ধার করার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে ব্যবহারকারীরা ভুয়ো সাম্প্রদায়িক দাবি (Communal Claim) করছেন ভিডিওয় আক্রান্ত মহিলা বাংলাদেশী হিন্দু (Hindu woman) এবং তাকে ৩৫ জন মুসলমান (Muslim) ধর্ষণ করে ও নৃশংসভাবে মারধর করে।
বুম দেখে আক্রান্ত মহিলা আওয়ামী লীগের সদস্য কোহিনূর আখতার। ভাইরাল ভিডিওটি ১০ নভেম্বর, ২০২৪-এর যেদিন আওয়ামী লীগের সদস্যদের উপর হামলায় তিনি আহত হন। কোহিনূর মুসলিম সম্প্রদায়ের।
বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের জেরে অগাস্ট মাসে তার দেশ ছাড়ার পর, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারেরও পতন হয়।
ফেসবুকে ১৯ সেকেন্ডের ভিডিওটি শেয়ার করে এক ব্যবহারকারী ক্যাপশনে লেখেন, “অত্যন্ত হৃদয় বিদায়ক দৃশ্য বাংলাদেশ থেকে.......যেখানে এই মহিলার খুব ভালো ব্যবসা ছিলো। তিনি নিজের বাড়িতে তিন চারটে মুসলিম পরিবারকে ভাড়াও দিয়েছিলেন। এখন ঐ মুসলিম পরিবারগুলো বাইরে থেকে আরও মুসলিমদের ডেকে এনাকে মারধর করেন! এবং কমপক্ষে 35জন মুসলিম একে গ্যাং রেপ করে। ভারত সহ অন্য দেশগুলোর রাজনৈতিক নেতারা ঘরে চুপকরে বসে আছে, কারণ এই মহিলা শুধু হিন্দু বলে...”
পোস্টটি দেখুন এখানে, আর্কাইভ দেখুন এখানে।
তথ্য যাচাই
বুম দেখে ভাইরাল ভিডিওতে আক্রান্ত মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী কোহিনূর আখতার।
আক্রান্ত মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী
দাবিটির সত্যতা যাচাই করতে আমরা প্রথমে গুগলে ভাইরাল ভিডিওর কিফ্রেমের রিভার্স ইমেজ সার্চ করে দেখি ইউটিউবে একই ভিডিও পাই। ইউটিউবে ভিডিওর ক্যাপশনে ঘটনাটিকে বাংলাদেশ কিষাণ লীগের জাতীয় কমিটির সদস্য কোহিনূর বেগমের উপর হামলার ভিডিও হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
এর থেকে ইঙ্গিত নিয়ে, আমরা কিওয়ার্ড সার্চ করে বাংলাদেশের একটি ফেসবুক পেজে— কৃষক লীগের ডায়েরি-Diary of Krishak League, একই ভিডিও দেখতে পাই এবং সেখানে ওই মহিলাকে “কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় জাতীয় কমিটির সদস্য ও পটুয়াখালী জেলা কৃষক লীগের সদস্য” কোহিনূর আখতার বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। ওই পোস্টে আমরা দেখি কোহিনুরের ফেসবুক প্রোফাইলও ট্যাগ করা হয়েছে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজেও ভিডিওটি শেয়ার করে জানানো হয়েছে, ১০ নভেম্বরের হামলায় আওয়ামী লীগের কর্মীরা আহত হয়েছেন। উল্লেখযোগ্যভাবে, কিষাণ লীগ আওয়ামী লীগের একটি শাখা।
কৃষ্ণ গোপাল পাল নামক এক ফেসবুক ব্যবহারকারী ১১ নভেম্বর, ২০২৪ তারিখের পোস্টে ঘটনাটিকে গুলিস্তানের বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে ১০ নভেম্বর, ২০২৪ হামলার একটি ভিডিও হিসাবে বর্ণনা করেছেন। দেখুন এখানে।
আমরা দেখি এম ই একাত্তুর নামের আরেকজন ফেসবুক ব্যবহারকারী অন্য এক আহত ব্যক্তির সঙ্গে একই মহিলার ছবি শেয়ার করে লিখেছেন, “বাংলাদেশ কৃষক লীগের জাতীয় কমিটির দুই সদস্য রাশেদ ও কোহিনূর বঙ্গবন্ধু এভিনিউ কেন্দ্রীয় পার্টি অফিসের সামনে এভাবেই আহত করে তথা কথিত ১০০ দলের সমন্নয়করা ও বিম্পি -তারপর পুলিশ গ্রেফতার করে, এর তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি -- লজ্জিত শিক্ষিত সমাজ।” পোস্টটি দেখতে এখানে ক্লিক করুন।
আওয়ামী লীগ কর্মসূচি ও তার বিরোধিতা
এরপর, আমরা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানতে পারি, আওয়ামী লীগ ২০২৪ সালের ১০ নভেম্বর নূর হোসেন দিবস উপলক্ষে রাজধানী ঢাকার গুলিস্তানের জিরো পয়েন্ট এলাকায় অগণতান্ত্রিক শক্তির অপসারণ এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠার' দাবিতে সমাবেশের ডাক দেয়। এর জবাবে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও অন্যান্য রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের এই কর্মসূচির বিরোধিতা করে।
১০ নভেম্বর, ২০২৪-এর প্রতিবেদনে ঢাকা ট্রিবিউন জানায়, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট পার্টির নেতা-কর্মীরা ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে স্লোগান দেয় এবং প্রতিবাদ করে।
প্রথম আলোর রিপোর্ট অনুসারে জানা যায় এই বিক্ষোভ চলাকালীন অনেককেই মারধর করা হয় এবং এক ব্যক্তিকে পুলিশের সামনেই মারধর করা হয়।
চ্যানেল আই অনলাইন জানিয়েছে, আওয়ামী লীগের কর্মসূচির বিরোধিতা করতে আগের দিন, ৯ নভেম্বর, ২০২৪, রাত থেকেই বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে অবস্থান নেয় বিএনপি-যুবদলসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। প্রতিবেদনে জানা যায় ১০ নভেম্বর এই কর্মীরা বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে আওয়ামী লীগের সদস্য সন্দেহে দুই মহিলাকে মারধর করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে।
আক্রান্ত মহিলা মুসলিম
বুম বাংলাদেশ ঘটনার বিশদ বিবরণ জানতে সংবাদপত্র নয়া দিগন্তের সাংবাদিক শাহাদাত হোসেন রিফাতের সাথে যোগাযোগ করে। রিফাত জানান, "ভিডিওর মহিলা কোহিনূর আখতার, তিনি একজন মুসলিম এবং তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী।
তিনি বলেন, 'এটা কোনোভাবেই ধর্ষণের ঘটনা নয়। কোহিনুর তার রাজনৈতিক বিরোধীদের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছিল। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।
(অতিরিক্ত রিপোর্টিং: বুম বাংলাদেশ)