পেটে ছুরির আঘাত নিয়ে রাস্তায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা এক যুবকের বীভৎস ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। দাবি করা হচ্ছে, তামিলনাড়ুতে (Tamil Nadu) বিহারের (Bihar) পরিযায়ী শ্রমিকদের (Migrants) ওপর আক্রমণের ঘটনা সেটি।
বুম দেখে, দাবিটি মিথ্যে। তথ্য যাচাই করে আমরা দেখি, ভিডিওটিতে যে ঘটনা দেখানো হয়েছে, সেটি গত মাসে কর্নাটকের বেঙ্গালুরু গ্রামীন জেলার ডোড্ডাভেলাভাঙ্গালায় ঘটেছিল। দুজন স্থানীয় ছাত্রের সঙ্গে অন্যান্য স্থানীয় লোকেদের বচসা বাঁধলে, ওই ছাত্ররা ছুরিকাঘাতে আহত হন।
টুইটারে দেওয়া ভিডিওটির হিন্দি ক্যাপশনে বলা হয়, “তামিলনাড়ুতে বিহারিদের মেরে ফেলা হচ্ছে। কিন্তু বিহারের ক্ষমতাসীন নীতীশ কুমার সরকার হাতজোড় করে বসে আছে! এখন তামিলনাড়ুর ঘটনা, ‘ইউপি মে কা বা’ সিজন-২-এর গায়ক @nehafolksinger মুখে দই লেপে দিয়েছে।”
তথ্য যাচাই
ভিডিওটি চালিয়ে বুম শোনে যে, নেপথ্যে মানুষজন কন্নড় ভাষায় কথা বলছেন। বুমের এক সংবাদদাতা বাক্যগুলিতে অনুবাদ করলে, সেগুলি এই রকম দাঁড়ায়: “ভাই, কে এমন কাজ করল?” “বেচারা...একেও ছুরি মারা হয়েছে” ও “কেউ একজন তাড়াতাড়ি অ্যাম্বুলেন্স ডাকো”।
এই সূত্র ধরে আমরা কি-ওয়ার্ড দিয়ে কর্নাটকে ছুরিকাঘাতের ঘটনার খোঁজ করি। তার ফলে, ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩-এ ডেকান হেরাল্ড-এ প্রকাশিত একটি রিপোর্ট দেখতে পাই। তাতে বেঙ্গালুরু গ্রামীণ জেলার ডোড্ডাভেলাভাঙ্গালায় একটি স্কুল টুর্নামেন্টের পর বচসায় দুজন ছাত্রকে ছুরি মারার ঘটনার উল্লেখ করা হয়।
ওই রিপোর্টে বলা হয়, “চার জনের একটি দল, কর্নাটক পাবলিক স্কুল মাঠে, ভরত কুমার (২৩) ও প্রতীক (১৭) কে আক্রমণ করে। তাঁরা দুজনেই ডোড্ডাভেলাভাঙ্গালার বাসিন্দা। প্রতীককে ছোরা দিয়ে আঘাত করলে, অস্ত্রটি তার যৌনাঙ্গে আটকে থাকে। এবং কুমারকে আঘাত করা হয় তলপেটে। পুলিশ জানায়, ওই বচসার সঙ্গে তাদের কোনও যোগ ছিল না।”
রিপোর্টটিতে দুই আক্রান্ত ছাত্রের ছবিও ছিল। আমরা দেখি, যে ছাত্রটিকে প্রতীক বলে শনাক্ত করা হয়, তার সঙ্গে ভিডিওর এক যুবকের খুবই মিল রয়েছে।
আমরা বেঙ্গালুরু জেলা (গ্রামীণ)-এর পুলিশ সুপার মল্লিকার্জুন বলডান্ডির সঙ্গে যোগাযোগ করি। উনি নিশ্চিত করে বলেন যে, ভিডিওটিতে বেঙ্গালুরু গ্রামীন জেলার ডোড্ডাভেলাভাঙ্গালার ঘটনাটিই দেখানো হয়েছে। তার সঙ্গে তামিলনাড়ুতে বিহারি পরিযায়ী শ্রমিকদের ওপর তথাকথিত আক্রমণের কোনও সম্পর্ক নেই।
বলডান্ডি বলেন, “আক্রান্তরা কর্নাটকের বাসিন্দা। অভিযুক্ত ও মৃতরা উভয়ই স্থানীয় মানুষ।”
বুম দেখে, তামিলনাড়ুতে বিহারী পরিযায়ী শ্রমিকদের ওপর আক্রমণ হচ্ছে, এই ধরনের গুজবের সংখ্যা বাড়তে থাকে গত সপ্তাহ থেকে। এর মধ্যে কয়েকটি ঘটনা সত্যিই ঘটেছে। কিন্তু আমরা এও দেখি যে, মিথ্যে ঘটনার দাবি করে সম্পর্কহীন ও বীভৎস ভিডিও ব্যবহার করা হচ্ছে। আরও জানতে এই ধরনের দাবিগুলি সংক্রান্ত আমাদের সংকলনটি পড়ুন।