উর্দিতে লাল (red colour) রঙ লাগা ২০১৯ সালের এক পুলিশ আধিকারিকের ছবি সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল করে ভুয়ো দাবি করা হচ্ছে ভারতীয় জনতা দলের (বিজেপি) নবান্ন (Nabanna Abhijan) অভিযানের দিন রাজ্য পুলিশ (West Bengal Police) বিজেপি কর্মীদের ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২২ তৃণমূল পরিচালিত রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বিজেপির কর্মী সমর্থকরা "নবান্ন অভিযান" করে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, মধ্য কলকাতার অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার দেবজিত্ চট্টোপাধ্যায়, জোড়াবাগান থানার অতিরিক্ত ওসি সরফরাজ আহমেদ মহাত্মা গান্ধী রোড ও সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউতেও আক্রান্ত হন। দুই পুলিশকর্মীকে ঘিরে ধরে লাঠি ও বাঁশ দিয়ে গণধোলাই দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিজেপি কর্মী সমর্থকদের বিরুদ্ধে। অন্য বিক্ষিপ্ত ঘটনায় আহত হয়েছেন বিজেপি কর্মীরাও।
ফেসবুক পোস্টে ভাইরাল হওয়া তিনটে ছবিতে দেখা যায় হেলমেট পরা এক উর্দিধারী পুলিশ অধিকারিকের জামা ও প্যান্টের ডানদিকে একাংশে বিক্ষিপ্ত ভাবে লাল রঙ মাখানো রয়েছে। ছবিটি ফেসবুকে শেয়ার করে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা পুলিশ বিভাগের মন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কটাক্ষ করা হয়েছে।
ফেসবুকে ছবি তিনটি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে ক্যাপশন লেখা হয়েছে, "ধিক্কার জানাই বাংলার পুলিশ কে। গায়ে রং মেখে বিজেপি কর্মিদের ফাঁসানোর চেষ্টা করছে। আসলে এরা কি সত্যিই পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ নাকি পুলিশের পোশাক পরিধান করে তৃণমূলের গুন্ডাবাহিনি গুন্ডাগিরি করতে নেমেছে। হ্যাপি হোলি নির্লজ্জ মমতা পুলিশ।" (ক্যাপশন সম্পাদিত)
ফেসবুক পোস্টটি দেখুন এখানে।
এরকম একই দাবি ও ছবি সহ দুটি ফেসবুক পোস্ট দেখুন এখানে ও এখানে।
আরও পড়ুন: নিউজ ১৮, এই সময় ছড়াল পাকিস্তান বন্যায় অনিল কপূররের অর্থদানের ভুয়ো খবর
তথ্য যাচাই
বুম ছবি তিনটি গুগলে রিভার্স সার্চ করে পলিটব্যুরো সদস্য সিপিআইএম নেতা সূর্যকান্ত মিশ্রর ২০১৯ সালের একটি টুইটের হদিস পায়।
১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯ সূর্যকান্ত মিশ্র তাঁর নিজস্ব যাচাই করা টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে অন্যান্য ছবির কোলাজের সঙ্গে ভাইরাল হওয়া ছবির মধ্যে দুটি একই ছবি টুইট করেন।
তিনি ওই টুইটে লেখেন, "মুখ্যমন্ত্রীর পুলিশ হোলি খেলে তাদের উর্দিতে মিলিয়ে যাওয়া রঙে যখন ছাত্ররা পাশবিক লাঠিচার্জে রাক্তাক্ত হয়। এমনকি কাঁদানে গ্যাস ও জলকামান ব্যার্থ হলে ছাদ থেকে ইঁট ছোঁড়া হয়। এর জন্য প্রয়োজন মক্ষম জবাব।"
গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৯ সালের ১২ ও ১৩ সেপ্টেম্বর রাজ্যের ১২ টি বাম যুব ও ছাত্র সংগঠন সিঙ্গুর থেকে নবান্ন মার্চের ডাক দেয়।
বুম ভাইরাল হওয়া ছবির পুলিশ আধিকারিকের জামার রঙের ছাপ দেখে বুঝতে পারে ছবিগুলি একই ব্যক্তির। আমরা ওই পোশাকের উপর সাঁটা ব্যাজের নাম পড়তে সক্ষম হই, "ওয়াই রঘুবংশী"
এরপর আমরা "ওয়াই রঘুবংশী পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ" লিখে ফেসবুকে কিওয়ার্ড সার্চ করে ৫ অগস্ট ২০২২ এর পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের একটি ফেসবুক পোস্ট খুঁজে পায়। ওই ফেসবুক পোস্ট থেকে আমরা জানতে পারি আইপিএস আধিকারিক ওয়াই রঘুবংশী বর্তমানে আলিপুরদুয়ার জেলা পুলিশ সুপার।
বুমের তরফে আলিপুরদুয়ারের জেলা পুলিশ সুপার ওয়াই রঘুবংশীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বুমকে জানান ছবিটি তাঁরাই।
তিনি বুমকে বলেন, "ছবিটি ২০১৯ সালের ডিওয়াইএফআইয়ের নবান্ন অভিযানের দিনের। কিছু ডিওয়াইএফআই কর্মী নিজের মধ্যে রঙ লাগায় যাতে মনে হয় হিংসাত্মক ঘটনা ঘটেছে। সে সময় আমার গায়ে রঙ লেগে যায়। ভাইরাল পোস্টের উভয় দাবিই মিথ্যে। যদিও আমি আঘাত পেয়েছিলাম সেদিন কিন্তু আমি নিজের উপর রঙ দিইনি
"আর আলিপুরদুয়ারের পুলিশ সুপারের দায়িত্বে থাকায় আমি ১৩ অগস্ট নবান্ন অভিযানের ধারে কাছে ছিলাম না।" বুমকে বলেন ওয়াই রঘুবংশী।
আরও পড়ুন: "আটা ৪০ টাকা লিটার": রাহুল গাঁধীর ভাইরাল ভিডিও সম্পাদিত