একটি ভাইরাল বার্তায় দাবি করা হয়েছে যে, নিঃশ্বাসের সঙ্গে কর্পূর (camphor), লবঙ্গ (clove) আর জোয়ানের (ajwain) গন্ধ নিলে, তা শরীরে অক্সিজেনের (oxygen levels) মাত্রা বাড়িয়ে কোভিড-১৯ (Covid-19) ঠেকাতে সাহায্য করে। এটাই হল সাম্প্রতিকতম টোটকা, যেটি সোশাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হচ্ছে। অন্য আর সব টোটকার মতই, রুমালে মোড়া কর্পূর আর জোয়ান অক্সিজেন মাত্রা বাড়াতে পারে, এই দাবির কোনও বৈজ্ঞানিক সমর্থন মেলেনি।
বুম একজন বক্ষ রোগ বিশিষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলে। তিনি বলেন যে, অক্সিজেনের ঘাটতির ক্ষতিকর প্রভাবকে অবহেলা না করে অক্সিমিটারের ব্যবহার ও চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা জরুরি।
ভাইরাল বার্তাটিতে বলা হয়েছে, "কর্পূর, লবঙ্গ, জোয়ান আর কয়েক ফোঁটা ইউক্যালিপ্টাসের তেল। এই দিয়ে একটা পুঁটলি বানিয়ে, দিনে আর রাতে তার গন্ধ শুঁকতে থাকুন। অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াতে আর 'কনজেশন' কমাতে সাহায্য করে। লাদাখে পর্যটকদের এই ধরনের পুঁটলি দেওয়া হয়, কারণ সেখানে অক্সিজেন কম। এখন অনেক অ্যাম্বুল্যান্সেও এগুলি রাখা হচ্ছে। এটি ঘরোয়া পথ্য। দয়া করে, শেয়ার করে সাহায্য করুন।"
এই বার্তা এমন এক সময়ে শেয়ার করা হচ্ছে যখন ভারত তার অক্সিজেন উৎপাদন বাড়াচ্ছে। কারণ, অনেক জায়গা থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডারের অভাব, আর তার ফলে রোগীর মৃত্যুর খবর আসছে।
যাচাই করার অনুরোধ সমেত, বার্তাটি বুমের হোয়াটসঅ্যাপ হেল্পলাইনেও আসে।
বার্তাটি ফেসবুকেও ভাইরাল হয়েছে। অনেক যাচাই-করা ফেসবুক ব্যবহারকারীও বার্তাটি শেয়ার করেছেন। একটি পোস্ট আর্কাইভ করা আছে এখানে।
তথ্য যাচাই
অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াতে, কর্পূর আর জোয়ানের ব্যবহার সংক্রান্ত কোনও বৈজ্ঞানিক গবেষণা পত্রের সন্ধান পাইনি আমরা। লাদাখে কর্পূর ব্যবহার করা হয় ঠিকই। সেখানে মনে করা হয় যে, উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাতাসে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গেলে, কর্পূর নাক পরিষ্কার করে শ্বাসপ্রশ্বাস স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। বেশ কিছু পর্বতারোহী সংস্থা ও ট্রেকিং দল, সঙ্গে কর্পূর রাখার ওপর জোর দেয়।
কোভিড-১৯'র ক্ষেত্রে কিন্তু জায়গার উচ্চতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়, এমনটা নয়। ফলে, কর্পূরের সাহায্যে শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ বাড়িয়ে ফেলা যায়, এই দাবির কোনও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ নেই।
মুম্বাইয়ের 'লাঙ্গ কেয়ার ক্লিনিক'-এর বক্ষ রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ ইন্দু বুবনা-র সঙ্গে যোগাযোগ করে বুম। উনি বলেন, কর্পূর যা করে, তা হল নাকের মধ্যে দিয়ে হাওয়া চলাচলের পথটা পরিষ্কার করে দেয়। তার ফলে, নিঃশ্বাস নেওয়া অনেক সহজ হয়ে যায়। কিন্তু অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ানোর ক্ষেত্রে কোনও সাহায্য করে না।
"ভাইরাসকে ঠেকানোর জন্য অনেকেই এখন নানা ধরনের টোটকার কথা বলছেন। কিন্তু সেগুলির কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। নিঃশ্বাসের সঙ্গে কর্পূর নেওয়া, সেরকমই এক বাড়িতে তৈরি ওষুধ। টোটকার ওপর নির্ভর করার চেয়ে, ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়াই ভাল। অক্সিজেনের ওপর কর্পূরের কোনও প্রভাব আমরা লক্ষ করিনি। শ্বাসপ্রশ্বাসের ওপর প্রভাব আছে সম্ভবত। কর্পূর থেকে বিষক্রিয়াও হতে পারে," বলেন ডঃ বুবনা।
নাক বন্ধ হয়ে গেলে ভিক্স ভেপার রাব বা টাইগার বামের মত যে সব বাম অনেকে ব্যবহার করে থাকেন, তার মধ্যে কর্পূর থাকে। অথচ, এই বামগুলি যে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ায়, তেমন কোনও প্রমাণ নেই।
"সকলকে এটা বুঝতে হবে যে, ভাইরাসটি এখন অন্য রূপ ধারণ করেছে। পেটের সমস্যা, নিশ্বাসের সমস্যা, স্বাদ চলে যাওয়া, গন্ধ না পাওয়া, জ্বর, শুকনো কাশি— এই সব লক্ষণগুলি দেখা দিলেই, টেস্ট করে চিকিৎসা শুরু করে দেওয়া উচিৎ। অক্সিমিটার যদি অক্সিজেনের মাত্রা ৯৫ বা ৯০-এর কম দেখায় আর শ্বাসকষ্ট অনুভুত হয়, তাহলে দেরি না করে ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন, সিটি স্ক্যান করান, আর চিকিৎসা শুরু করে দিন," বলেন ডঃ বুবনা।
তিনি আরও বলেন, "যদি অক্সিজেনের মাত্রা কম থাকে, তাহলে এই টোটকা অক্সিজেনের মাত্রা বাড়িয়ে দেবে, তেমন কোনও প্রমাণ নেই। নিঃশ্বাসের গতিবিধি পাল্টাবে মাত্র।"
আরও পড়ুন: বাইকে অক্সিজেন সিলিন্ডার সমেত কোভিড রোগী নিয়ে যাওয়ার ছবিটি বাংলাদেশের