দুটি পরস্পর সম্পর্কহীন (unrelated images) পুরনো ছবিকে—যার একটিতে একজন পুরোহিতকে মদ্যপান (drinking beer) করতে দেখা যাচ্ছে আর অন্যটিতে এক পুরোহিতকে একটি হিন্দু দেবমূর্তির উপর পা দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে—একসঙ্গে ভাইরাল করে ভুয়ো (false) সাম্প্রদায়িক (communal claims) ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে যে, ওই পুরোহিতটি আসলে একজন খ্রিস্টান পাদ্রি।
দুটি ছবিকে কোলাজ করে ক্যাপশনে দাবি করা হচ্ছে যে, মদ্যপানরত পুরোহিতটি একজন খ্রিস্টান, যাঁকে তামিলনাড়ুর সরকার একটি হিন্দু মন্দিরে পুরোহিত হিসাবে নিয়োগ করেছে।
তামিলনাড়ুর সরকার সব জাত-পাতের মধ্য থেকেই মন্দিরের অর্চক বা পূজারী নিয়োগের নির্দেশ জারি করার পরেই এই কোলাজ ভাইরাল হয়েছে। সংবাদে প্রকাশ, নবনিযুক্ত ২০৮ জন পুরোহিতের মধ্যে ২৮ জনই অব্রাহ্মণ এবং ২০০৭ সাল থেকে তাঁরা পুরোহিত পদে নিযুক্ত হওয়ার জন্য অপেক্ষা করে রয়েছেন। জাত-পাতের দীর্ঘকালীন বাধা ঘুচিয়ে সরকারের এই প্রয়াস রাজ্যের হিন্দুত্ববাদী সংগঠন এবং ব্রাহ্মণ পুরোহিতদের তীব্র নিন্দার সম্মুখীন হয়েছে।
ভাইরাল হওয়া পোস্টের হিন্দি ক্যাপশনের অনুবাদ এই রকম, "ছবিতে যাকে মদ্যপান করতে দেখা যাচ্ছে, সেই টমাস রাজন একজন খ্রিস্টান, যাকে তামিলনাড়ু সরকার একটি মন্দিরের পুরোহিত নিযোগ করেছে। আমাদের মন্দিরগুলো দখল করতে সরকার কি এর পর এই ব্যবস্থাই নেবে? হিন্দু মন্দিরে এই ধরনের হস্তক্ষেপ কি সঠিক?"
আরও পড়ুন: মিস্টার বিন চরিত্রের অভিনেতা রোয়ান অ্যাটকিনসন মৃত? ফের রটলো ভুয়ো খবর
তথ্য যাচাই
বুম দেখে দুটি ছবিই বেশ পুরনো এবং একটি ছবির সঙ্গে অন্যটির কোনও সম্পর্কই নেই এবং মদ্যপানরত ব্যক্তিটি টমাস রাজন নামধারী এক খ্রিস্টান, এই দাবিটাও মিথ্যা।
পুরোহিতের মদ্যপানের ছবি
ছবিটির খোঁজখবর করে আমরা ২০১৭ সালের ৯ জুলাই ইউটিউবে আপলোড হওয়া একটি ভিডিওর সন্ধান পাই, যার নাম 'মদ্যপানরত পুরোহিত'। সংক্ষিপ্ত ওই ভিডিওটিতে পুরোহিতের পোশাকে সজ্জিত এক ব্যক্তিকে একটি মদের বোতল হাতে দেখা যাচ্ছে। ভিডিও রেকর্ডকারী তাকে জিজ্ঞাসা করছে কেন সে প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জয়ললিতার পোস্টারের পাশে দাঁড়িয়ে এ ভাবে মদ খাচ্ছে।
এক সময় তাকে প্রশ্ন করা হচ্ছে, সে কে এবং কোথায় থাকে? জবাবে সে জানাচ্ছে, তার নাম শংকর এবং তার বাড়ি কুম্বকোনমে, তবে এখন সে কোদমপক্কমে থাকে। কুম্বকোনম তামিলনাড়ুর তাঞ্জাভুর জেলার একটি শহর আর কোদমপক্কম হল চেন্নাইয়ের একটি এলাকা।
ভিডিওটি নীচে দেখুন।
ভিডিওটির কোথাও লোকটি নিজেকে টমাস রাজন বলে শনাক্ত করেনি এবং সে কেন খ্রিস্টান হয়েও পুরোহিতের পোশাকে রয়েছে, এ প্রশ্নও তাকে করা হয়নি।
দেবমূর্তির উপর দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তির ছবি
এই ভিডিওটির খোঁজ করে ২০২০ সালের কয়েকটি তামিল ও হিন্দি ভাষার ক্যাপশন পাওয়া গেলেও কোথাওই ছবিটির উৎস কী বা প্রেক্ষিত কী, তা জানা যায়নি।
ওই পুরোহিতের হিন্দু দেবতার উপর পা দিয়ে দাঁড়ানোর ছবিটিও বুম স্বাধীনভাবে যাচাই করে উঠতে পারেনি।
আরও পড়ুন: বেজিং বিমানবন্দর হল নয়ডার, ছবি বিতর্কে সরকারি হ্যান্ডেল, বিজেপি মন্ত্রীরা